তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ৭)
তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ৭)
বিকেল বেলায় মামমাম দুধটা জ্বাল দিচ্ছিল। তারপর একটা লেবু কেটে তার রসটা দিয়ে দিল দুধের মধ্যে। আর তার ওপর ঢেলে দিল খানিক টা জল।
“ তুমি কি করছ?” খাটের ওপর থেকে জিজ্ঞাসা করলো তিন্নি। খাটের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে গালে হাত দিয়ে একমনে ও দেখছিল মামমাম কি করছে।
“ ছানা কাটাচ্ছি দিদি।“
“ জল দিলে কেন?”
“ ছানা টা নরম হবে।“ দুধের মধ্যে চামচ টা নাড়তে নাড়তে বলল মামমাম।
দুধের গামলার দিকে এক মনে তাকিয়ে দেখছিল তিন্নি, কি ভাবে ছানা আর সবুজ জলটা আসতে আসতে আলাদা হয়ে গেল।
“ এই দেখ দিদি কি সুন্দর ছানা হয়ে গেছে।“ চামচ দিয়ে খানিকটা ছানা তুলে দেখালও মামমাম। মামমাম যা করে সব অবাক দৃষ্টিতে দেখে তিন্নি। সব কিছুই ওর ভাল লাগে। মা যখন রান্না ঘরে রান্না করে তিন্নির সেখানে ঘুর ঘুর করার অনুমতি থাকে না। মা ধমক দিয়ে বলে,” এখান থেকে যা তিন্নি নাহলে তেলের ছিটে লাগবে।“
সঙ্গে সঙ্গে ঝর্ণা দি ওর হাত ধরে ওকে বাইরের ঘরে নিয়ে যায়। কিন্তু মামমাম তা করে না। মামমাম ওকে খাটের ওপর বসিয়ে দেয় আর নিজে মাটিতে পিঁড়ের ওপর বসে রান্না করে। আর ওকে বুঝিয়ে বলে কি করছে। কখনো কখনো ওকে সাহায্যও করতে দেয়।
আজ মামমাম খই, ছানা, কলা আর চিনি দিয়ে মাখল। তিন্নির জিভে জল এসে গেলো। এটা খুব ভালো বানায় মামমাম। মুখে দিলে গলে যায় আর তার মধ্যে কুড়মুড় করে চিনি। সবে মাখা শেষ করে মামমাম তিন্নির জন্য একটা ছোটো বাটি আনতে গেছে, পাশের বাড়ীর মোনা আর বিউটি দুই বোন এসে ঢুকলও বাড়ীতে।
“ এই তিন্নি খেলবি না?”
ঘরে ঢুকেই ওরা খাবারের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। খই মাখার গন্ধে সারা ঘর ম ম করছে।
“ এসো দিদি তোমরাও এসো। সবাই মিলে ভাগ করে খাই।“
মামমাম সবাইকে একটু একটু খই মাখা ছোটো ছোটো বাটিতে করে দিল। সবাই খুব পরিতৃপ্তির সঙ্গে খেলো।
কিন্তু তিন্নির মনটা ভালো নেই। কেন যে মামমাম ওদের ডেকে খাওয়াতে গেল, বেশ খাবারটা দু ভাগ হচ্ছিল, এখন চার ভাগ হল।
খাওয়া হয়ে যাবার পর মোনা বিউটি ডাকল,” চল, যাবি না?”
“ তোরা যা আমি আসছি।“ বলল তিন্নি।
ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই তিন্নি চেঁচিয়ে উঠলো,” কি দরকার ছিল ওদের ডেকে ডেকে খাওয়াবার?”
ওকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে মামমাম বলল,” ছি দিদি! অমন বলতে নেই। তুমি ওদের দেখিয়ে দেখিয়ে একা একা খাবে এটা কি ভালো কথা? সবার সাথে ভাগ করে খেতে হয়। আজ তুমি ওদের দিলে তো। পরের বার দেখো ওরা যখন কিছু খাবে তোমায় ডাকবে। “
“ ছাই ডাকবে।“ ধুপ ধাপ করে পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তিন্নি।
ওর দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মামমামের বুকের ভিতর থেকে। একা বাচ্ছারা বড্ড একালসেড়ে তৈরি হয়।
সেদিন খেলার থেকে ফিরে তিন্নি সোজা দৌড়ে চলে এলো মামমামের ঘরে,” তুমি ঠিক বলেছ মামমাম। দেখো মোনা বিউটি আমাকে কি দিয়েছে।“
মামমাম ঘরের কোনে বসে মালা জপ করছিল। তিন্নি হুমড়ি খেয়ে পড়লো ওর ওপর।
“ দেখো ওরা আমাকে একটা চকোলেট দিয়েছে। এসো তুমি আমি ভাগ করে খাই।“
জপ করার সময় মামমাম কথা বলে না। মাথা নেড়ে এক গাল হেসে ইশারায় মামমাম বলল, পরে।