তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ৫)
তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ৫)
মামমামের একটা ছোট্ট হামানদিস্তা আছে। সেটাতে মামমাম পান ছেঁচে খায়। মামমামের প্রায় সব দাঁত গুলোই পড়ে গেছে তাই পান চিবিয়ে খেতে পারে না। স্কুল থেকে এসে তিন্নি মামমামের জন্য পান ছেঁচে দেয় মাঝে মাঝে। মামমাম পান মুখে দিয়েই একগাল হেসে বলে ,” আঃ! আজ পানটা খুব মিষ্টি হয়ে গেছে। তুমি ছেঁচে দিলে তো তাই।“
তারপর নিজের কাপড়ের বটুয়ার থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বার করে ওর হাতে দেয়।
তিন্নির হাতে কেউ কখনও পয়সা দেয় না। তাই প্রথম যেদিন ওর হাতে মামমাম পয়সা দিয়েছিল সেদিন অবাক হয়ে ও কয়েনটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিল,” এটা দিয়ে কি করবো?”
“ কেন? ল্যাবেঞ্চুস কিনে খাবে।“
“ আচ্ছা।“
তারপরই ঘটেছিল ঘটনাটা। তিন্নি কয়েনটা হাতে নিয়ে গেটের বাইরে বেরিয়ে রাস্তা পার হবার চেষ্টা করছিল। এর আগে একা ও কখনও রাস্তা পেরোয় নি । তাই ওর ভয় করছিল। এমন সময় মা নামলো বাস থেকে।
“ তুমি বাইরে কি করছ?”
“ আমি ...... লজেন্স কিনতে যাচ্ছি রাস্তার ওপারের দোকান থেকে। “
“ পয়সা কোথায় পেলে?” মা ধমকে উঠলো।
“ মামমাম দিয়েছে।“ ভয়ে ভয়ে বলল তিন্নি।
মা আর কোনও কথা না বলে তিন্নির হাত ধরে ওকে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে চলল। ওকে ঘরে বসিয়ে রেখে সোজা চলে গেল মামমামের ঘরে।
“ ঠাকুমা আপনি তিন্নিকে হাতে পয়সা দিয়েছেন?”
“ হ্যাঁ মা।“
“ আমরা কখনো ওর হাতে পয়সা দিই না।“
“ ও ...... আমি জানতাম না মা। আসলে ও ছোট্ট বাচ্ছা । আমার কাছে তো ওকে দেবার মতো আর কিছু......” গলাটা একটু ভেঙে এলো যেন ওর।
মা ঘরে ফিরে এসে তিন্নির কাছ থেকে কয়েনটা কেড়ে নিয়ে তাকে তুলে রেখে দিল। তিন্নি মন খারাপ করে গোঁজ হয়ে বিছানার ওপর শুয়ে রইল।
বাবা অফিস থেকে ফিরে সব শুনলো। তারপর পায়ে চটিটা গলিয়ে কোথায় যেন বেরিয়ে গেল। ফিরে এলো একটা পিগি ব্যাঙ্ক হাতে করে। সেটা তিন্নির হাতে দিয়ে বাবা বলল,” নে এটা তোর। এবার থেকে মামমাম যত কয়েন দেবে সব এটার মধ্যে ভরে রাখবি কেমন?”
তিন্নি খুব খুশী হয়ে ওটা নিয়ে লাফাতে লাফাতে মায়ের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিল।
“ মা দেখ বাবা কি দিয়েছে। আমার কয়েনটা দাও। এটাতে ভরে রাখব।“
মা মুচকি হেসে কয়েনটা তাক থেকে নামিয়ে ওর হাতে দিল।
এবার কয়েনটা ব্যাঙ্কে ঢুকিয়ে ওটাকে নাড়তে নাড়তে ছুটল মামমামের ঘরে।
“ মামমাম দেখ, বাবা কি দিয়েছে। বাবা বলেছে, তুমি যে কয়েন গুলো দেবে সেগুলো এটাতে ভরে রাখতে।“
মামমাম ফোগলা দাঁতে হেসে উঠলো।
এখন তিন্নির পিগি ব্যাঙ্কে বেশ কয়েকটা কয়েন জমেছে।
সমাপ্ত