রূপসী. একটা ছোট্ট গ্রামের নাম
রূপসী. একটা ছোট্ট গ্রামের নাম
নীরেনের জন্ম গ্রামে। ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠাও গ্রামে, তারপর স্কুলের পাট চুকিয়ে কলেজে ভর্তি হয়ে থেকে শহরে থাকা। প্রথম প্রথম শহরে এসে নীরেনের মন বসতোনা, চোখের সামনে সবসময় ভাসতো সেই সবুজে ঘেরা বিশাল খেলার মাঠ, টলটলে জলে ভরা গঙ্গা, মুক্ত বাতাস, পাখির কিচিরমিচির এইসব। পড়ন্ত বিকেলে গঙ্গার পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখা। আর এই শহরের বুকে সেই সবকিছু তো নেই,আছে শুধু বাস গাড়ির তীব্র হর্ন, বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। নীরেনের মন চাইত গ্রামে ফিরে যেতে, কিন্তু উপায় নেই অভাবের সংসারে বাবা অনেক কষ্ট করে তাকে পড়াচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে সংসারের হাল ধরতে পারে, তার উপর বোনের দায়িত্বও আছে। এখন নীরেনের একটাই উদ্দেশ্য ভালো করে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো।
নীরেন যে মেশে থাকে সেখানকার বেশিভাগ সবাই শহুরে, প্রথমদিকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়ে ছিল নীরেনের তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সবার সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিয়েছে। হঠাৎ একদিন নীরেনের মেশের সবাই ঠিক করল বেড়াতে যাবে এক ছোট্ট গ্রামে। ইন্টারনেটে সবাই গ্রামটার সম্বন্ধে সুন্দর সুন্দর বর্ণনা দিচ্ছে সাথে দারুণ দারুণ ছবি। এই শীতের সময় নাকি ওখানে পরিযায়ী পাখি আসে দলে দলে। পাখি দেখার সাথে সাথে নৌকা করে গঙ্গাবক্ষে ভেসে বেড়ানো সে এক আলাদা অদ্ভুত আনন্দ। তারপর গ্রাম্য পরিবেশ, খাওয়া দাওয়া সব মিলে দারুণ মজা হবে। সবাই এক পায়ে যেতে রাজি হয়ে গেল।
------------নীরেন বলল আমি যাব না....., তোরা ঘুরে আয়।
----------সবাই বলে উঠল কেন যাবিনা খুব আনন্দ হবে তাছাড়া খরচ খরচা বেশি হবেনা। আমরা সবাই মিলেই যাব।
------------নীরেন বলল কি নাম গ্রামের!!!!!!
----------------ওদের মুখে গ্রামের নাম শুনে নীরেন অবাক হয়ে গেল এবং মনে মনে বলে উঠল আমার গ্রামে যেতে চাইছে এরা। আমার গ্রামে এই রকম দর্শনীয় স্থান আছে শুনেছিলাম বাবার মুখে একবার, শীতের সময় প্রচুর মানুষ আসে আমাদের গ্রামে পরিযায়ি পাখি দেখতে তবে আমার কোনদিন যাওয়া হয়নি। সারাদিন স্কুল, স্কুলের পর বাচ্চাদের পড়ানো তারপর নিজের পড়াশোনা, আর সংসারের চিন্তা করতে করতেই কেটেগেছে বিলাসিতার সময় কই আমাদের জীবনে!!!!
------------নীরেনকে ভাবতে দেখে ওরা বলে উঠল কি হলো তোর!!!!!!
------------নীরেন বলল কিছুনা!!!!! আসলে তোরা আমার গ্রামে যেতে চাইছিস শুনে অবাক হলাম!!!!
--------------ওরা সবাই লাফিয়ে উঠে বলল কি......বলছিস ওখানে তোর বাড়ি, আর আমাদের এতদিন বলিসনি তোর গ্রামে এত সুন্দর জায়গা আছে!!!!
-------------নীরেন হেসে বলল আমি কোনদিনও যায়নি, তাই তোদের আর কি বলব!!! তবে এছাড়া আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে, আসলে আমাদের গ্রাম রূপসী যার রূপের কোন তুলনা নেই।
--------------ওরা বলে উঠল তোর গ্রাম বাহ্ তাহলে তো আরও মজা হবে। আগে যাসনি আমাদের নিয়ে যাবি তাহলেই দেখা হয়ে যাবে।
পরের সপ্তাহে নীরেন ওর মেশের বন্ধুদের নিয়ে গ্রামে ফিরল। সারাদিন ধরে গ্রামের সমস্ত ওলি গলি সুবুজ ধান খেত, রঙ বেরঙের ফুলের খেত, পুরনো দিনের জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, জাগ্রত বুড়ো শিব মন্দির সমস্ত কিছু ঘুরিয়ে, গ্রামের ছেলেদের সাথে মাঠে আনন্দে ফুটবল খেলে, মাঝিদের গলায় লোকগান শুনতে শুনতে নৌকা করে গঙ্গাবক্ষে ভেসে পরিযায়ি পাখি দেখা, এবং সবশেষে গঙ্গার টলটলে শীতল জলে স্নন করে ক্লান্তি দূর করে বাড়ির পথে ফিরল। নীরেনের আজ খুব আনন্দে হচ্ছে সাথে গর্ববোধ হচ্ছে নিজের বন্ধুদের নিজের সুন্দর গ্রামটাকে ঘুরিয়ে দেখাতে পেরে। আর সব থেকে ভালো লাগছে ওদের চোখে অপার মুগ্ধতা দেখে।
আর নীরেনের বন্ধুদের হৃদয়ে এক অদ্ভুত জায়গা করে নিয়েছে এই গ্রাম, গ্রামের সৌন্দর্য আর সব থেকে নীরেনের পরিবারের আতিথেয়তা। এবং ওদের আজ স্বীকার করতে সত্যি কোনো দ্বিধা নেই গ্রামের মানুষদের মন উদার এবং ওরা সহজে সবাই কে আপন করে নিতে পারে। ওরাও অনেক ভালোবাসা এবং ভালোলাগাকে হৃদয়ে নিয়ে আবার শহরের বুকে ফিরল।
