STORYMIRROR

Laxman Bhandary

Others

4  

Laxman Bhandary

Others

বিজয়া দশমী ও রিনার সিঁদুর খেলা কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বিজয়া দশমী ও রিনার সিঁদুর খেলা কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

2 mins
3

বিজয়া দশমী ও রিনার সিঁদুর খেলা
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বিজয়া দশমীর সকাল থেকেই মনটা কেমন যেন ভারী হয়ে আছে রিনার। গত চারটে দিন ধরে যে আনন্দের ঢেউয়ে গা ভাসিয়েছিল শহরের প্রতিটি কোণ, আজ তার বিদায়-বেলায়। দেবীর মর্ত্যলোকের পাঠ চুকে যাচ্ছে, এবার তাঁর কৈলাসে প্রত্যাবর্তনের পালা। কিন্তু উৎসবের শেষলগ্নেও এক ঝলক আনন্দের রঙিন আভা ছড়িয়ে দিতে হাজির হয় সিঁদুর খেলা।

প্যাণ্ডেলের ভেতরে তখনও প্রতিমা সজীব, একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে মা দুর্গা বসে আছেন তাঁর সপরিবারে। বেলা বাড়তেই প্যাণ্ডেলের অলস নিস্তব্ধতা ভাঙলো শাঁখা-পলায় সজ্জিত রমণীকূলের কলরবে। লাল পেড়ে সাদা শাড়ি আর কপালে সিঁদুরের টিপ, হাতে পুজোর ডালা নিয়ে একে একে জড়ো হতে লাগলো তারা। রিনাও তাদেরই একজন। তার চোখে আজ এক মিষ্টি বিষণ্ণতা, মুখে হাসি থাকলেও ভেতরে চলছে এক নিস্তব্ধ কথোপকথন।

"মাগো, আর একটা বছর আবার অপেক্ষা…"

কিন্তু এখন যে বিষাদের সময় নয়, আনন্দ আর উল্লাসের স্রোতে গা ভাসানোর মুহূর্ত। ঢাকের বাদ্যি তখনো মৃদু লয়ে বাজছে, যেন বিদায়ের সুর ভাঁজছে। কিন্তু মহিলারা যখন প্রতিমার সামনে গোল হয়ে দাঁড়ালো, তখন ঢাকের ছন্দ যেন আচমকা পাল্টে গেল। দ্রুত লয়ে বাজতে শুরু করলো ঢাক, সাথে বেজে উঠলো শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি।

শুরু হলো সিঁদুর খেলা। প্রথমে প্রতিমার পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানো হলো, তারপর দেবীর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে বরণ করা হলো তাঁকে। এরপর সেই সিঁদুর নিয়ে মেতে উঠলো সবাই। এক মহিলা অন্য মহিলার কপালে, গালে, মাথায় সিঁদুর ছুঁয়ে দিচ্ছে। হাসাহাসি, খুনসুটি আর আনন্দের কোলাহলে ভরে উঠলো মণ্ডপ। রিনা প্রথমে একটু চুপচাপ থাকলেও, বন্ধু সুপ্রিয়া যখন জোর করে তার গালে সিঁদুর মাখিয়ে দিল, তখন সেও হাসিতে ফেটে পড়লো। তার শাড়ির আঁচল, চুল, মুখ—সবকিছু যেন লালে লাল হয়ে গেল। এই সিঁদুর শুধু রঙ নয়, এ যেন সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি আর মাতৃত্বের প্রতীক। এটি নতুন করে জীবনকে ভালোবাসার মন্ত্র।

সিঁদুর খেলায় মেতে থাকতে থাকতেই কানে এলো "বলো দুর্গা মাই কি…" ধ্বনি। বুঝতে পারলো, এবার প্রতিমা বিসর্জনের জন্য প্রস্তুত। মণ্ডপের বাইরে ততক্ষণে বিশাল জনসমাগম। পুরুষেরা প্রতিমাকে কাঁধে তুলে নিল। ঢাকের বাদ্যি তখন উন্মত্ত, যেন জানান দিচ্ছে এক বছরের বিরতির কথা। "মা আসছেন" থেকে "মা যাচ্ছেন"–এর এই পরিবর্তন মনকে বড়ই বিচলিত করে তোলে।

রিনা ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল। ধীর পায়ে প্রতিমা এগিয়ে চলেছে ঘাটের দিকে। সারাটা পথ মানুষের ঢল। "বলো দুর্গা মাই কি জয়" ধ্বনি আর ঢাকের তালে তালে নাচতে নাচতে চলেছে সবাই। রিনার চোখে তখন চিকচিক করছে এক ফোঁটা জল, যা সিঁদুরের লাল আঁচড়ে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। তার মনে পড়ে গেল গত চারটে দিনের প্রতিটি মুহূর্ত— সন্ধিপুজো, কুমারী পুজো, আরতি, অঞ্জলি… সব যেন স্বপ্নের মত কেটে গেল।

নদীর ঘাটে পৌঁছাতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। নদীর বুকে তখন অসংখ্য ডিঙিনৌকা, প্রত্যেকের চোখে একই প্রত্যাশা আর একই বিষাদ। ঘাটের পাড়ে ভিড় করে আছে অসংখ্য মানুষ। প্রতিমাকে নৌকায় তোলা হলো। চারপাশে তখন নীরবতা, কেবল ঢাকের মৃদু বাদ্যি আর মন্ত্রপাঠের ফিসফিসানি। অবশেষে নদীতে দেবী বিসর্জন। আরো একটি বছর প্রতীক্ষায় আবার।


Rate this content
Log in