আত্মকথন
আত্মকথন


আমার জন্ম কোনো এক পবিত্র ক্ষণে,
স্বর্গের কোনো এক পবিত্র স্থানে।
আমার জন্ম পরিচয় নিয়ে আগে কোনোদিন ভাবিনি আসলে।
পারিজাত বনে ছিল আমার নিত্য আসা যাওয়া,
অমরাবতীর ঐশ্বর্য ছিল আমার নিত্য সঙ্গী।
ভেবেছিলাম ত্রিদিবের মন্দাকিনী হয়েই বোধহয় কেটে যাবে আমার বাকিটা জীবন।
কিন্তু তেমন হলো কই !
কোনো এক অজ্ঞাতকুলশীল ভগীরথের অমোঘ ডাকে সাড়া দিয়ে আমাকে আসতেই হলো।
ভূতনাথের জটা বেয়ে কৈলাসের পাশ দিয়ে গোমুখ হয়ে এসে পড়লাম এই ধরাধামে।
আমার পবিত্র জলকণার স্পর্শে বসুন্ধরা হলো শস্যশ্যামলা ।
আমার সঞ্জীবনী সুধার ধারায় ধন্য হলো মানবকুল, ধন্য হলো জীব জগৎ।
প্রাচীনকাল থেকে আমি এইভাবেই আমার জলধারায় সিক্ত করে চলেছি মরু থেকে তরু সকলকেই।
সেই কবে থেকে আমি বয়ে চলেছি।
আমার চলা বিরামহীন।
কতো কিছু আমি প্রত্যক্ষ করলাম -
সেই ভারতবর্ষের পরাধীন হওয়া থেকে স্বাধীনতার নতুন সূর্য ।
আমার পবিত্র জলে আমি কতো জমি উর্বর করলাম, কতো মৃতপ্রায়কে প্রাণ ফিরিয়ে দিলাম।
কিন্তু তার কি এই প্রতিদান ?
আজ আমার জলধারা রুদ্ধ।
আমার শিরা উপশিরা বিষে ভরা।
আমার শ্বাস প্রশ্বাস আজ গরল বাষ্প।
আমার গর্ভের জীবকুল আজ তাদের অন্তিম দিন গুনছে।
হয়তো আমি এভাবেই একদিন শুকিয়ে যাবো।
হয়তো একদিন আমি আবার ফিরে যাবো আমার অমরাবতীতে।
কিন্তু যতদিন আমি বেঁচে আছি
দয়াকরে আমার বুকের উপর থেকে তোমার তোমাদের উচ্ছিষ্টগুলো সরিয়ে নাও।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আমি শ্বাস নিতে পারছিনা।
আমাকে কি তোমরা সত্যিই বাঁচতে দেবে না ?