Aparna Chaudhuri

Children Stories

3  

Aparna Chaudhuri

Children Stories

তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ১১)

তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ১১)

3 mins
224


দুপুরবেলা তিন্নি ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙলো রাজুর ডাকে। তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুয়ে ও তৈরি হয়ে নিল। রাজু এসেছে সঙ্গে ওর দিদি টুকটুকি। টুকটুকি তিন্নির চেয়ে কয়েক বছরের বড়। ওরা তিনজনে চলল গ্রামে বেড়াতে। বেরিয়ে সব কিছুই নতুন লাগছে তিন্নির। এখানে বেশীর ভাগ বাড়ী মাটির। মাথায় টালির চাল। মেঠো পথে সাইকেল বা সাইকেল রিক্সা চলে। ওরা তিনজন নদীর ধারে গেলো বাবুই পাখির বাসা দেখতে। এক একটা গাছে তিরিশ চল্লিশটা করে বাসা ঝুলছে। ওর মধ্যে বাবুই পাখির ডিম আর ছোটো ছোটো বেবিরা থাকে। একটা অর্ধেক তৈরি বাসা ঝড়ে পড়ে গিয়েছিল মাটিতে। রাজু তিন্নিকে ওই বাসাটা কুড়িয়ে এনে দেখালো। তিন্নি দেখল বাসার মধ্যে ছোটো ছোটো ঘর বানানো রয়েছে। যেটাতে বেবিরা থাকে। তিন্নি বাসাটা বাড়ী নিয়ে যাবার জন্য সঙ্গে নিল। 

তিন্নির আনন্দ আর ধরে না। বাড়ী গিয়ে মোনা বিউটি কে দেখাবে। ওর অবশ্য খুব ইচ্ছা ছিল একটা ডিম আর একটা বেবি বাবুই পাখিও সঙ্গে নিয়ে যাবার , কিন্তু টুকটুকি দিদি ওকে বোঝাল যে মা বাবা ছাড়া ওদের খুব কষ্ট হবে তাই ও ওই আইডিয়া টা ড্রপ করলো।

আশ্রমে ফেরার পথে একটা পানা পুকুর পড়ে। সেই পুকুরের চারদিকে ভর্তি পানা। আর মাঝে খানিকটা জল দেখা যায়। সেই পুকুরে কয়েকটা হাঁস সাঁতার কাটছে দেখে তিন্নি দাঁড়িয়ে গেলো। ওর খুব ভালো লাগছে দেখতে। হাঁস গুলো কেমন একটার পর একটা লাইন দিয়ে সাঁতার কাটছে। হঠাৎ রাজু ওকে দেখালও পাড়ের কাছে একটা হাঁস পা দিয়ে চেপে চেপে কিছু একটা শুকনো পানার ঢিপির মধ্যে লুকিয়ে রাখল। তারপর লেজ নাড়তে নাড়তে জলে নেমে গেলো।

“ ও কি করছে গো?” জিজ্ঞাসা করলো তিন্নি।

“ওটা ওর বাসা। ওখানে ও ওর ডিম লুকিয়ে রাখছে। “ বলল রাজু।

“ ডিম? সত্যি!” তিন্নির চোখটা চকচক করে উঠলো।

“ তোমার চাই ডিম?”

“ হ্যাঁ।“

রাজু পুকুরের পাড় দিয়ে পৌঁছে গেলো সেই জলের ধারে শুকনো পানার ঢিপির ওপর। তার পিছন পিছন টুকটুকি দিদির সাথে তিন্নিও পৌঁছে গেলো। তারপর শুকনো পাতা সরিয়ে পাওয়া গেলো দুটো ডিম। তিন্নি তুলে নিল ডিম দুটো। ডিমগুলো হাল্কা গরম। আজ ও বাসুদা কে বলবে ডিম ভাজা করে দিতে। বাসুদা আশ্রমের রাঁধুনি।

তিন জনে মিলে আশ্রমে পৌঁছে সোজা চলে গেলো রান্নাঘরে।

“বাসুদা আমাদের ডিম ভাজা করে দাও।“ তিনজনে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো।

“ডিম কোথা থেকে পেলে?” জিজ্ঞাসা করলো বাসুদা।

“পুকুর পাড় থেকে।“ বলল তিন্নি।

বাসুদা একটা ডিম ফাটিয়ে তাওয়ায় দিল, ওরা পরম আগ্রহে বাসুদাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। তিন্নি দেখল ডিম টার মধ্যে ছোটো একটা লালচে রঙের দানার মত কিছু রয়েছে।

“ ওটা কি বাসুদা?”

“ ওটার থেকেই তো হাঁসের ছানা তৈরি হত গো দিদিমণি।“

“ আমরা কি একটা হাঁসের বেবি কে মেরে ফেললাম?” তিন্নির চোখে টলটল করছে জল।

“ আমি ওই ডিম ভাজা খাব না।“ চেঁচিয়ে কেঁদে উঠলো তিন্নি। রাজু আর টুকটুকিরও মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ওদের দিকে তাকিয়ে বাসুদা হেসে বলে উঠলো ,” মন খারাপ কর না। তোমরা একটা কাজ কর না কেন, বাকি ডিম টা তোমরা ফেরত রেখে দিয়ে এসো।“

কথাটা শুনে ওরা লাফিয়ে উঠলো। তিন্নি ছোঁ মেরে অন্য ডিমটা হাতে তুলে নিয়ে দৌড় লাগালো, পিছনে রাজু আর টুকটুকি দিদি।  



Rate this content
Log in