STORYMIRROR

Aparna Chaudhuri

Children Stories

3  

Aparna Chaudhuri

Children Stories

তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ৯)

তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ৯)

2 mins
194


কাল মামমাম চলে যাবে। হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট এসে গেছে । ডাক্তারবাবু বলেছেন নিয়মিত ওষুধ খেলে মামমামের শরীর ঠিক থাকবে। আর বয়স জনিত সমস্যা যেগুলো সেগুলো থাকবে কিছু করারা নেই। মামমাম কে বাবা যখন এই সব বুঝিয়ে বলল তখন মামমাম বলল,” তাহলে এবার আমি আশ্রমে ফিরে যাই। অনেকদিন গুরুদেব কে দেখিনি গুরু বোনেদের জন্যেও মন কেমন করছে। “

তিন্নির ঘুম ভাঙ্গে সকাল আটটা নাগাদ। ঘুম থেকে উঠেই ও প্রথমে চলে যায় মামমামের কাছে। আজ ঘরে গিয়ে দেখে মামমামের সুটকেস গোছানো হচ্ছে।

“ তুমি কোথায় যাচ্ছ?”

“ আমি ...... আমি এবার আশ্রমে ফিরে যাচ্ছি দিদি। অনেক দিন তো হল।“

“ না তুমি যাবে না। তুমি আমাদের বাড়ী থাকবে। “ তিন্নির চোখ ছলছল করে উঠলো।

“ তা হয় না দিদি। আমি কতদিন হল চলে এসেছি বলত? ওখানে আমার জন্য সবাই বসে আছে যে।“

“ তোমার বন্ধুরা?”

“ হ্যাঁ।“

“তোমরা বন্ধুরা খেল?”

“ খেলিনা, তবে গল্প করি, বেড়াতে যাই, নামগান করি।“

তিন্নি এক ছুটে মায়ের কাছে চলে গেল । তারপরেই ঘর থেকে সোরগোল শোনা গেল। মা চিৎকার করে বকছে আর তিন্নি চেঁচিয়ে বায়না করে চলেছে। চেঁচামেচি শুনে বাড়ীর সবাই ঘরের দরজায় উপস্থিত। জানা গেল তিন্নি মামমামের সঙ্গে যেতে চায়। ও মামমামের বন্ধুদের দেখতে চায়। কিন্তু মা রাজি নন। কারণ তিন্নির স্কুল চলছে। এতদিন স্কুল কামাই করা সম্ভব নয়।

অনেক আলোচনার পর ঠিক হল স্কুল থেকে বাবা অনুমতি নিয়ে আসবে। তিন্নি এক সপ্তাহের জন্য যাবে মামমামের আশ্রমে। 

তিন্নি খুব খুশী। মা ওর সুটকেস গুছিয়ে দিলেন। বাবা তিন্নি আর মামমামকে নিয়ে রওনা হল।

মামমামের আশ্রম পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল। খবর দেওয়াই ছিল। গুরুদেবের একটা মোবাইল আছে। এখন বাবা মামমামকেও একটা মোবাইল কিনে দিয়েছে।

সন্ধ্যা বেলায় মামমাম দের আশ্রমটা তিন্নির একদম ভালো লাগলো না। কেমন যেন ঝুপঝুপে অন্ধকার অন্ধকার। একটা বাঁশের বেড়া ঠেলে ওরা এসে দাঁড়ালো আশ্রমের মধ্যে। মাঝখানে একটা বড় উঠোন যার সামনে রয়েছে রাধামাধবের মন্দির। সেই মন্দিরের সামনে একটা বাল্ব জ্বলছে। সই বাল্বের অল্প আলোতে চারিদিকে ঘোরানো ঘরগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘরগুলোর আশেপাশে বড় বড় গাছ। লোকজন কাউকে দেখা গেলো না। তিন্নি বাবার হাত ধরে মামমামের পিছন পিছন মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেল। মামমাম এগিয়ে গেলো,” কইগো তোমরা সব কোথায়?”

তিন্নি লক্ষ্য করলো বাল্বের চারিদিকে ভিনভিন করে উড়ছে নানা রকমের পোকা। তিন্নি চোখটা বন্ধ করে নিল। ও পোকা দেখলে ভীষণ ভয় পায়।

মামমামের ডাকে বেশ কয়েকজন মহিলা আর পুরুষ বেরিয়ে এলো । ওদের দেখে তারা খুব খুশী।

মামমামের ঘর পরিষ্কার করে রাখা ছিল। সবাই সেই ঘরে গিয়ে বসলো। ওদের জন্য গরম গরম আলুর চপ আর মুরির সঙ্গে এলো চা। তিন্নির জন্য এলো তিলের নাড়ু। অনেক রাত অবধি গল্প হল। তারপর রাতের খাওয়া। আয়োজন সামান্য কিন্তু যত্নের কোনও ত্রুটি নেই। 

বাবার ইচ্ছা ছিল সেদিনই ফিরে আসার কিন্তু ওরা কিছুতেই রাজি হল না। অগত্যা বাবা কে থেকে যেতে হল।



Rate this content
Log in