SHUBHAMOY MONDAL

Children Stories Drama Others

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Children Stories Drama Others

গল্পদাদুর আসর - দাদুর অতিথি

গল্পদাদুর আসর - দাদুর অতিথি

9 mins
242



সেদিন বিকেলে খেলা শেষ করে, তিতাস আর ওর বন্ধুরা যখন শিশিরবাবুর আসরে এল, দেখে একজন তাদের অপরিচিত লোক দাদুর সাথে বসে আছেন। সবাই একটু চিন্তায় পড়লো - তবে কি আজ আর দাদুর গল্পের আসর বসবে না?


তাদের মুখগুলো দেখেই শিশিরবাবু বুঝতে পারলেন বিষয়টা৷ তাই বললেন - এসো এসো বসে পড় সবাই। আজ তোমাদের আসরে আরও একজন দাদু এসে বসেছেন। তোমরা তো ওনাকে চেনো না, কিন্তু উনি তোমাদের সকলকে চেনেন!


মনামি - সে তো তুমিই ওনাকে বলে দিয়েছো আমাদের নামগুলো। যখন খেলছিলাম তখন আমি দেখেছি।


শিশিরবাবু তাঁর অতিথি সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন - দেখেছো, আজকালকার বাচ্ছারা কত স্মার্ট? তারপর মনামির দিকে চেয়ে বললেন - উনিতো এখানে আগে আসেন নি, তাই তোমাদের চেহারাগুলো দেখেন নি। কিন্তু সবার নাম ধাম পরিচয় ওনার জানা। ইন ফ্যাক্ট উনি এখানে এসেছেনও তোমাদেরই জন্য। 


আমার বন্ধু হলেও, উনি এখানে এলে শ্রীরামপুরে নিজের মেয়ের বাড়িতেই ওঠেন। এবার শুধু তোমাদের সঙ্গে এই গল্পের আসরে বসবেন বলেই এসেছেন এখন। সঙ্গে করে তোমাদের জন্য এক বিশেষ ভেটও এনেছেন - চেখে দেখবে নাকি?


দাদু চেখে দেখার কথা বলতেই, সবার মুখে হাসি ফুটলো। দাদুর বন্ধু, সেই নতুন দাদু তখন তাঁর ব্যাগ থেকে বের করলেন একটা টিফিন বক্স। তারপর তার থেকে বের করলেন - ওপরে বেশ শক্ত ঢাকাওয়ালা সুস্বাদু সন্দেশ! এমন অদ্ভুত মিষ্টি তাদের কেউই আগে খায় নি!


তিতাস - এই মিষ্টিটার কি নাম গো, দাদু?


শিশিরবাবু - এ হল বাঁকুড়ার স্পেশাল সন্দেশ, নাম মেচা। খেয়ে দেখো, কি দারুণ খেতে, তাই না? তারপর বাহাদুরকে ডেকে বললেন - এই নাও, আমার বন্ধুর বাড়ির মিষ্টি খাও। তারপর একটু জলের ব্যবস্থা করো দেখি আমাদের সবার জন্য। 


বাহাদুর মিষ্টি খেতে খেতেই দৌড়ে গিয়ে, সোসাইটির ভিতর থেকে জলের গোটা চারেক বোতল নিয়ে এল। আজকাল কাজের চাপ কম থাকলে সেও গল্পদাদুর আসরে এসে বসে পড়ে সন্ধ্যাবেলা।


সকলের মিষ্টি এবং জল খাওয়া হলে, শিশিরবাবু বললেন - তোমাদের মধ্যে কে কে আগে বাঁকুড়া গিয়েছো? 


মেঘা, মিঠু, অয়ন, মিঠাই চারজনেই বললো - তারা আগে বিষ্ণুপুর গেছে। বাঁকুড়া জেলার খুব পুরানো এক শহর এই বিষ্ণুপুর। জেলার অন্যতম দর্শনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এছাড়া তিতাস আর মানামিও গেছে - তবে বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুর শহরে না, তারা গিয়েছিল কামারপুকুর আর জয়রামবাটি।


যাই হোক, বাঁকুড়া সম্পর্কে সবার কিছু কিছু ধারণা আছে দেখে খুশি হয়ে, শিশিরবাবু আবার বললেন - বাঁকুড়ার ঐ বিষ্ণুপুর ছিল এক প্রচীন রাজাদের রাজধানী, কোন রাজা তাদের নাম জানো তোমরা?


মিঠাই - মল্লরাজাদের রাজধানী ছিলো বিষ্ণুপুর, তাই না দাদু? ওদের সেই দলমাদল কামান দেখে এসেছি তো!


শিশিরবাবু - ঠিক বলেছো দাদুভাই। তোমরা সবাই তো গেছো ওদিকে। বলো তো, ওখানে কি এমন আলাদা দেখেছো, যা এখানে নেই?


মেঘা - বন, তুমি বনের কথা বলছো, না দাদু? আমার তো যাবার সময় ভয় ভয়ই করছিলো - এই যদি হাতির পাল বেরোয়, সব শেষ! বাবারে!


শিশিরবাবু - হ্যাঁ, কিন্তু ঐ বনের জন্যই নির্বিঘ্নে দীর্ঘদিন রাজত্ব করতে পেরেছিলো মল্লরাজারা। বাকি দেশে তো তখন আক্রমণ, যুদ্ধ বিদ্রোহ লেগেই থাকতো। বনের আড়ালে থাকায়, এখানে কিন্তু কখনই তার আঁচ লাগেনি, অন্তত প্রথম দিকে। পরে, ইংরেজরা দেশে ঘাঁটি গাড়ার পর এ'দেশের যত রাজবংশের সর্বনাশ হয়, তার মধ্যে মল্লরাজ্যও একটি।


১৭৪৮ থেকে ১৮০১ সাল অবধি রাজত্ব করা, মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ খুব ধার্মিক রাজা ছিলেন। দামোদর সিংহ নামে তার এক জ্ঞাতিভাই, তাঁর ঐ রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জন্য সেইসময় উঠে পড়ে লাগেন। প্রথম কয়েকবার ব্যর্থ হলেও, পরে মীরজাফরের থেকে শক্তিশালী বাহিনী ধার করে এনে তিনি বিষ্ণুপুর দখল করতে সমর্থ হন। 


চৈতন্য সিংহ, কুলদেবতা মদন গোপালের বিগ্রহ নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে আসেন। এরপর শুরু হয় রাজ্যের মালিকানা নিয়ে মামলা মোকদ্দমা। তারই জেরে শেষে সেই রাজ্যটাই বিক্রি হয়ে যায় এবং বর্ধমানের রাজা সমগ্র এস্টেটটি কিনে নেন।


যাই হোক, তা ঐ চৈতন্য সিংহ যখন কলকাতায়, সেইসময় বিষ্ণুপুরের কাছেই নররা, মাকুরগ্রাম ঐসব অঞ্চলের গোয়ালারা (ঘোষ) বিদ্রোহী হয়ে ওঠে - রাজার শাসন, অধীনতা অস্বীকার করে, তারা কর দেওয়ায়ও বন্ধ করে দেয়। তাই তাদের বশ করতে, বাধ্য হয়েই মল্লরাজ তখন সেই কাজের জন্য উপযুক্ত পাত্র, আহিরীটোলার ঘোষাল পরিবারের দুই ভাই, সুখদেব আর শ্যামদেবকে ওখানে পাঠান।


তাঁরা সেখানে আসেন ঐ গ্রামগুলোর জমিদারী মালিকানা পেয়ে। অল্প সময়েই সেই গোয়ালারাও তাঁদের দ্বারা বশীভূত হয়। তাঁদের আসল পদবী ঘোষাল হলেও, তাঁরা দু'জনেই মল্লরাজের দেওয়া পাত্র উপাধিই ধারণ করেন। এমনকি, তাঁদের বর্তমান বংশধররাও, আজও সেই পাত্র উপাধিটিকেই নিজেদের পদবী রূপে ব্যবহার করেন। 


আর এই দাদু হলেন - সেই পাত্রবংশেরই এক উত্তরপুরুষ। ওনার বাবারও জমিদারী ছিলো। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলে, জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয়। তখন ওনাদের জমিদারীও সরকারের কাছে চলে যায়। জমিদারী না থাকলেও, আজও তাঁরা ঐ এলাকায় অন্যতম সম্মানীয় এবং প্রভাবশালী ব্যাক্তি।


যাই হোক, তো তোমরা বরং আজ এই পাত্রদাদুর কাছেই গল্প শোনো। ওনার ঝুলিতেও অনেক গল্প আছে। ওহো, বলাই হয়নি তো, এই দাদুর নাম শ্রী অজিত পাত্র। উনি আগে স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তোমাদের মত বাচ্ছাদের সাথেই ওনার জীবনের অনেকটা সময় কেটে গেছে। নাও অজিত, এবার তোমার আসর শুরু করে দাও।


অজিতবাবু - তো তোমরা কি গল্প শুনবে আজ, বলো? 


মিঠু - দাদু, ভূতের গল্প বল দাদু। বেশ গা ছমছম করা ভূতের গল্প! তুমি ভূত দেখেছো দাদু?


অজিতবাবু - ভূত? বলে হাসিমুখে শিশিরবাবুর দিকে তাকালেন অর্থপূর্ণদৃষ্টিতে।


শিশিরবাবু - বলো বলো, ওদের বরং তোমার সেই সব ভুতুড়ে অভিজ্ঞতার কথাই শোনাও। এ ওদের ভারি প্রিয় বিষয়, আমাকেও ছাড়েনি সেই সব ঘটনা না শুনিয়ে। তুমিও ছাড় পাবে না। ভূতের কাহিনী দিয়েই শুরু করো তোমার আসর।


অজিতবাবু - বেশ, তাহলে চলো সেই কাহিনীই শুরু করি। কিন্তু কেন বা কিভাবে আমি ওসবের চক্করে পড়লাম? সেটা বুঝতে হলে, আগে আমার আর কয়েকটা অদ্ভূত অভিজ্ঞতার কথা তোমাদের জানতে হবে। আমি ছোটো করেই বলে রাখছি সেগুলো, তাহলে সুবিধা হয় - আমার বলতে, আর তোমাদেরও বুঝতে। কি, বলি সেগুলো?


সকলে - হ্যাঁ হ্যাঁ বলো দাদু।


অজিতবাবু - আমার বাড়িতে চণ্ডীপাঠ হয় নিয়মিত, দেবদেবীর পুজো আর্চায় আমি মশগুল থাকতে খুব ভালোবাসি। এই সূত্রে বেশ কিছু সাধু সন্ন্যাসীর সঙ্গ পেয়েছি, অনেক আধ্যাত্মিক জ্ঞানও লাভ করেছি। খুব ভালো লাগে তাঁদের মুখে ধর্মের কথা শুনতে আমার।


তো এইরকমই একবার কি হয়েছে শোন। আমি ট্রেন ধরবো বলে বসে আছি স্টেশনের একপাশে একটা বাঁশের মাচার ওপর। দেখছি, ব্রীজ দিয়ে রেললাইন পার হয়ে একজন গেরুয়া পোশাকধারী সাধু আসছেন। আমি তাঁর দিকে চেয়ে আছি - যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। 


মনে মনে কি শ্রদ্ধা, ভক্তি জেগে উঠলো তাঁকে দেখে জানিনা। ভাবলাম, যদি উনি এদিকে আসেন তাহলে তাঁকে সাষ্টাঙ্গে একটা প্রণাম করবো। আর হলোও ঠিক তাই - তিনি আমার দিকেই হেঁটে এসে দাঁড়ালেন আমার সামনে! তারপর কি বললেন জানো?


সকলে - কি বললো দাদু?


অজিতবাবু - তিনি আমার সামনে এসে বললেন - কি রে বেটা তখন থেকে প্রণাম করবি, প্রণাম করবি বলছিলি, আমি দেখ এসেছি তোর সামনে। কর এবার প্রণাম! আসে পাশে কেউ কোথাও ছিল না, আমিও মুখে কোন কথা বলিনি, তবুি উনি আমার ইচ্ছের কথা জানলেন কি করে আমি জানিনা!


আমি তাঁকে সত্যিই সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলাম। তিনি হেসে আমার মুখ পানে চেয়ে বললেন - তিন মেয়ের কি করে বিয়ে দিবি, তাই নিয়ে চিন্তায় আছিস? শরীকি বিবাদের জেরে বুঝি ভাবছিস, পিতৃহীন হয়ে তুই নিঃস্ব হয়ে গেছিস? না বেটা, তোর কোন চিন্তার কারণ নেই। 


তোর মেয়েদের বিয়ে হবে বড় ঘরে, আপনার থেকেই সম্বন্ধ এসে বিয়ে হবে। একটুও দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। তোর বিষয় সম্পদ যা প্রাপ্য তা কেবল কিছুদিনই ধরে রাখতে পারবে কেউ। সে সব তোর কাছেই ফিরে আসবে। যা বেটা, তোর সব চিন্তার অবসান করে দিলাম!


আমি আবার তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে উঠে দেখি - কেউ কোথাও নেই! ওখান থেকে ফাঁকা দুপাশ, চারিধার দূর দূর পর্যন্ত দেখা যায়। কিন্তু কোথাও সেই সাধুবাবার ছায়াও দেখতে পেলাম না। লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝলাম - আর কেউ দেখেইনি তাঁকে!


অথচ দেখো, তাঁর বলা সব কথা তার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ফলে গেলো। আমার বড় মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ এলো খুব সম্মানীয় পরিবার থেকে। তাঁরা শুধু বড়কে নয়, মেজ মেয়েকেও তাঁদের কূলবধূ করে নিয়ে গেলেন। 


ছোট মেয়ে তখনও পড়ছে। বড়ছেলেও কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী হিসাবে কাজে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর, আমার সব পৈতৃক সম্পত্তি আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে, আর বিশেষ বেগ পেতে হল না। 


আরও একবার, আমার এক বন্ধুর বাড়িতে, বিনা কারণেই নানা রকম অশান্তির সৃষ্টি হওয়ায়, তার মনে সন্দেহ হয় - কেউ তার ক্ষতি করার জন্য, ইচ্ছে করেই কিছু করছে না তো? ব্যস যেই এই চিন্তা মনে এল তার, আমায় এসে ধরলো - চল, সুখজোড়া গ্রামে যে তান্ত্রিক আছেন, যিনি নাকি প্রেতাত্মাদের সাথে কথা বলে মানুষের সমস্যার সমাধান করেন, তাঁর কাছে যাই।


ধর্মকর্মে বিশ্বাসী হলেও ঐসব ভূতপ্রেতে বিশ্বাস বা ভয় আমার কোনো কালেই ছিল না। তবুও ঐ বন্ধুর জন্য যেতে হলো সেখানে। বন্ধুটি গিয়ে তাঁর কাছে নিজের সমস্যার কথা বলতে লাগলো, আর আমি বাইরে পিঁড়িতে বসে বসে তাঁর বাড়িটা দেখছি।


হঠাৎ তিনি ডেকে নিলেন আমায় - তোমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে? আমি সব উত্তর দিতে পারি। আমার বিশেষ কিছুই জিজ্ঞাস্য ছিল না, আর ঐ সব প্রেতাত্মার বিষয়ে তো একেবারেই না। তাই মৃদু হেসে বললাম - না। উনি আবার বললেন - তুমি মানো না মানো তোমার ব্যাপার, প্রশ্ন করতে ক্ষতি কি?


আমি অগত্যা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম - আমার মনটা খুব অস্থির লাগছে। কেন বলতে পারেন? তিনি হেসে বললেন - বাড়ি থেকে বেরোবার আগে ছোট মেয়ের কপালে হাত দিয়ে দেখেছিস জ্বর আছে গায়ে। তাই মনটা অস্থির, চিন্তা করিস না। বাড়ি গিয়ে দেখবি, মেয়ে সুস্থ হয়ে গেছে।


সত্যিই একটু অবাক হলাম তাঁর কথাটা শুনে। ঐ জ্বরের ব্যাপারটা আমি ছাড়া অত সকালে আর কেউ জানতোও না, কাউকে আমি বলিও নি। তাহলে উনি জানলেন কি করে? আন্দাজে বললেন না তো?


আর একটু পরীক্ষার জন্য বললাম - আপনি কি করে জানলেন? আচ্ছা, বলুন তো সে এখন কি করছে? তিনি কিছুক্ষণ চোখ বুজে বসে থাকার পর বললেন - লক্ষ্মীর ঘরের মেঝেয় তোর বৌ একটা লালপেড়ে শাড়ি পড়ে, মেঝেতে কাঁথা পেতে শুয়ে আছে তোর ছোট মেয়েকে নিয়ে।


আমি মুখ খুলতেই যাচ্ছিলাম, তিনি থামিয়ে দিয়ে বললেন - জানি, তোরা লক্ষ্মীর ঘরে শুস না, কিন্তু তোর বৌ মেয়েকে নিয়ে এখন ঐঘরেই শুয়েছে, বাড়ি ফিরে জিজ্ঞাসা করে নিস।


আমার আর কিছুই বলার রইলো না ঐ বিষয়ে, তাই বললাম - মনটা খুব বিরক্তও হয়ে আছে। তার কারণটা বলতে পারেন? তিনি বললেন - হ্যাঁ, শালটা হারালি তো বাসে! নতুন শাল গায়ে দিয়েই যদি খোয়া যায় প্রথম দিনেই, কার আর ভালো লাগে? চিন্তা করিস না, ফেরার পথে সেটাও ফেরত পেয়ে যাবি!


সত্যিই তাই হল - ফেরার সময় যে বাসটা ধরতে এলাম, সেটা চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল! পরের বাস আসতে দেরী আছে দেখে, দু'জনে পথের ধারে নেমে গিয়ে বাথরুম করতে বসলাম। ওমা, দেখি পরের বাসটাও এসে গেছে এবং আমরা সেটাও মিস করলাম। ঠিক করলাম, এর পরেরটা আর ছাড়ছি না কোনমতেই।


যাই হোক, পরের বাসে উঠে দেখি, এটা তো সেই বাসটাই, যেটায় চেপে সকালে আমরা এখানে এসেছিলাম। শালটার কথা বলতেই, তারা মিষ্টি খাওয়ানোর দাবি করে শালটা ফেরত দিল। অবশ্য তাদের মিষ্টিও খাওয়াতে হল না আমায়, উল্টে তারা নিজেরাই মিষ্টি এনে খাওয়ালো কি যেন একটা কারণে, মনে নেই আর।


তারপর, বাড়ি ফিরে তোমাদের ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করতে তিনিও বললেন যে, হ্যাঁ শোবার ঘরটায় ধুলো, মাকড়সার ঝুল সব ঝাড়া চলছিল বলে, ছোট মেয়েকে নিয়ে সকালে তিনি লক্ষ্মীর ঘরেই শুয়েছিলেন। এখন মেয়ের গায়ে জ্বরও নেই, আর সম্পূর্ণ সু্স্থ হয়ে সে খেলছে বন্ধুদের সাথে!


শিশিরবাবু - চলো চলো, আজ আর নয়। উঠে পড়ো সবাই, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। সবাই ঘরে ফিরে চলো এখন, পড়তে বসতে হবে। কাল বিকেলে নতুন দাদু বরং বাকি গল্পগুলো শোনাবেন। ঠিক আছে? 


সকলে - ও দাদু, আর একটু বসি। গল্পটা তো শুরুই হলো না!


অজিতবাবু - না দাদুভাই, আজ ছেড়ে দাও। সন্ধ্যে হয়ে গেছে, তোমরা ঘরে গিয়ে পড়াশুনা করো। আমি কাল নিশ্চয়ই এসে বাকি গল্পটা শোনাবো তোমাদের। আজ আমি তোমাদের এই গল্পদাদুর কাছেই থাকছি। কাল তোমাদের সব গল্প শুনিয়ে তারপর বাড়ি যাবো, ঠিক আছে?


সকলে - ঠিক আছে দাদু, তাই হবে। আমরা তাহলে এখন সবাই ঘরে গিয়ে পড়তে বসি তবে!


সকলে হৈ হৈ করে সোসাইটির দিকে দৌড়ালো। শিশিরবাবু আর অজিতবাবুও হাসিমুখে গল্প করতে করতে হাঁটা দিলেন ফেরার পথে। বাহাদুর এসে জলের বোতলগুলো তুলে নিল।



Rate this content
Log in