ঈশ্বরের সন্ধান
ঈশ্বরের সন্ধান


রায়বাবু ছাপোষা এক কেরানির কাজ করা মধ্যবিত্ত বাঙালি। যে বয়সে তার বিয়ে করার কথা সে বয়সে তিনি সংসার ত্যাগ করে হিমালয়ে গিয়ে সন্ন্যাসী হওয়ার কথা ভাবতেন।যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি বিয়ে করে সংসারে আবদ্ধ হন। কিন্তু তাঁর মন সবসময়ই ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন থাকতো।
অন্য দিকে রায়বাবুর স্ত্রী অনুপমা আবার একদম বিপরীত। সে চঞ্চল, নাস্তিক প্রকৃতির মহিলা। তাই মাঝেমধ্যেই স্বামীর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে বলতো—
‘তোমার যতসব ভন্ডামী। সারাদিন শুধু ঠাকুর ঠাকুর। তোমার মত মানুষের সংসারধর্ম করাই উচিত হয়নি। কেন যে তোমার মা জোর করে তোমার মতো মানুষের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে আমার কপালটা পোড়ালেন কে জানে! ঠাকুর বলে কি কিছু আছে! না হলে তুমি এতো ঠাকুর ভক্ত তোমার কি কখনো এমন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা হওয়ার কথা?’
রায়বাবু বিন্দুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ না করে বরং হেসে বলতেন,
—অনু তুমি বড্ড ছেলেমানুষ। আসলে তুমি জানোইনা যে আমার মতো তুমিও ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, তফাৎ শুধু এটুকুই—আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বর আছেন আর তুমি বিশ্বাস করো তিনি নেই।’ কিন্তু সত্যিই তিনি আছেন না নেই সেটা কি আমরা যাচাই করে দেখেছি? এই সত্য অনুসন্ধান করাকেই বলে আধ্যাত্মিকতা। তা তোমার পাল্লায় পড়ে আমার তো আর সেই পথে এখন হাঁটা হলোনা। যাকগে কখন দুটো খেতে দাও না হলে আবার অফিসের বাসটা পাবোনা। আর শেষ বয়সে না হয় দুজনে একসাথে আধ্ম্যাতিকতার পথে হেঁটে নিজেদের বিশ্বাসের সত্যতাটা যাচাই করে নেবো।’
এই বলে হাসতে হাসতে রায়বাবু স্নান করতে গেলেন।