ভগ্ন নীড়
ভগ্ন নীড়
সেই এক পা, দুই পা ফেলে, হাঁটতে শেখার বয়স থেকে,
যেই প্রকাণ্ড লোহার গেটটা ঠেলে,
বাইরে বেরিয়ে যেতে চাইতেম বারবার,
আজ সবার অজান্তে, ভোরের আবছা কুয়াশায় মুখ লুকিয়ে,
দাড়ালাম তার সামনে এসে।
তখন ভোরের প্রথম আলোর, আলতো ছোঁয়া,
ঘুম ভাঙিয়েছে, পাঁচিলের ওই পারের বুড়ো বটগাছে বাসা বাঁধা দোয়েল দুটোর।
বরাবরের পাড়া জাগানো আওয়াজ করে খুলতে চাওয়া গেটটা,
আজ চেনা স্পর্শ পেয়েও,
হয়তো এক থমথমে অভিমানে খুলে গেলো নিঃশব্দে।
দুই কামরার ফ্ল্যাটে,অভ্যস্ত হতে চেয়ে,
একদিনেই হাঁপিয়ে ওঠা মনটা,
সেই পুরনো চেনা গন্ধগুলোকে পেয়ে,
যেন চাইছিলো, সব শক্তি দিয়ে আঁকরে ধরতে।
এখনও ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে আছে,
জোর করে ভুলতে চেয়ে, ফেলে যাওয়া অসংখ্য স্মৃতি।
হলদে হয়ে যাওয়া দেওয়ালের শূন্য ফ্রেমে,
লেগে আছে, এক ক্লান্ত বিষন্নতা।
ঠিক যেন, বিসর্জনের পর,
নিঃশব্দতা
য় মোড়া একলা আটচালা।
চোখ বন্ধ করে বাতাসে কান পাতলে,
এখনো যেন শুনতে পাচ্ছি মায়ের চুরির আওয়াজ,
আর ফুলের বাগানের কাছ থেকে ভেসে আসা,
বাবার আপন মনে গাওয়া গানের সুর।
চমক ভাঙলো হঠাৎ"টিক টিক টিক " শব্দে।
পুরোনো ক্যালেন্ডারের পেছন থেকে উঁকি দিয়ে,
সেই পেটমোটা টিকটিকিটা, অবাক চোখে দেখছিলো আমায়।
হয়তো আমার মতোই, সে এখনো আটকে আছে,
মনের কোনায় লুকিয়ে রাখা, স্মৃতির মায়ায়।
বাস্তবের কর্কশ আওয়াজ তুলে,
এখন বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে বুলডোজার।
জীর্ণ পুরাতন কে ভেঙে,
নতুনের জায়গা করে দিতে।
সেই প্রথম হাটতে শেখার চেয়েও,
আরো ধীর, আরো দিকভ্রান্ত, আরো ক্লান্ত পায়ে,
বেরিয়ে এলাম আমি।
সঙ্গী, ঝরে যাওয়া গোলাপের পাপড়ির মতো,
একমুঠো নরম স্মৃতি, আর,
এক স্বপ্ননীড় কে ভেঙে,
অনেক স্বপ্ননীড় গড়ার,
এক ঝুড়ি মিথ্যে স্বপ্ন।