তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ১০)
তিন্নি আর মামমাম (পর্ব ১০)
তিন্নির শোওয়ার ব্যবস্থা হল মামমামের সঙ্গে মামমামের ঘরে। বাবার অন্য ঘরে। বাড়ীতে তিন্নির ঘরে এয়ার কন্ডিশনার চলে। এখানে ফ্যানের তলায় , মশারির মধ্যে শোওয়া। বাড়ীতে তিন্নির ডানলোপিলো গদি। এখানে তক্তপোষের ওপর তুলোর তোষক। শোওয়ার পর অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করতে করতে তিন্নি এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।
পরের দিন সকাল বেলায় বাবা বাড়ী চলে যাবার সময় তিন্নিকে জিজ্ঞাসা করলো,” কিরে থাকবি না যাবি? “
রাত্রিবেলায় তিন্নির জায়গাটা একেবারেই ভালো লাগেনি কিন্তু সকালে আশ্রমের আশপাশটা দেখে ওর খুব ভালো লেগে গেলো। তার ওপর মামমাম বলেছে ওকে গ্রামের মন্দির দেখাবে, পাশের নদীতে নৌকো চড়াবে। সব চেয়ে বড় কথা এখানে থাকলে হোম ওয়ার্ক করতে হবে না। তাই সব ভেবে চিনতে তিন্নি বলল,” আমি থাকবো।“
বাবা গেট দিয়ে বেরিয়ে চলে যেতেই তিন্নির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তিন্নির মামমামের বন্ধু সেঁজুতি মামমাম ওকে কোলে করে নিয়ে চলে গেল পুকুর ধারে। সেখানে খুব সুন্দর বাঁধানো একটা ঘাট রয়েছে। ঘাটের দুপাশে বসার চেয়ার। ওকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সেঁজুতি মামমাম ডেকে পাঠালো রাজু বলে একটি ছেলে কে। রাজু পাশেই থাকে। সে এসে পেয়ারা গাছে উঠে পেয়ারা পেড়ে দিল। কাউকে ওরকম ভাবে গাছে উঠতে তিন্নি কখনো দেখেনি। ও খুব অবাক হয়ে গেল।
“ তোমায় গাছে চড়া কে শেখাল?”
“ হি হি ! গাছে চড়া? সে তো আমি ছোটো বেলার থেকেই পারি।“
“ তুমি আর কি কি পারো?”
“ সাঁতার কাটতে পারি, কাগজের ফুল বানাতে পারি......”
“ আমায় শেখাবে?”
“ তোমায়? তুমি পারবে?”
“ কেন পারব না?”
“ আচ্ছা আচ্ছা, সে হবে’খন, এখন তুই পুকুর থেকে কয়েকটা গেঁড়ি গুগলি তুলে দে দেখি, তিন্নির জন্য ঝোল হবে।“ বলল সেঁজুতি মামমাম।
তিন্নির সামনে বেশ কয়েকটা পেয়ারা গামছার থেকে ঢেলে রেখে রাজু নিজের নিজের পরনের গেঞ্জিটা খুলে রাখল। তারপর ঝপাং করে লাফিয়ে পড়লো পুকুরের জলে। তিন্নি চমকে উঠলো। তারপর বেশ খানিকক্ষণ বাদে রাজু ঘাটের সিঁড়ির কাছে ভেসে উঠলো হাতে ভর্তি গোল গোল কিসব।
“ ওগুলো কি?” চেঁচিয়ে উঠলো তিন্নি।
“ ও গুলোই তো গেঁড়ি গুগলি। আজ তোমার জন্য রান্না হবে।“ হেসে বলল সেঁজুতি মামমাম।
জল থেকে উঠে গামছা দিয়ে গা মুছতে মুছতে রাজু বলল,” আজ তোমায় বাবুই পাখির বাসা দেখাতে নিয়ে যাবো, বিকেল বেলায় কেমন?”
তিন্নি পেয়ারায় কামড় বসাতে বসাতে ঘাড় নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলল। সেঁজুতি মামমাম চারটে ডাঁশা পেয়ারা হাতে দিতেই রাজু একগাল হেসে ছুটে চলে গেলো।