আলুভাতে:-
আলুভাতে:-
প্রেসার কুকারের সিটিতে চমক ভাঙলো জয়তির। এতক্ষণ সে ভাবছিল পুরনো দিনের কথা গুলো। কিন্তু আজকের রবিবারটা অন্য রবিবার গুলোর মতন নয়। আজকের রবিবারটা বড্ডো নিরস, বড্ডো নিষ্প্রাণ। তাদের বাড়িতে প্রত্যেক রবিবারেই ভুরিভোজের আয়োজন হতো। কিন্তু আজকের রবিবারটা কেমন শুকনো আমের আমশির মতন হয়ে আছে। করোনা ভাইরাস আর লক ডাউনের দাপটে জয়তিদের পাড়ার সব্জি বাজার, মাছ বাজার, দোকান পাট সব বন্ধ হতে গোনা কয়েক্ত মুদি দোকান ছাড়া। দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ তাই জিনিস পত্রের আমদানি রপ্তানি ও স্থগিত হয়ে আছে। বড্ড খারাপ লাগছে জয়তির। ছোট্ট বাচ্চা ডুগ্গু দাবি করেছিল খাসির মাংস খাবে বলে।জয়তিও খুব আশা করে ছিল যে লকডাউন হলেও তথাকথিত মাছ মাংস সবজি এসব হয়ত সহজলভ্য হবে। কিন্তু জয়তি আজ সকালে যখন বাস্তবতার সম্মুখীন হলো তখন চমক ভাঙলো তার।
সকালে স্কুটিটা নিয়ে অনুপম আর জয়তি বেশ উৎসাহ নিয়েই বেরিয়েছিল। কিন্তু মাঝ রাস্তায় পথ আটকে জিজ্ঞেসাবাদ শুরু করে পুলিশ। নিজেদের পরিচয় পত্র দেখিয়ে অনেক বলে কয়ে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যখন বাজারে পৌঁছালো তখন সেখানে অপেক্ষা করছিল আরো বেশ কিছু চমক। কয়েকটা মুদি দোকান কেবল খোলা আর বাকি সব বন্ধ, প্রশ্ন করে জানা গেলো দূরপাল্লার মালবাহী ট্রাক/বাস চলকেরা নিজেরাই করোনা আক্রান্ত হবার ভয়ে আর পথে নামছেন না, আবশ্যক সামগ্রী গুলো বাজারে পৌঁছাবে কি করে? মনমরা হয়েই বাসি হয়ে যাওয়া কিছু সব্জি নিয়ে আর বেশ কয়েক কিলো আলু পেয়াজ নিয়ে ঘরে ফিরে এসেছিল ওরা।
*****************
-- মা, খুব স্বাদ হয়েছে গো তোমার আলু মাখাটা।
৯ বছরের ডুগ্গু বলে উঠলো জয়তিকে ভাত খেতে বসে।
অনুপম একবার জয়তির মুখের দিকে তাকিয়ে সৎসাহে ডুগ্গু কে বললো,
---- দেখলি বাবু মামনি আজ তোকে আর আমাকে কত ভালো একটা রেসিপি খাওয়ালো? আলুমাখা, মুসুর ডাল আর গরম ভাত। ভালো না?
---- খুব ভালো বাবা, এ যে খাসির মাংস থেকেও অনেক বেশি স্বাদ খেতে। মা লাভ ইউ। এইসব আরো বেশি করে রান্না করে খাওয়াবে আমায়, ঠিক আছে?
জয়তি মনে মনে একটু উৎফুল্ল হলো তখন,বাচ্চা ছেলে ডুগ্গু। কিই বা এত বোঝে এসব? কিন্তু সোনা মুখ করে রবিবারের দুপুরে খাসি নয় আলুভাতে খেয়ে সে এত পরিতৃপ্ত। সত্যি এই লক ডাউন না হলে ডুগ্গুর এই সাবলীল রূপটা আবিষ্কার করতে পেতো না জয়তি।