STORYMIRROR

Debashis Bhattacharya

Classics

5.0  

Debashis Bhattacharya

Classics

অবিনশ্বর

অবিনশ্বর

4 mins
892



হে নদী,

তুমি জানো না

কেন ছুটে চলেছো সাগরের টানে

হে সাগর,

বলোনা কোথায় তোমার শেষ

হে আকাশ,

তোমার কোথায় শুরু

আমি প্রশ্ন করি আমার আমিকে

হে অন্তরাত্মা, বলো

তুমি কোথা থেকে এলে

আর কটা দিন পরে

কোথায় ছুটে যাবে চলে

আমি যে শরীরটাকে সাজিয়ে রেখেছি

শুধুমাত্র তোমারি উপস্থিতির জন্য ।

তুমি কেন চলে যাবে

এই শরীরটাকে রুক্ষ-শুস্ক-জরাজীর্ণ করে

বলো, কেন তুমি চলে যাবে

আমি যে তোমাকে

আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম

চিরটাকাল শরীরটাকে

অমর করে রাখার জন্য,

তার কি হোলো ? তুমি চলে গেলে

আমার এত সাধের শরীরটাকে

পুড়িয়ে ফেলা হবে নতুবা 

চাপা দেওয়া হবে মাটির নিচে ।

কেন তুমি এই শরীরটাকে চিরটাকাল ধরে

যুগে যুগে সুন্দর ও চাকচিক্যময় করে

ধরে রাখতে পারো না ?

আমি যে সুন্দরের পূজারী গো 

সুন্দর খুব ভালোবাসি

তাই হতে চাই সুন্দর আমি ।

আরো সুন্দর, আরও সুন্দর

অতি সুন্দর হতে চাই আমি |

সেইজন্য দর্পনের সামনে এসে বারবার দাঁড়িয়ে

নিজের ছায়া, কাযা বা প্রতিবিম্বকে দেখে

আপন মনে গর্বিত হয়ে বলে উঠি

আমি কত সুন্দর |

আবার কখনো-সখনো নিজের

প্রতিবিম্বকে দেখতে দেখতে

আপন মনে হেসে ফেলি

কত কথা বলি তা কি তুমি জানো

কিন্তু আর কটা দিন পরে

আমার তো চামড়াটা শুস্ক হয়ে ঝুলে পড়বে

দাঁতগুলোও পড়ে যাবে,

মাথায় কয়েকটা চুল থাকবে

সেগুলোও সাদা হয়ে যাবে ।

চোখে তো শুধু অন্ধকার দেখবো

কোনো রখমে লাঠিতে ভর করে

অর্ধেকটা বেঁকে দাঁড়িয়ে থাকবো কিংবা

আবর্জনার মতো মাটিতে গড়াগড়ি যাবো ।

কেন, কেন তুমি এ সব করতে চাও

বলো না কেন এত সুন্দর শরীরটাকে

তুমি শুধু শুধু নষ্ট করে দিয়ে চলে যাবে

এক অজানা রাজ্যে ? তুমি কি জানো

এই "শরীর-আমিকে" নিয়ে আমার কত সপ্ন

জানো না, তাই তুমি রাগ করে

এই শরীরটা ছেড়ে চলে যাও ।

দ্যাখো, এই শরীরটার জন্য আমি কত কি করেছি

কোটি কোটি টাকা খরচা করে

কত বড় বড় অট্টালিকা বানিয়েছি

শুধুমাত্র আরামে থাকবো বলে

কিনেছি কত নামি-দামি কোম্পানির গাড়ি

শুধুমাত্র শরীরটাকে তৃপ্তি দেব বলে

রেখেছি কত বহুমূল্য আসবাবপত্র আর বাসনপত্র

যেগুলো স্পর্শ করে 'শরীর-আমি' গর্ব অনুভব করে ।

সে সব ছেড়ে কেন তুমি চলে যাবে

কেন যাবে এই ভুবনমোহিনী, শোভাদায়িকা

নয়নানন্দদায়িনী, মনোমোহিনী পৃথিবী ছেড়ে

তুমি জানো না এখানে কত কত ভোগের উপকরণ

সাজানো রয়েছে যা কেবল টাকা দিলেই পাওয়া যায় ।

একটাতে মন সন্তুষ্ট না হলে আরো একটা পাওয়া যায়

আবার সেটাতে আশাপূরণ না হলে

অনেক অনেক ভোগের উপকরণ

চারিদিক থেকে ক্রয় করা যায় পয়সার বিনিময়ে ।

তবু তুমি চলে যাবে ? ছিঃ…ছিঃ তুমি কি বোকা

এ মা----জানো না এই পৃথিবীতে

দেব, দানব, গান্ধর্ব, ঋষি-মহর্ষি এমনকি 

স্বয়ং ভগবানও আবির্ভূত হন

কারণ এখানে তুমি যা চাইবে তাই পাবে ।

হ্যাঁ, হাতে কিছু পয়সা রাখতে হয়

যা দিয়ে সর্বস্ব কিনে ফেলা যায়

যত রখমের সুখ আছে ।

তাইতো এখানকার লোকেরা পয়সাকে পূজা করে ।

মর্তে পয়সার দেবী সৃষ্টি হয়েছে

তাঁকে তুষ্ট করলেই কেল্লা ফতে ।

সেইজন্য আমি পয়সা কুড়িয়েছি পয়সা পুজো করে ।

এই দেখো কত কত পয়সা জড়ো করে রেখেছি আলমারিতে

রেখেছি বিছানার নিচে ।

অনেক অনেক টাকা জমিয়েছি ব্যাংকে

দেশের ব্যাংকে রাখলে ইডির হাথে যাবে

এই ভেবে বিদেশের ব্যাংকে বেনামি একাউন্ট খুলে রেখেছি ।

আর সম্পত্তি….. সে তো….বলে শেষ করা যাবে না |

রয়েছে হোটেল, গাড়ি, কারখানা, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ

ফার্ম হাউস, কেনা রয়েছে শত শত বিঘা জমি

যা দিয়ে নুতন উদ্যোগ শুরু করা হবে কিছুদিন পরে ।

কত সঙ্গিনী প্রেমিকা

অপেক্ষা করছে রাতদিন ধরে

শুধুমাত্র এই শরীরটার কামিনীকাঞ্চন সুখ 

আস্বাদন করে যৌবনের পিপাসা মিটাবার জন্য ।

বলো না তবু তুমি এ সব ছেড়ে কেন চলে যাবে

তুমি যে একবার গেলে আর ফিরে আসবে না

তবে কি তুমি এতেও সন্তস্ট নও

তোমার কি আরও কিছু চাই

আমি তোমায় সর্বস্ব দিয়ে দেবো ।

এমন কোনও কাজ নেই

যা তোমার জন্য করতে না পারি  

শুধুমাত্র তোমাকে এই শরীরটার মধ্যে

পুষে রাখবার জন্য ।

কেবল একবার হুকুম তো করো

আমি কান খাড়া করে আছি ।

কিন্তু কৈ, কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না তো

আমার শরীরের অভ্যন্তর থেকে

কি যে করি…যাক আরও একবার জিজ্ঞাসা করি

কি গো, সত্যি করে বলোনা আমাকে একটিবার

তোমার কি চাই, যা পেলে তুমি এই শরীরটা ছেড়ে

কোথাও কখনও যাবে না ।

আমি তোমাকে এই শরীরটার মধ্যে

আটকে রাখবার জন্য সব কিছু করতে পারি ।

কৈ, তুমি তো কোনো আওয়াজ দিচ্ছ না যে

তবে কি আমার আত্মা অসুস্থ

বাঃ রে….তাই আবার হয় নাকি!

শাস্ত্রে বলেছে আত্মা অবিনশ্বর ।

তাঁর কোনও জন্ম নেই, মৃত্যু নেই

 নেই কোনও আকার|

তাই তো তাঁকে জানবার জন্য যোগী-ঋষি

যুগ যুগ ধরে তপস্যা করে ।

অবশেষে আত্মজ্ঞান লাভ হলে

পরমেশ্বেরের সাথে একাত্মা হয়ে

নিজেকে নিরাকার ব্রহ্ম অনুভব করে ।

কিন্তু আমার আত্মা যে এখনো

কোনও সাড়াশব্দ দিচ্ছে না

তবে কি ও মরে গেলো নাকি 

ধ্যাৎ তেরি….সেটা আবার হয় না কি

শুদ্ধ আত্মা, পবিত্র আত্মা, পুণ্য আত্মা, পরমাত্মা

 শুধু আত্মা এমন কি প্রেতাত্মা বা ভূত ও হয় শুনেছি

কিন্তু কখনও মরা আত্মার নাম তো শুনিনি 

এবার আমার কি হবে

যদি আমার আত্মার মৃত্যু হয়ে থাকে

তবে তো আমিও মরা ।

তাহলে তো আমাকে চারজন কাঁধে করে 

হরিনাম করতে করতে তুলে নিয়ে গিয়ে

শ্মশানে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে ।

চিৎকার করে কান্না শুরু হয় 

চারিদিক থেকে লোকজন ছুটে আসে ।

সকলের মুখে একটাই কথা

ধনকুবের মানিকলাল বোধ হয় পাগল হয়ে গেছে

কান্না নাহি থামে তবু

প্রশ্ন করে সবারে

আত্মা আমার গেলো মরে

করবো কি তাই বেঁচে

প্রতিবেশী, আত্মীয়-সজ্জন

বোঝাতে থাকে সবাই

তোমার পাশে আমরা সদাই 

ভয়টা কিসের ভাই ।

দুঃখে কান্না বেড়েই চলে

প্রশ্ন যে একটাই

দুদিন পরে যাবো মরে

আত্মা আমার কৈ

হেনকালে অনতিদূরে

শুভ্র-পক্ক কেশে

দাঁড়ায়ে ত্যাগী ত্রিদণ্ডি স্বামী

গৈরিক বসনে ।

ধীরে ধীরে সম্মুখে এসে

কহে স্মিত হেসে

কাহার লাগি রোদন-বিলাপ

মিছে এ সংসার

সবার ভিতর সুক্ষ আমি

আত্মা যে সবার ।

তাঁরে নাহি যায় গো ধরা

নাহি মারা যায়

ভক্তিভরে করিলে সাধন 

আত্মসাক্ষাৎকার হয় ।

হয় না যে তার কোথাও শুরু

হয় না কভু অন্ত

তোমার আমার সবার ভিতর

ঘুরে চলে সে নিত্য ।

তোমার, আমার সংসার ভালো

নয়কো ভালো তাঁর

কর্ম শেষ হলে পরে

থাকে না তো আর ।

তোমার সুখে হয় না সুখী

নয়কো দুঃখে দুঃখী

সকল জীবের ভিতর থেকেও

সুক্ষ আত্মারূপী ।

ধোন-দৌলত-টাকা-পয়সা

নয়কো যে তাঁর লক্ষ্য

ভক্তি-প্রেমে জেগে উঠে

কহে আমি চিরতন সত্য ।

দাওগো তোমার দোয়ার খুলে

ভালোবাসার ডালি

দেখবে সম্মুখে দাঁড়ায়ে তোমার

এক তুমি, আমি আর তিনি ।

জ্ঞানের যেথায় হয় সমাধি

জীবন ক্ষুদ্র সেথায়

সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় বিধান

তাঁহারই চরণে লুটায় ।

রূপ-যৌবন সবই আবরণ

দ্বীপের দিয়া শোভা

তাঁহারি চরণে সপিঁয়া পরান

জীবন আলোকপ্রভা |

জানি 'আমি' এক বিচরণকারী 

আকারহীন প্রজাতি

যুগ যুগ ধরে ঘুরে চলি সাদা  

সুক্ষ আত্মারূপী পাখি আমি ।


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Classics