কী লিখেছিলে!
কী লিখেছিলে!


চিঠিতে তুমি কী লিখেছিলে!
সইয়ের সঙ্গে দেখা হলে মিটিয়ে নিয়ো ভুল বোঝাবুঝি
বিশ্বাস করো, ও ঠিক সময়েই দিয়েছিল তোমার পাঠানো
তস্য ভাঁজ করা সেই চিরকুট।
তখন তো স্কুলের ছেলে
হাতচিঠি পড়তাম বইয়ের ভেতর রেখে
কিংবা ভরদুপুরে চিলেকোঠার ঘরে খিল তুলে
নয়তো স্নানঘরে
তাও চুপিচুপি, কেউ যদি আড়াল থেকে দেখে ফেলে!
এত সকালে কী লিখেছ তুমি!
কিছুতেই তর সইছিল না আর
বাড়িতে তখন গিজগিজ করছে লোক
কোথায় পাব একচিলতে সুনসান জায়গা!
পোড়ো মন্দির তখন সাপখোপ আর চামচিকেদের দেখলে
ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও দিন
চোর চোর খেলতে খেলতে ভুল করেও
কোনও বাচ্চা সেখানে লুকোয় না
সেখানে ঢুকে সবে যখন খুলতে যাচ্ছি চিঠি
হঠাৎ দেখি লোকজন নিয়ে বাবা-কাকারা আসছেন
যদি চিঠি সমেত ধরা পড়ে যাই!
চুন-সুরকি ঠেলে বেরিয়ে আসা নড়বড়ে ইটের ফাঁকে
নিমেষে লুকিয়েছিলাম তোমার চিঠি
ভেবেছিলাম, পড়ে সময় মতো এসে নিয়ে যাব!
বিকেলে গিয়ে দেখি
সে দেয়াল প্লাস্টার হয়ে গেছে
মুহূর্তে যেন চোখ ঝাপসা হয়ে গেল
মাথায় হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল আকাশ!
কী লিখেছিলে ওতে?
ঘুরঘুর করছিলাম তোমার বাড়ির চার পাশে
তখনই শুনলাম, তুমি চলে গেছ মামার সঙ্গে তাঁর বাড়ি।
কত দিন থাকবে? দু'দিন? চার দিন? সপ্তাহ? মাস?
বছর পেরিয়ে গেল,
এখানকার পাট চুকিয়ে তোমার বাবা- মা-ও চলে গেলেন শহরতলিতে।
সেই শহরতলিতে আমি এখন বউ-বাচ্চা-চাকরি নিয়ে আছি
দুম করে দেখা হয়ে যাবে যে কোনও দিন
হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরি
অকারণে চোখ বোলায় বাসস্ট্যান্ডে, লেডিস সিটের জানালায়
সিনেমার শো-ভাঙা ভিড়ে
বাচ্চাকে টানতে টানতে স্কুলে নিয়ে ছোটা মায়েদের দিকে
কোথায় পাব তোমাকে! কোথায়!
সত্যি করে বলো তো, চিঠিতে তুমি ঠিক কী লিখেছিলে!