STORYMIRROR

Rima Goswami

Others

3  

Rima Goswami

Others

ঝলসানো রুটি

ঝলসানো রুটি

3 mins
319

সেদিন তন্দ্রিমার বিয়ে , চারদিকে আলোর জোছনা সানাইয়ের সুর , পোলাউ মাংসর ম ম গন্ধ । বর ও বরযাত্রীর গাড়ি এসেছে , জুঁই আর রজনীগন্ধা র গন্ধে আকাশ যেন মাতাল । আচমকাই ছন্দ পতন ! তন্দ্রিমাকে পাওয়া যাচ্ছে না , কোথাও নেই সে সাড়া বাড়িতে । চারদিকে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়লো কথাটা , তন্দ্রিমা পালিয়ে গেছে বাড়ি থেকে । বরযাত্রীর লোকজন ছুটে এলো , তাদের এই অসম্মান তারা কিছুতেই মেনে নেবে না । হুলুস্থুল বেঁধে গেল যখন একটা চিঠি তনুজা তার দিদির ঘর থেকে নিয়ে এলো । তন্দ্রিমা ওতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে , সে তার পছন্দের পুরুষের সঙ্গে ঘর ছেড়েছে , এত দিন অপেক্ষা করছে কারণ উপায় ছিল না । গায়ে দশ ভরি গয়না নিয়ে মেয়ে পালিয়েছে এদিকে বর পক্ষ ঝামেলা করে যাচ্ছে । শেষে রফা হলো একুশের তনুজা বসবে বিয়ের পিঁড়িতে তার দিদির বদলে । ডাক্তার নিখিল বসুর সাথে তনুজার বিয়ে হয়ে গেল , শালী হতে হতে তনুজা বউ হয়ে গেল । তার পর ওর বাবা কোনভাবে সন্মান রক্ষা করে বর কনে বিদায় দিলেন । তনুজা শশুর বাড়ী এলো , সেই বাড়ি যেখানে তার দিদির থাকার কথা ছিল আজ তার হলো । মনে মনে আজিজকে ধন্যবাদ দিল তনুজা । দিদি তন্দ্রিমার জন্য বাবা যখন সমন্ধটা আনে তনুজা র খুব পছন্দ হয়ে যায় নিখিলকে কিন্তু ওর বয়সটা এতই কম যে মুখ ফুটে বলতেও পারেনি বাবাকে কিছু । দিদি রাজি হয়ে গেল , বিয়ে পাকা হয়ে গেল । নিখিলের বাড়ি বিয়ে ফাইনাল করতে তনুজা ও এসেছিল বাড়ির অন্য লোকেদের সাথে । ওদের এই বৈভব সবকিছু দেখে মাথা ঘুরে গেছিলো তনুজা র । তার পর এই প্ল্যান সে করে , দিদির সাথে আজিজের একটা সম্পর্ক ছিল তার পর কিছু ভাবে ওদের ব্রেকাপ হয়ে যায় । এই সূত্রটাকেই কাজে লাগিয়ে নেয় তনুজা । আজিজকে একদিন কফি হাউসে ডাকে আর বলে দিদি এখনো তোমাকেই ভালোবাসে , শুধু ইগোর জন্য বিয়ের পিঁড়িতে বসছে । আজিজ বিশ্বাস করে আর পুনরায় তন্দ্রিমাকে ফোন করতে শুরু করে । এদিকে তন্দ্রিমাকে ও তনুজা বোঝায় আজিজ ওকে ভালোবাসে তাই যদি বিয়ের মঞ্চ থেকেও উঠে যেতে হয় যাওয়া দরকার । বোকা তন্দ্রিমা জড়িয়ে পড়ে আজিজের সাথে ফের , পালাতে চায় । তনুজা বোঝায় , দিদি এখন পালালে সব হারাবি তাই যদি বিয়ের দিন পালিয়ে যেতে পারিস তা হলে সাথে করে বাবার দেওয়া দশ ভরি গয়না ও পাবি । বিয়ে টা ঠিক সময়ে না ভাঙলে সে সুযোগ কি করে পেত ? একটা রিস্ক ফ্যাক্টর ছিল , বর পক্ষ অপমানিত হয়ে ফিরে যেতেই পারতো ছেলেকে নিয়ে ।তবু বাড়িতে একটা বিবাহ যোগ্য মেয়ে থাকতে ওরা তাকেও তো নির্বাচন করতে পারে ? তাই বিয়ের সাজ সেজে তন্দ্রিমা ঘর ছেড়ে চলে গেল আজিজের সাথে , ওই সুযোগটা নিয়ে তনুজা নিখিলকে জিতে নিলো । ফুলশয্যার খাটে বসে আছে তনুজা মনে মনে হাসছে দিদির উপর , দিদি কেমন ধোখা খেলি বল ? থাক কিছুদিন আজিজের সাথে তার পর অভাব যখন দরজা দিয়ে আসবে প্রেম তখন জানালা দিয়ে পালাবে । জানিস তো দিদি অভাবের চোখে পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি । তবু তুই এক বড় বাড়ির ডাক্তার পাত্রের বদলে ওই গ্যারেজ মিস্ত্রি আজিজের হাত ধরলি ? উহু আর ভাবলে হবে না তোকে নিয়ে দিদি আমার জিজু হতে হতে যে লোকটা স্বামী হয়ে গেছে এগিয়ে আসছে আমার দিকে , আমাকে ওর হাতটা শক্ত করে ধরতে হবে তো নাকি ?


Rate this content
Log in