কথা রাখোনি
কথা রাখোনি


-
কত দিন, কত মাস, কত বছর... আমাকে স্পর্শ করোনি তুমি।
গা বাঁচিয়ে চলেছো আক্ষরিক অর্থেই, পাছে ছোঁয়াছুঁয়ি হয়ে যায়!
আমি আজ অস্পৃশ্য তোমার কাছে।
অথচ আমি তো মনেপ্রাণে সর্বক্ষণ চেয়েছি শুধু তোমারই স্পর্শ... শুধুমাত্র একটুখানি স্পর্শ।
তাতে শরীর নেই, তাতে উষ্ণতা নেই, তাতে প্রেম নেই... না থাক, আপত্তি নেই... চেয়েছি শুধু একটুখানি ভরসা,
কেবলমাত্র এক কপর্দক ভরসা চেয়েই গেছি।
তোমার মনে আছে?
কোনো এক ক্লান্ত ফাল্গুনী বিকেলের মরা আলোয় তুমি আমার মুখখানা নিজের দুই হাতের অঞ্জলিতে ধরে নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে... অনেক ভরসা দিয়েছিলে... সেদিন থেকে তুমি নেবে আমার সব দায়দায়িত্ব।
দূরে কোথাও খাম্বাজের সুরে মীড়ে কথার পিঠে কথায় সন্ধ্যা গড়িয়েছিলো।
কিন্তু দেখো তবুও কেমন করে সেই দায়দায়িত্ব নেওয়ানেয়ির শেষে...
খুঁটি গেড়ে বাসা বাঁধলো কত নতুন নতুন কথারা,
আমাদের মাঝখানে এসে।
শুনতে পেলাম প্রথমবার...
তোমার টাকা আমার টাকা, তোমার বাড়ি আমার বাড়ি, তোমার বাবা-মা আমার বাবা-মা...
কিচ্ছু বলতে পারলাম না আমি আর।
শুধু প্রতি মুহূর্তে গিলতে লাগলাম কালকূট বিষ।
নীলকন্ঠ হলাম আমি, গলায় পরিপূর্ণ অস্তিত্বঘাতী নীল বিষ।
তারপর বাড়তে থাকলো দূরত্ব...
প্রতি সেকেণ্ডে, মিনিটে, ঘন্টায়, দিনে, সপ্তাহে, পক্ষে, মাসে, বছরে, বছরে।
অভিমানে ফুলে মরলাম গুমরে গুমরে।
বুকের ভেতরে বাইরে বয়ে গেলো গঙ্গা - যমুনা - দামোদর...
সাহারার মরুঝড়, হিমালয়ের তুষারঝড়!
তবে তোমার তাতে কিচ্ছু এলো গেলো না।
যতদিনে বুঝলাম তুমি কথাখেলাপি...
তুমি কথা রাখোনি, কথা রাখতে তুমি জানো না...
ততদিনে সরে যাওয়া মাটিতে পায়ের তলায় আমার অশরীরী সতীন কাঁটা,
বড়ো কঠিন, গভীরতায় বিঁধে গেছে, বিঁধে আছে।
টানলে আর বেরোবে না...
বের করতে হলে গোটা পা-টাই কাটতে হবে যে!
আমার পক্ষে কি রাজি হওয়া সম্ভব ছিলো?
তোমার হাতটা যে আর তুমি ছুঁতে দাওনি আমায়!
অন্ত্যজ, অস্পৃশ্য, দলিত হয়ে আমি হারিয়ে গেলাম,
বিস্মৃতির অতল গভীরে আমি ডুবে গেলাম।
তুমি একবারও হাত বাড়াওনি।
ক্লান্ত সে ফাল্গুনী বিকেলের মরা আলোয় দেওয়া কথা মরে গেলো,
সে কথা তুমি ধরে রাখোনি, রাখতে পারোনি।
খেলাপ হওয়া সে কথা উত্তপ্ত শলাকার মতো আমাকে বিদ্ধ করে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত করেছে।
নিভে গেছে মঙ্গলদীপ, হারিয়ে গেছে মাঙ্গলিকী ঘট,
এখন শুধু দাউদাউ জ্বলছে অবিশ্বাসী ছল-কপট।
আমাদের দুজনের মাঝখানের চিড় হয়েছে ফাটল, ফাটল হয়েছে খাদ... অতলান্ত গভীর খাদ...
আর মধ্যবর্তী খাদের ফাঁকে গজিয়েছে ডালপালা মেলে এক মধ্যবর্তিনী মাংসাশী কলসপত্রী উদ্ভিদ...
তোমার আমার নিটোল প্রেমের সম্পর্কটাকে গিলে খেয়ে ফেলেছে,
আমাদের নিবিড় ভালোবাসার সম্পর্কের রক্তে-মাংসে-মজ্জায় পুষ্টিলাভ করেছে।
হৃদপিণ্ডের দ্রুত লয় বিলম্বিত হয়েছে, দূরের সেই খাম্বাজ থেমেছে।
অসম্ভব অসহ্য নির্লিপ্তিতে তুমি শুধু বসে বসে ভাঙনের সর্বনাশ দেখেছো...
কথা রাখতে চাওনি বলেই কথা রাখোনি তুমি...
তুমি কথা রাখোনি।।