Aparna Chaudhuri

Children Stories

3  

Aparna Chaudhuri

Children Stories

তিন্নি আর মামমাম ( পর্ব ১২ )

তিন্নি আর মামমাম ( পর্ব ১২ )

2 mins
284



মামমাম অনেক ভোরে ঘুম থেকে ওঠে। তিন্নি উঠতে পারে না অত ভোরে। তাই তিন্নির মাথার কাছে একটা ছোট্ট টিফিন বাক্স করে দুটো নাড়ু আর বিস্কুট রেখে দেয় মামমাম। যদি তিন্নির ঘুম ভেঙে যায় তাহলে তিন্নি ওই টিফিন বাক্স খুলে নাড়ু আর বিস্কুট খেয়ে জল খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সত্যি কথা বলতে কি ওই নাড়ু আর বিস্কুট খাবার লোভে তিন্নির রোজই সকাল বেলায় ঘুম ভেঙে যায়। খাবার খেয়ে যখন ও ঘুমোতে যায় তখন ওর কানে ভেসে আসে সকালের আরতির ঘণ্টা।

এখানে সব ভালো কিন্তু রাতে টয়লেট পেলেই মুশকিল, একা বেরোনো যায় না। কলকাতার মত অ্যাটাচ টয়লেট তো না। সেই বাগান পেরিয়ে ওধারে যেতে হয়। চারিদিকে বড় বড় গাছ। তার ওপর সেই শ্যাওড়া গাছের পেত্নীটাও তো আছে। মামমাম যদিও বলে ‘ও’ ভালো কিন্তু কি জানি ঠিক বিশ্বাস হয় না। দেখা গেলো যেদিন তিন্নি একা বেরোলো সেদিনই তেনার মুড খারাপ। তিন্নিকে দেখেই ঘাড় মটকাতে এলো। তাই রাতে যেতে হলে ও কোনও রিস্ক নেয় না , মামমাম কে ডাকে।

মামমাম যখন ঘুমোয় তখন খুব মজার দেখতে লাগে। খুব মিহি স্বরে নানান সুরে নাক ডাকে মামমাম। আর মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে ফুশ ফুশ করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। তিন্নি রাতে মামমামকে জাগানোর একটা অদ্ভুত কায়দা আবিষ্কার করেছে । ও বিছানায় উঠে বসে মামমামের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে। যেই মামমাম মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়তে যায় ও টুক করে মুখটা চেপে ধরে। আর ওমনি খাপুস খুপুস করে মামমাম জেগে ওঠে, আর খিল খিল করে হেসে ওঠে তিন্নি।

ঘুম চোখে মামমাম বলে ওঠে ,” কি দিদি হিসু পেয়েছে?”

তিন্নি ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললে মামমাম ওকে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেয় সামনের নালাতে। তিন্নি একহাতে ধরে থাকে মামমামের আঁচল ।

সেদিন সকাল বেলায় তিন্নি সবে ঘুম থেকে উঠেছে, মুখও ধোয় নি , দাঁতও মাজেনি মামমাম এক হাতে একটা ছোট্ট কাঁচের গ্লাসে সবুজ মত একটা সরবত আর অন্য হাতে এক বাটি বোঁদে নিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো। লাল হলুদ চুড় করা বোঁদে গুলো দেখে তিন্নির জিভে জল চলে এলো।

“ দিদি তুমি যদি এই সরবত টা এক ঢোকে খেয়ে নাও তাহলে এই সব বোঁদে তোমার।“

“ এটা কি মামমাম?”

“ এটা? এটা একটা ওষুধ। এটা খেলে তোমার পেটের ভিতরের সব পোকা গুলো মরে যাবে। আর দেরী কোরো না দিদি। চট করে খেয়ে নাও, বোঁদেটা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে যে...”

তিন্নি বোঁদের বাটির দিকে জুলজুল করে চেয়ে হাঁ করলো। আর ব্যাস মামমাম ওর মুখে ঝট করে ওই সরবতটা ঢেলেই ওর নাকটা টিপে ধরলো। আর তিন্নি ঢক করে সেটা গিলে ফেলল।

“উফফফফফফফ............ কি তেতো রে বাবা.........” চেঁচিয়ে উঠলো তিন্নি। ওর চোখে টলটল করছে জল।

“ ও কিছু না এক্ষুনি চলে যাবে , তুমি বোঁদে খাও।“ বলেই বোঁদের বাটিটা ওর হাতে ধরিয়ে দিল মামমাম।


পরে জেনেছিল ওই ওষুধটার নাম ‘কালমেঘ’।



Rate this content
Log in