তিন্নি ও মামমাম (৩)
তিন্নি ও মামমাম (৩)
আজ তিন্নি খুব খুশী হয়ে স্কুল থেকে ফিরেছে। আজ ওর রেজাল্ট বেরিয়েছে, ক্লাসে ফোর্থ হয়েছে ও। মাকে রিপোর্ট কার্ড টা দেখাতেই মা খুব খুশী হল। আনন্দে আটখানা হয়ে তিন্নি গেল মামমাম এর কাছে। “ মামমাম জানো আমি ক্লাসে ফোর্থ হয়েছি !”
“ফোর্থ মানে কি দিদি?” মামমাম জিজ্ঞেস করল।
“ফোর্থ মানে জানো না?” ভুরু উঁচিয়ে তিন্নির প্রশ্ন।
মাথা নেড়ে না বলল মামমাম।
“ফোর্থ মানে চার।“ হাতের ছোট ছোট চারটে আঙ্গুল তুলে তিন্নি মামমামকে বোঝানোর চেষ্টা করল। আমাদের ক্লাসে যত ছেলেমেয়ে আছে তাদের মধ্যে আমি চার হয়েছি।“
“ ও চার।“ মামমাম একটু ভাবল তারপর ধীরে ধীরে বলল, “ তা মা আর একটু বেশি হলে ভালো হতো না? এই ধরো দশ বা চোদ্দ?”
খিলখিল করে হেসে উঠল তিন্নি। তারপর ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ওর মাকে এই মজার কথাটা বলতে।
মা সব শুনে বলল,” ছিঃ! তিন্নি। উনি জানেন না। তুমি ওনাকে বুঝিয়ে বল, যে সবচেয়ে ভালো যে সে এক। তা নয় তুমি হাসছ?”
তিন্নি আবার চলল মামমামের ঘরের দিকে। এবার যাবার সময় নিজের ট্যাব টা নিতে ভুলল না।
মামমামের ঘরে ঢুকেই দেখল মামমাম নিজের উনুনের ওপর ছোট্ট কড়াইটা রেখে কি সব বানাচ্ছে।
“তুমি কি করছো মামমাম?” জিজ্ঞাসা করলো তিন্নি।
“ তা দিদি তুমি এতো ভালো খবর আনলে তাই আমি তোমার জন্য একটু মালপো ভাজছিলাম।“ হেসে জবাব দিল মামমাম।
“ ওসব ছাড় এখানে এসে বস আমি তোমায় ট্যাব টা শিখিয়ে দিই।“ বলে হাতের ট্যাবটাকে বিছানার ওপর রাখল তিন্নি। মুখে খুব গম্ভীর ভাব।
মামমামের হাসিটা একটু ম্লান হয়ে গেল যেন। তারপর নিজেকে সামলে মামমাম বলে উঠলো,” কাল রাতে জানতো সেই পেত্নীটা আমার স্বপ্নে এসেছিল।“
“ তাই ? কি বলল?” তিন্নি বিছানা থেকে নেমে মামমামের কাছে এসে বসলো।
মামমাম প্রথম কয়েকটা মালপো কড়াই থেকে তুলে রসে ফেলে দিয়ে একগাল হেসে বলল,” ও বলল যে গাছটায় ও থাকতো না...... সেই গাছটা নাকি লোকেরা কেটে দেবে বলছে। “
“ ও মা! তাহলে ও কোথায় থাকবে?”
“ সেই তো। তা দিদি ওই বাটি আর চামচটা দাওতো। হ্যাঁ......। আর তুমি এই আসনের ওপর বস। “ রসের থেকে একটা মালপো তুলে বাটিতে দিয়ে , বাটিটা তিন্নির দিকে এগিয়ে দিল মামমাম। “ নাও দিদি খাও।“
তিন্নি উজ্জ্বল চোখে একগাল হেসে বাটিটা নিজের দিকে টেনে নিল। চামচ দিয়ে মালপোটা কাটতে কাটতে জিজ্ঞাসা করলো,” তাহলে পেত্নীটা এখন কোথায় থাকবে মামমাম?”
“ আমি বললুম তুমি আমাদের আশ্রমের পাশে যে বড় নিম গাছটা আছে সেখানে চলে এসো। কি ঠিক বলিনি দিদি?”
“ হ্যাঁ ঠিকই বলেছ।“ মালপো চিবোতে চিবোতে অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর দিল তিন্নি।
“ কেমন হয়েছে দিদি?”
“ খু--ব ভালো।“
“ আর দুটো দিই?”
তিন্নি ঢক করে মাথাটা নেড়ে দিল।
আর তিন্নি ট্যাবটার দিকে তাকাচ্ছে না দেখে মামমাম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
সমাপ্ত।