তিন্নি আর মামমাম ( পর্ব ৮)
তিন্নি আর মামমাম ( পর্ব ৮)


আজ সকাল থেকে বাড়ীতে সাজো সাজো রব। আজ মামমাম হাসপাতালে যাবে চেকআপের জন্য। বাবা কাল সন্ধ্যায় অফিস থেকে এসে মামমামকে বলল,” ঠাম্মা কাল সকাল নটার সময় তৈরি থেকো। কাল হাসপাতালে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেছে। আমি কাল তোমাকে নিয়ে যাবো।“
মামমাম ভোরবেলা থেকে উঠে পড়েছে। নানা রকমের রান্না করতে শুরু করে দিয়েছে। আটা ভাজা, সুজির হালুয়া, নরম নিমকি। সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে খাবার।
বাবা সকাল সাতটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে মামমামের ঘরের দিকে গিয়ে কাণ্ড দেখে অবাক।
“ তুমি সকাল থেকে উঠে কি করছ ঠাম্মা?”
“ খাবার বানাচ্ছি রে। আজ আমরা যাবো না?”
“ এতো খাবার কে খাবে?”
“ কেন? আমরা সবাই খাব।“
“ ঠাম্মা ... আমরা বেড়াতে যাচ্ছি না। হাসপাতাল যাচ্ছি। ওখানে খাবার নিয়ে গিয়ে আমরা পিকনিক করবো নাকি?“
“ আরে বাবা আমি জানি, ওখানে অনেকক্ষণ বসতে হবে। তখন খিদে পাবে।“
“ না , বসতে হবে না । আর ওখনে খাবার নিয়ে যাওয়া মানা।“
“ মানা ...... আচ্ছা।“
“ তুমি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। আমি কিন্তু ঠিক নটার সময় বেরবো। “
বাবা এইসব বলে ঘরে এসে মা কে বলল,” তুমি একবার যাও তো ঠাম্মার ঘরে। ওনাকে তৈরি করে দাও । আমার মনে হয় নটার মধ্যে তৈরি হয়ে ঠাম্মা বেরতে পারবে না। “
মা গিয়ে মামমামকে পরিষ্কার শাড়ি পরিয়ে চুল বেঁধে, মুখে ক্রিম মাখিয়ে তৈরি করে দিল। মামমাম সেজেগুজে জপের মালা হাতে লাজুক লাজুক মুখে বেরিয়ে এলো। ঠিক নটার সময় বাবা একটা ট্যাক্সি ডেকে মামমামকে নিয়ে হাসপাতাল চলে গেল।
তিন্নি দুএকবার যাবার জন্য জেদ ধরেছিল কিন্তু ওখানে গেলেই ডাক্তাররা ইনজেকশন দিয়ে দেয় শুনে আর জেদ করে নি।
বাবা আর মামমাম ফিরে এলো প্রায় বেলা তিনটে। মামমাম চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে গেল। পিছন পিছন তিন্নি।
“ তোমাকে ইনজেকশন দিল? ব্যথা লাগলো?”
“ না দিদি। ওরা দেয় নি আমি বললাম আমি বুড়ো মানুষ তোমরা আমায় ছেড়ে দাও। তো ওরা ছেড়ে দিল।“
“ ছেড়ে দিল?”
“ হ্যাঁ । এখন আমায় ছুঁয়ো না। আমি আগে চান করি , কাপড় কাচি তারপর ... কেমন?”
“ কেন?”
“হাসপাতালে কত রকমের রোগ ... তুমি এখন ঘরে মায়ের কাছে যাও একটু পরে এসো দিদি।“
তিন্নি লাফাতে লাফাতে নিজের ঘরের দিকে যেতেই শুনল বাবা খুব রেগে গেছে।
বাবা বলছে,” আর কোথাও আমি ঠাম্মাকে নিয়ে যাবো না। এমন কাণ্ড করে...”
মা বাবাকে শান্ত করার জন্য বলল,” ছাড়ো না , বুড়ো মানুষ।“
“ না বুড়ো মানুষ বললে হয় না। ওখানে গিয়ে কি করেছে জানো?”
“কি?”
“ যে ডাক্তার ঠাম্মাকে চেকআপ করছিল তার বিয়ের সম্বন্ধ করতে শুরু করেছে।“
“অ্যাঁ সেকি?”
“ আরে আর বলছি কি। প্রথমে তাকে জিজ্ঞাসা করল , ‘তোমার বিয়ে হয়েছে বাবা?’ তারপর তার নাম জিজ্ঞাসা করলো। তারপর বয়স, বাড়ী কোথায়। সে বেচারি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছে। আর ঠাম্মার মত বয়স্ক মহিলাকে কিছু বলতেও পারছেনা। “
“ তা সব বলল ছেলেটা?”
“ হ্যাঁ । আর কি করবে? বলেও কি নিস্তার আছে? তারপর শুরু হল সেই মেয়ের রূপ আর গুণের বর্ণনা।“
“ কে এই মেয়ে?”
“ ওনার বন্ধুর নাতনি। এই মহিলা ঠাম্মার সঙ্গে ওনার আশ্রমে থাকে। “
তিন্নি মন দিয়ে সব শুনল। তারপর চুপিচুপি চলল মামমামের কাছে।
“ মামমাম, সম্বন্ধ কি?”
মামমাম তখন চান করে কাপড় কেচে এসে সবে বসেছে। ওর কথা শুনে মামমাম মুচকি হাসল,” সম্বন্ধ করে তো বিয়ে হয়। ছেলের বাড়ীর থেকে মেয়েকে দেখতে আসে। পছন্দ করে তারপর বিয়ে হয়। “
“ তারপর কি হয়?”
“ তারপর মেয়েরা সেজেগুজে , বেনারসি পরে , গয়না পরে শ্বশুরবাড়ী চলে যায়।“
“ তারপর?”
“ তারপর......
মামমামের মনটা অনেকদূরে ভেসে গেল। চোখে সুদুরপসারি দৃষ্টি। মামমাম যেন কোন দূর দেশে চলে গেছে। ওর গলাটা যেন অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে। তিন্নিও ভেসে চলল মামমামের সঙ্গে সেই ভিন গাঁয়ের মেয়েটার দেশে।