তিন্নি আর মামমাম ( পর্ব ১৪ )
তিন্নি আর মামমাম ( পর্ব ১৪ )
আজ সকালে তিন্নির বাবার ফোন এসেছিল। অনেকদিন হয়ে গেলো তিন্নি মামমামের সঙ্গে এসেছে। এবার ফিরতে হবে। অনেকদিন স্কুল কামাই হয়ে গেছে। আশ্রমের সবার মন খারাপ। এমন কি আশ্রমের গুরুদেবও বললেন,” তিন্নি মা চলে যাবে। ওর কথা খুব মনে পড়বে। “
মামমামের চোখ ছলছল করছে। সেঁজুতি মামমাম এসে মামমামের পাশে বসে বলল,” মনখারাপ কোরো না দিদি।“
কথাটা শুনেই মামমামের চোখের জল আর বাধ মানলো না। আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে উনি বললেন,” বড্ড মায়ায় বেঁধেছে গো মেয়েটা। ও চলে গেলে আমার খুব......”
সকাল থেকে সারা আশ্রমে সবার মন খারাপ। কেউ হাসছে না মজা করছে না। সবার দিকে তাকিয়ে তিন্নিও মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে । কয়েকদিনের মধ্যেই তিন্নির বাবা এমন সময় কোথা থেকে রাজু ছুটতে ছুটতে এলো, ” ছবি ঘর খুলেছে, ছবি ঘর খুলেছে!”
“ কি রে ওরকম ভাবে ছুটছিস কেন? এই সবে জ্বর থেকে উঠেছিস !” ধমকে উঠলো সেঁজুতি মামমাম।
রাজু তখন আশ্রমের চাতালে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে। ওর চিৎকার শুনে সবাই ছুটে এলো । রাজু একটু দম নিয়ে আবার চেঁচাতে লাগলো,” ছবি ঘর খুলেছে। তাতে এবার ঠাকুর দেবতার ছবি এসেছে।“
এখানে বলে রাখা ভালো যে ছবিঘর হল আশ্রমের সবচেয়ে কাছের সিনেমা হল। আশপাশের চার পাঁচটা গ্রামের মধ্যে এই একটাই হল। এই হলে বেশ কয়েক বছরের পুরনো সিনেমা আসে। এখানকার লোকেরা তাই দেখতে যায়।
কয়েকমাস আগে কি সব ঝামেলা হয়ে এই হলটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার খুলেছে।
“ তুই কি করে জানলি ছবি ঘর খুলেছে?” খুব উৎসাহের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলো আশ্রমের রাঁধুনি বাসুদেব । তার সিনেমা দেখার খুব নেশা। ছবি ঘরের একটাও ছবি বাদ যায় না। ছবি ঘর বন্ধ হতে তারই বোধহয় সব থেকে বেশী দুঃখ হয়েছিল।
“ রাস্তা দিয়ে রিস্কায় করে বলতে বলতে যাচ্ছিল। কাগজ ও বিলি করছিল। “ বলল রাজু।
“ কি ছবি এসেছে রে?”
“ মা দুর্গার ছবি। অনেক ঝামেলার পর খুলেছে তো তাই বোধহয় ঠাকুর দেবতার ছবি । তুমি দেখতে যাবে না বাসুদা? “ জিজ্ঞাসা করলো রাজু।
“ আমিও যাবো!“ বাসুদার উত্তর দেবার আগেই তিন্নি চেঁচিয়ে উঠলো।
ওর কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।
“ তুমি যাবে?” জিজ্ঞাসা করলো মামমাম।
তিন্নি একগাল হেসে বলল, “ হ্যাঁ।“
“ তাহলে তিন্নি দিদিমণির সঙ্গে আপনারাও চলেন না কেন দিদিরা? আমি গিয়ে গুরুদেবকে জিজ্ঞেস করে আসি?” বলল বাসুদেব।
“ তা বেশ। দিদি আমরাও যাই। মা দুর্গার সিনেমা, ভালই হবে। “ বলল সেঁজুতি ।
“ আমি যাই গুরুদেবের কাছে।“ বলে বাসুদেব রওনা হতেই তিন্নি ওর পিছন পিছন ছুটল।
গুরুদেব সবে সকালের পুজো শেষ করে জলযোগ করতে বসেছেন। বাসুদেব আর তিন্নি এসে দাঁড়ালো ওনার সামনে।
“ কি সংবাদ বাসুদেব?” বললেন গুরুদেব।
“ গুরুদেব , তিন্নি চলে যাবে ওর বাড়ী। ওর যাবার আগে আমরা সবাই যদি একটা ছবি দেখতে যাই? ছবি ঘর খুলেছে, একটা মা দুর্গার বই এসেছে। দিদিরাও বলছিলেন যাবেন, যদি আপনি অনুমতি দেন......”
“ নিশ্চয়ই যাবেন। একটা ভালো ধার্মিক ছই এসেছে। সবাই যাবেন।“
“ তুমি যাবে না?” জিজ্ঞাসা করলো তিন্নি।
“ আমি? না মা ।“
“ কেন ? মা দুর্গার গল্প তো। চল না প্লিজ। তুমি না গেলে আমরা কেউই যাবো না।“ ঠোঁট ফোলাল তিন্নি।
গুরুদেব মহা মুশকিলে পড়লেন। খানিকক্ষণ আলাপ আলোচনার পর তিন্নি গুরুদেব কে রাজি রাজি করিয়েই ফেলল। ঠিক হল দুপুরের শো দেখতে যাওয়া হবে। বাসুদেব ছুটল রান্না করতে। আজ তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে সিনেমা দেখতে যেতে হবে।
“ সবাই যাবে, গুরুদেবও যাবে।“ চেঁচাতে চেঁচাতে পৌঁছল তিন্নি মামমামের কাছে।
“ গুরুদেবও যাবেন?” জিজ্ঞাসা করলো মামমাম।
“ বাহ খুব ভালো। এই রাজু , তুই আর টুকটুকিও যাবি আমাদের সাথে। তোরা চলে আসবি সময় মত। আর শোন আসবার সময় একটা ঢাকা রিক্সা আর দুটো ভ্যান রিক্সা নিয়ে আসবি। “ বলল সেঁজুতি মামমাম।
রাজু হেসে, ঘাড় নেড়ে ছুটে চলে গেল। আশ্রমে উৎসবের আমেজ।
সমাপ্ত।