দিগন্তের প্রেম
দিগন্তের প্রেম


সাগর--তব অলীক মূর্ছনা, লিখিত বাস্তবে নাই,
তাইতো হে অগাধ ব্যাপ্তি,দিগন্তে হারাই।
আকাশ--মোর বিস্তৃত আঙ্গিনায় তব সিন্ধুসুধার ত্রাণ,
তাইতো উপচে ওঠে প্রেমে মোর পরাণ।
সাগর--তুমি হে পরিত্রায়ী যবে নীরদ সাজে গো সাজো,
ব্যাকুল ধারায় ভরো আর বজ্রবাদ্যে বাজো।
আকাশ--প্রীতি ধারণায় মুগ্ধ আঁখি যবে সখীপানে চায়,
উন্মাদনায় রসধারা ব্যতিত আর কি বা ঝরায়?
এক মাঝি--ও খোদা,তোর দেশেতে মুই তুচ্ছ মাঝি হায়,
মোর নাওয়ের বাবুটারে যে কূলে লয়ে যাই।
বাবু--ওহে মাঝি,টান রে নাওয়ের হাল জোরে কিছু,
নইলে কালো বাদল যে ধাওয়া করে মোদের পিছু।
মাঝি মাথা নাড়িবে কি,নীল বিদীর্ণ বজ্র হুঙ্কার;
ঐ ভাদর নীরদ নেয় ভারী বর্ষার আকার।
ফুলিয়া ওঠে সাগরের জল,চলে উথাল পাতাল,
দাপুটে হাওয়ায় তরণী যে তাল মাতাল।
এদিকে মায়ার জগতে শুরু এক রঙ্গলীলা,
আকাশ-সাগর কার যে কি কথা বলা?
সাগর--যেমন চুমিও ওষ্ঠে আমার দিগন্তে মেলা সুখ,
তেমন করিয়া সোহাগধারায় ভরিয়া দিও বুক।
আহা,লহর উঠিল তোমার সুধায় ফাঁপিয়া বারেবার,
ওফ প্রিয়,কেমনে আসিল এ প্রণয় সমাচার?
যেন মানব-মানবীই মেতেছে প্রেমের আদিসুরে,
মত্ত রহিয়া বুকের উত্তাপে যেন সর্বদর্প চূড়ে।
মানবী রূপী সাগরের শরীর ফুলিয়া ওঠে প্রায়,
আকাশ আঙ্গিনায় সাগর যেন প্রেমে মূর্ছা যায়।
তবে এ মহাপ্রেমমাঝে বিপদগ্রস্ত এক নাও---
মাঝি--হে ভগবান,মোদের রক্ষা করিয়া যাও।
বাবু--
তুই উজবুক,ডোবাবি বুঝি,ব্যাটা পাজি!
দে বাইতে হাল আমায়,থাকিস যদি রাজি।
এমন সময় হঠাৎ ঝড়ের দাপটে উলটাইল পুরো,
সিন্ধুবুকে ভাসিল দেমাকি বাবু ও মাঝি বুড়ো।
যতক্ষণ প্রাণে জান ছিল মাঝিকে গালের,
বাবুর ছিলনা হুঁশ বীভৎস এক মৃত্যুজালের।
মাঝি ডুবন্ত মুহূর্তে সমুদ্রের তোলপাড়ে জোড়হাত,
ক্রমে তোড়ের মাঝে বাবু হারাল মাঝির সাথ।
সাগর--ও অম্বর নীল এবার কভু দেখ ঐ দুই মানবেরে,
ওরা যে কেউ নয় তৈরি যে হায় এখনই মরিবারে।
মোদের প্রণয়মাঝে দুই মানবের দুর্দশা না মানি,
তোমার প্রেমের বদলে ঠেকাও ওদের প্রাণহানি।
আকাশ--দেখিয়াছি কবেই উহাদের তোমার বুকে,
কিন্তু বাধা কেন দিবে ওরা মোদের সুখে?
মাঝি নয় আমলোক,আছে পরিবার তার ;
ঐ বাবু কিন্তু নচ্ছার বড়,গর্ব বড় উহার।
সাগর--মানব প্রণয় পরে আশা করে সন্তানের,
মোর আশাও তেমনই আশাপূরণের।
ঐ মাঝি কিন্তু আমার রূপকে ভোগই করছিল,
নিজের নয় বাবুর প্রাণেরই দাবি তার বেশি ছিল।
উহাকে সন্তান ভেবেই নয় তুমি রক্ষা কর,
মোর এই আবদারটুকু তো তুমি পূর্ণ কর!
সাগরের আবদারে আকাশ জোর হাওয়ায় শেষে,
এক পারের নারকেল গাছ ভেঙ্গে গুঁড়ি এল ভেসে।
বন্ধ হল ধীরে ঝড়বৃষ্টির মারাত্মক সেই দাপট,
মাঝি ঐ গুঁড়িতে ভেসে শেষে পেল খুঁজে তট।
মাঝির চেতনা হতে দেখে সে পারেতে শুয়ে,
সাগর-আকাশের প্রেমপানি তার চোখ দিল ধুয়ে।