ভক্তের ভগবান
ভক্তের ভগবান


লকডাউনে ঘরে ছিলাম বন্দি-
জীবন হয়েছে বিপর্যস্ত,
করোনার ভয়ে সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত।
বাইরে যাবার ছিলো না অনুমতি,
জনমানব শূন্য পড়ে ছিল বসুমতী।
আজ বহুদিন পর উঠেছে বিধিনিষেধ-
খুলেছে হাট-বাজার,
ঘরের বাইরে বেরিয়েছে মানুষ-
রাস্তায় করেছে ভিড়-ভাড় ।
চারিদিকে চলেছে মৃত্যুমিছিলের হাহাকার,
উঠেছে ক্রন্দন রোল,
এই বুঝি খালি হোল কোন
অভাগী মা’য়ের কোল।
ভীত-সন্ত্রস্ত-অশান্ত মনের শান্তি খুঁজে নিতে,
চললাম মায়ের মন্দিরে-মা’য়ের দর্শন পেতে।
আজ কেন শুনছি না মায়ের জয়ধ্বনি,
কোন কাশর-ঘন্টা-কোন উলুধ্বনি।
নেই কেন কোন ভক্তের আনাগোনা?
আরতির মঙ্গল গীতও যাচ্ছে না কেন শোনা!!
মন্দিরে ঢুকে অবাক হয়ে দেখি-একি!!
মা’য়ের স্বর্ণ সিংহাসন পড়ে আছে ফাঁকা,
উদাস মনে মা এক কোনে বসে আছেন একা।
চারিদিকে শুধু শয্যা পাতা,
রোগিরা শুয়ে-বসে আছেন খাটে,
মৃত্যুভয় সবার চোখে-মুখে ,
এক করুণ হাসি লেগে আছে ঠোঁটে।
পিপিই পড়ে ত্রস্ত পায়ে নার্স আর ডাক্তার,
করছেন প্রাণপন চেষ্টা রোগীদের বাঁচাবার।
করছেন তাদের সেবা-শুশ্রুষা-দিয়ে মন-প্রাণ ,
বাড়াচ্ছেন সবার মনের সাহস-মানব রূপী ভগবান।
ধীর পদে গেলাম মা’য়ের কাছে,
সব কথা রইলো পড়ে মনের মাঝে,
হোল না মা’কে বলা কোন মনের কথা-
জমে ছিলো যত দু:খ-ব্যাথা।
বললাম- বল তো মা কতদিন পরে-
দেখলাম তোকে নয়ন ভরে।
কিন্তু একি দুর্দশা তোর হয়েছে আজ!-
নেই সিংহাসন,নেই তোর মাথায় হীরের তাজ!
কোথায় গেল তোর স্বর্ণাভূষন,কোথায় তোর ভক্তকুল?
কি করে হোল এ অনাসৃষ্টি ,কি করে হোল এত ভুল??
মা এতো তোর কিসের কষ্ট,ভাসছিস কেন চোখের জলে?
মা বলেন কাতর স্বরে-কত সন্তান গেল অকালে চলে।
মূর্তি রূপে পারলাম না করতে কিছু - কোন সন্তানের তরে।
আজ তাই দিয়েছি খুলে মন্দিরের দ্বার -
যেন কোন মানুষ বিনা চিকিৎসার মারা না যায় আর।
দিয়েছি খুলে দান পেটি আর ভোগ ভান্ডারের তালা,
ডাক্তারদের পরিয়েছি আমার জন্য গাথাঁ ছিলো যত পুষ্পমালা।
করবো নিলাম আছে যত আভূষণ আর স্বর্ণ সিংহাসন,
সব পয়সা করবো অসহায় মানুষের স্বার্থে নিবেদন।
মূর্তিতে নয় মানুষ রূপে থাকবো মানুষের মাঝে,
ভিন্ন সময় ভিন্ন রূপে লাগবো মানুষের কাজে।
মানুষ তার কাজে হবে মহান,
মানুষের মাঝেই পাবে খুঁজে ভক্তের ভগবান।