কন্যাদান
কন্যাদান


দুই মেয়ে,এক ছেলে নিয়ে দীনুর মধ্যবিত্ত পরিবার,
পড়াশুনা গানবাজনায় আগ্রহ সবার।
ছেলেমেয়ে কলেজে যায় পড়াশুনা করে ,
দীনুর বৌ সংসারের কাজ করে ঘরে।
দীনুর আছে সরকারি দপ্তরের চাকরী
সৎ ছেলে,নেয় না সে কোন উপরি।
হেসে-খেলে চলে যায় দিন তাদের,
এবার সন্ধান করে ভালো পাত্রের।
বড় মেয়ের বিয়ে পাকা হলো ভালো পরিবারে,
একমাত্র ছেলে,বৌকে রাখবে আদরে
সরকারি চাকরি,নেই কোন পণ-
শুধু বরযাত্রী আসবে একশ জন।
শুভ পরিণয় হলো সমাপন,
শশুর বাড়িতে হলো নববধূ বরণ।
প্রথম প্রথম ভালো আচরণ,
ধীরে ধীরে হয় মুখোশের উন্মোচন।
পণ নেই বলে সোনা মোটে দশ ভরি!
সাথে নেই কোনও মোটর গাড়ী!
মেয়ের বাপ কি গেছে ভুলে-পাত্র নয় ভিখিরি,
করে সে সরকারী দপ্তরে বড় চাকরী!
প্রথমে কটু কথা,বাড়ি থেকে টাকা আনার চাপ,
দাবি না মেটায় ধীরে ধীরে গায়ে ওঠে হাত।
অনেক অনুনয়-বিনয়,অনেক বোঝানো,
সব বৃথা-একটাই বুলি,টাকা আনো।
নিপীড়ণ সীমা ছাড়ালে-মেয়ে মাকে বলে,
মেয়েকে বোঝায় মা-সে যেন মানিয়ে চলে।
আরও এক বোন আছে,তার বিয়ে দিতে হবে,
ভাইয়েরও ঠিক নেই কবে যে চাকরি পাবে!!
সমাজ আর লোকলজ্জার তরে,
বাবা-মা সদা থাকেন সিঁটিয়ে ভয়ে।
মেয়ে বুঝি শশুর বাড়ি থেকে চলে আসে,
ভয় পায় পাছে কেউ মুখ টিপে হাসে।
কেউ শোনে না দু:খের কথা,
কেউ বোঝে না মনের ব্যাথা,
বেড়ে চলে মার,
দু:সময়ে কেউ পাশে দাঁড়ায় না তার।
মুখ বুজে সয় মেয়ে,মনে ভয়ে মরে,
বোঝে যে কোন দিন তাকে ফেলবে মেরে।
চাকরী করে না মেয়ে, পিত্রালয়েও ব্রাত্য,
শশুর বাড়ির লোক করল তাদের ইচ্ছা চরিতার্থ ।
মরল মেয়ে, কাঁদলো সবাই,হলো থানা-পুলিশ-শাস্তি,
জীবনযুদ্ধে হেরে মেয়ে মৃত্যুতে পেল শান্তি।
বাঁচতে চেয়েছিল সে,বাড়ায় নি কেউ সহযোগিতার হাত,
বাবা-মাও দিয়েছিল সমাজ আর নিজের বিবশতার অজুহাত।
পড়াশুনা শিখিয়ে মেয়েকে বানানো স্বাবলম্বী,
সমাজের এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
না মেরে পুত্রবধূকে,ভালোবেসো তাকে,
সমাজের ভয় না পেয়ে বাঁচিও নিজের মেয়েকে।