বৃদ্ধাশ্রম
বৃদ্ধাশ্রম


জীবনের বহু ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বেলাশেষে উপনীত তাঁরা,
সন্তানরা সুপ্রতিষ্ঠিত, ব্যস্ততার অজুহাতে নাড়ির টান উপেক্ষিত,
ঘরের জায়গাটা ভালোই বড়, মনের জায়গাটা নেহাতই কম,
বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আজ বোঝা, ন্যুব্জ তনয়-তনয়ার উঠছে নাভিশ্বাস;
দায়বদ্ধতার শিকার ওরা রক্তের বন্ধনকে রেখেছে অবহেলায়,
সম্পর্করা তাই তুচ্ছ আজ, বিলুপ্তির রাস্তায় হাঁটে শেষ বেলায়;
উদাসী হৃদয় নিরুদ্দেশে, যেখানে নেই পারিপার্শ্বিক কোলাহল,
যে হাত মাখিয়ে দিত ভাত, পরিপাটি করে চুলে ছোঁয়াতো চিরুনি,
সে আজ এলোকেশী, খাওয়া হয়েছে কিনা খবর রাখে না কেউ;
মনে মনে তাঁরা মেনে নেন তাঁদের প্রতি ছেলে-মেয়ের শেষ শ্রদ্ধা,
সন্তানস্নেহের মায়াজাল ভেদ করতে না পেরেও সরে যান তাঁরা,
বাধ্য হয়ে পা বাড়ান আত্মসম্মানের সাথে বেঁচে থাকার পথে;
রঙিন স্বপ্নগুলো বাস্তবের নিকষ কালো ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়,
বৃদ্ধাশ্রমের একাকীত্ব ওঁদেরকে গ্রাস করে একেবারে নিরালায়;
তবু এখানে নিজের মতোই আরও বেশ কিছু সঙ্গী পাওয়া যায়,
বয়সের ওজনে তাঁরা সকলেই ব্রাত্য পরিবার-পরিজন থেকে,
মায়াটা কাটিয়ে উঠতে পারে না ভাঁজ হয়ে যাওয়া শুকনো ত্বক,
আশীর্বাদের কাঁপা কাঁপা হাত থাকে ফিরে আসার অপেক্ষায়।