STORYMIRROR

arijit bhattacharya

Children Stories Horror

2  

arijit bhattacharya

Children Stories Horror

শ্মশানকালীর মন্দির

শ্মশানকালীর মন্দির

2 mins
226


বহুদিন পর বেড়াতে এসেছি বিষ্ণুপুরের কাছে ঢ্যাঙারতলা গ্রামে। তেরো বছর হয়ে গেল এদিকে আসে নি। আবার আজকের তারিখটাও তো তেরো,তারপর একে শনিবার ,তার ওপর আবার অমাবস্যা।গ্রামের একপাশে বয়ে যাচ্ছে দ্বারকেশ্বর,আর মাইলের পর মাইল জুড়ে দিগন্তবিস্তীর্ণ শাল অরণ্য। অরণ্য গহন,দিনের বেলাতেও সূর্যালোক সেখানে প্রবেশ করে না। এছাড়াও সেখানে মহুয়া আর ইউক্যালিপটাস গাছও আছে। গ্রামের পশ্চিমদিকে শ্মশান,আর সেখানেই জঙ্গলের মধ্যে কোনো এক অজানা জায়গায় আছে দেবী শ্মশানকালীর ভাঙা মন্দির। মন্দিরটা নাকি মল্ল রাজাদের সময়ে নির্মিত হয়েছিল,আগে ডাকাতেরা সেখানে পুজো দিত, কোনো এক সময়ে এক অঘোরী তান্ত্রিকের নিবাস ছিল সেখানে। কিন্তু সেই মন্দির দর্শনের সৌভাগ্য আমার ঘটে নি!


যখন বাসে বিষ্ণুপুর পৌঁছলাম তখন শনিবারের বারবেলা। সেখান থেকে মিনিবাস করে জয়গড়িয়ায় পৌঁছলাম তখন সাতটা বাজে। ফেব্রুয়ারী মাস। ভালোই রাত হয়েছে,চারদিক নিস্তব্ধ-নিঝুম। এখান থেকে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা শুরু হবে,রাস্তার দুপাশে গহন শালবন,হালকা কুয়াশা চারদিকে,এখান থেকে শালবনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা পৌঁছে গেছে গ্রামে। আমি রিক্সায় চড়লাম। দুমাইল দূরত্ব গ্রামের।

রিক্সাওয়ালা নিজেকে আপাদমস্তক কালো রাপারে মুড়ে রেখেছে।রিক্সা চলছে তো চলছেই,গ্রাম তো আর আসেনা। রিক্সাওয়ালাকে প্রশ্ন করলাম ,"কি গো,আর কতক্ষণ লাগবে?" খনখনে গলায় হেসে উঠল রিক্সাওয়ালা। ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। রিক্সাওয়ালার নীরবতা দেখে ভাবলাম পিঠে হাত দিয়ে ওকে ডাকি। কিন্তু কোথায় কি,পিঠে হাত দিতে গিয়ে আমার হাত ওর পিঠকে স্পর্শই করতে পারল না। রিক্সাওয়ালা বদলে গেল এক কঙ্কালে। বুঝলাম আজ শনিবার প্রেতের পাল্লায় পড়েছি । দুরন্ত বেগে ছুটছে রিক্সা। টের পাচ্ছি নরকের তপ্ত বাতাসের স্পর্শ।    জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

শেষরাতের দিকে জ্ঞান ফিরল। দেখলাম রিক্সাওয়ালা নেই। রিক্সা আমাকে নিয়ে পড়ে আছে জঙ্গলের মধ্যে। আর কিছুদূরেই ঐ তো,ঐ তো সেই ভাঙা মন্দিরটা।শ্মশানকালীর মন্দির। বুঝতে পারলাম শনিবারের অভিশপ্ত রাতে প্রেতের হাত থেকে আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন দেবী শ্মশানকালীই। কিন্তু এখন এতো রাতে মন্দিরে কাঁসরঘন্টাই বা কারা বাজাচ্ছে।

পরের দিন সকালে কোনোওমতে ঢ্যাঙারতলা গ্রামে ফিরলাম।


Rate this content
Log in