আলো
আলো


শহর সাজে ঝলমলে আলোয়, উজ্জ্বল বাহ্যিক অবয়ব,
নিয়ন আলোয় হারিয়ে গেল একলা গলির আঁধার যাপন,
যাওয়া-আসার মাঝে দিনলিপির খাতায় খন্ড ইতিহাস;
আচ্ছা, এত আলোর মাঝে আলোরা আজ কেমন আছে?
সেই মেয়েটা পথের সংসারে স্বপ্ন বুনত, সাজাত খেলাঘর,
চেনা মানুষের বিকৃত মানসিকতার শিকার ওই আলোটা।
ওরা শুধু কৃষ্ণকলির বাইরের কালো রঙটাই দেখেছিল,
চোখের তারার হীরকদ্যুতিটুকু দৃষ্টিগোচর হয়নি ওদের।
অত্যাচারিত যে মেয়েটা এইমাত্র মেট্রো লাইনে ঝাঁপালো,
যে মেয়েটা 'না' বলার জন্য অ্যাসিড হামলার শিকার হল,
সেই আলোদের খবরটা প্রকাশ্যে আসে ঠিক কতটুকু?
জন্মলগ্ন থেকেই যে মেয়েটা নিত্য অবদমনের শিকার,
যাকে শুরু থেকেই বোঝানো হয়, তুমি দুর্বল, শক্তিহীন,
ঘরে-বাইরে শারীরিক সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে যে বিচার্য,
পূর্ণিমা চাঁদের অকৃপণ জ্যোৎস্নাও ফিকে যার জীবনীতে,
তারার আলোর দিকে চেয়ে নিরালোক সেই আলোরা।
আলোরা মুখে কুলুপ এঁটে প্রতিটা মুহূর্তে গুমরে মরে,
ওরা নিভৃতে হারিয়ে যায়, ওদের মৃত্যু সাজে নীরবতায়;
মেয়েদের রোজ ফানুস ভেবে উড়িয়ে দেয় এই সমাজ,
কোমলতাকে দুর্বলতা ভেবে সুযোগ নিতে আসে ওরা;
আলোরা বাঁচতে চায়, আঁধারে তলিয়ে যেতে চায় না,
তবু পারিপার্শ্বিক নির্মম পরিস্থিতির চাপ বাধ্য করে ওদের।
কিন্তু আলোদের অন্তরের জ্যোতি বিকশিত হয় বারেবারে,
মননের আলোকপাত পরাজিত করে দেয় শব্দদেরকে,
ওদের চোখেও সেই ছলছল দীপ্তি জাগে মৌন প্রার্থনার,
জেনো, শব্দের চেয়ে আলোর গতি কিন্তু বহুগুণ বেশি।।