Indrani Bhattacharyya

Children Stories Drama Fantasy

4.6  

Indrani Bhattacharyya

Children Stories Drama Fantasy

রূপনগরের বন্ধুরা

রূপনগরের বন্ধুরা

9 mins
404



আজ গুরুপূর্নিমা। সারা বছরের এই একটা দিনে গোটা রূপনগর সেজে ওঠে আলোয় আলোয়। শাল পিয়ালে ঘেরা ভুবন ডাঙার মাঠে বসে চাঁদের হাট। জ্যোৎস্না নিকোনো মাঠে পসরা সাজায় ভিনদেশী বনিকের দল। 

প্রতিবছরের মতো এই বছরও এলি আর বেলি তাদের ঠাম্মির কাছে বায়না ধরলো চাঁদের হাট দেখতে যাবে বলে। ঠাম্মীর বয়স হয়েছে ঢের। এপাড়া বেপাড়ায় মুড়ি বিক্রি করে অনেক কষ্টে সংসার চালান। দুই নাতনিকে নিয়ে হেসে খেলে কাটিয়ে দিতে চান জীবনের বাকি কটা দিন। দুই নাতনী এমনিতে খুব লক্ষ্মী। বলতে পারো ঠিক তোমাদেরই মত। ঠাম্মিকে সব কাজে সাহায্য করে আর মন দিয়ে পড়াশোনা করে। শুধু এই একটা দিনেই বাড়ির বাইরে দূর গাঁয়ে একটু ঘুরতে যেতে চায় । ঠাম্মি তাই আজকের দিনে ফেলতে পারেন না নাতনীদের আবদার।

সন্ধ্যে হলে সেজেগুজে ঠাম্মির হাত ধরে এলি আর বেলি দেখতে গেলো চাঁদের হাট। গোটা হাট জুড়ে নানান জিনিসের মেলা সাজিয়ে বসেছেন দেশী ভিনদেশী দোকানিরা। এলি আর বেলি যত দেখে তত অবাক হয়। এলি বেলি জানে গাছের ফুল গাছে দেখতে যত ভালো লাগে তুলে নিলে আর তত মজা লাগে না। তেমনি অনেক জিনিস এই হাটের দোকানে দেখেই মজা। কিনে নিলে অর্ধেক মজাই নষ্ট হয়ে যায়।তাই এখনও অব্দি মেলা থেকে তেমন কিছুই কেনেনি তারা , শুধু বেলির মেঘবরণ চুলের জন্য একটা রঙিন ফিতে আর একটা কথা বলা কাকাতুয়া ছাড়া। 

ঘুরতে ঘুরতে তারা দেখল হাটের মাঝে একটা গোল মত ঘেরাটোপে আজব জামাকাপড় পরা একজন লোক একটা রংচঙে লাঠি নাচিয়ে কিসব যেন খেলা দেখাচ্ছে আর তাই দেখতে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। ওদেরও খুব ইচ্ছে হলো কাছে গিয়ে দেখার। ভালো করে দেখবে বলে দু আনা পয়সা সামনে টুলে বসা একটা লোকের কাছে জমা করে দুই বোনে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ঘেরা জায়গার সামনে গিয়ে দেখতে লাগলো মঙ্গল জাদুকরের ভেলকি। 

মঙ্গল সেখানে ভিড় করে থাকা দর্শকদের একে একে তার জাদু দণ্ডের ভেলকি দেখিয়ে এক প্রহরের জন্য ইচ্ছাপূরণের সুযোগ করে দিচ্ছিল। কেউ হতে চাইছিলো স্বর্গের অপ্সরী ,কেউ চাইছিলো হতে জলপরী। কেউ চাইলো হাঁড়ি হাঁড়ি রাজভোগ আর কেউ চাইলো সোনার জড়ি বোনা চুনি পান্নার জামা। এই ভাবে চলতে চলতে একসময় এলো এলি বেলির ইচ্ছে পূরণের সুযোগ। দুই বোনেরই খুব ভালো লাগে পাখিদের। তাদের কথা মত জাদুকরের জাদুকাঠির ছোঁয়ায় তারা চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে হয়ে গেলো চোখ ধাঁধানো মন ভোলানো দুটো মিষ্টি পাখি। দুপাশে গজিয়ে উঠলো ইচ্ছে ডানা। তারপর দুই বোন ফরফর করে উড়ে গেলো আকাশের বুকে।মনের আনন্দে চষে ফেলতে লাগলো আকাশখানা।


 উড়তে উড়তে হঠাতই চোখে পড়লো একটা মস্ত বড় বাজপাখি দুরন্ত বেগে পাগলের মত উড়ে আসছে তাদের দিকে। চোখের তারায় জ্বলজ্বল করছে ঈর্ষার আগুন। দুই বোন প্রচন্ড ভয়ে বাড়িয়ে দিল তাদের ওড়ার গতি। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেকটা। দুষ্টু বাজপাখি তার বিরাট ডানা ঝাপটিয়ে তুলে নিলো এলিকে। এলিকে বাঁচাতে প্রাণপণে বেলি ঠোকর দিতে লাগলো বাজপাখিটাকে। কিন্তু ওইটুকু ছোট পাখি মোটেই পেরে উঠলো না ওই দানব পাখিটার সাথে। উল্টে বাজপাখির কামড়ে রক্তাত্ব হয়ে ডানা ভেঙে আছরে পড়লো মেলার মাঠে । দুর আকাশে মিলিয়ে গেলো এলির বুক ফাটা কাতর আর্তনাদ আর বাজপাখির জয়োল্লাস। 


পাখিরূপি বেলীকে দেখতে ভিড় জমে গেলো মেলার মাঠে। ততক্ষণে নাতনীদের না দেখতে পেয়ে তাদের ঠাম্মির পাগল পাগল দশা। লোকের মুখে বেলির কথা শুনে কাঁদতে কাদতে ছুটে গেলেন সেখানে যেখানে যন্ত্রণায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছিল বেলি ।পাখিরুপি বেলীকে তড়িঘড়ি জাদুকর জাদু কাঠি ছুঁয়ে আবার পাখি থেকে মানুষ বানিয়ে দিলেন। 

এদিকে মেলার মাঠে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে এলেন রাজা মশাই। রাজপুত্র ডেকে নিয়ে এলো রাজবদ্যিকে। বেলি রাজবদ্যির সুশ্রুষায় আর ঠাকুমার কান্নাভেজা আদরে চোখ মেলে তাকাতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সকলে।


বেলি একটু সুস্থ বোধ করতেই ঠাম্মি শুধোলো -" এলি কোথায় বাছা?" উত্তরে বেলি ঠাম্মিকে জানালো তাদের আকাশ আতঙ্কের কথা। শুনে বাজিকর কপাল চাপড়িয়ে বলে উঠলো -' বুঝেছি, সে আসলে বাজ পাখির ভেকধারী সুরজনগরের দুষ্টু সওদাগর।ও মিথ্যে লোভ দেখিয়ে মানুষকে টেনে নিয়ে যায় ওর মায়াপুরীতে আর তারপর সর্বস্ব লুঠ করে বন্দী করে রাখে তাদের। পৃথিবীর সব মনোহরা নজর কাড়া জিনিসের প্রতি ওর লোভ। ছলে বলে কৌশলে সেগুলো ছিনিয়ে এনে জমিয়ে রাখে নিজের প্রাসাদে। আজ আসলে ও ছদ্মবেশে ছিল তাই প্রথমে চিনতে পারিনি ওকে। কিন্তু জাদু করে সওদাগরের কথা মত ওকে বাজপাখির রূপ দেবার সময়েই লক্ষ্য করেছিলাম ওর ঈর্ষার আগুন রাঙ্গা চোখের তারা। ততক্ষণে আমার জাদু প্রয়োগ করা হয়ে গেছিলো। তখন ভেবেছিলাম এই জাদুর মেয়াদ তো এক প্রহর। তাই হয়ত এইটুকু সময়ে কারুর কোনো ক্ষতি করবে না সে। যদিও মনে রয়েই গেছিলো ভয় আর শেষ পর্যন্ত আমার সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো। যাই হোক এলিকে আমি ফিরিয়ে আনবই মিথ্যে স্বপ্নের বেসাতি করা সূরজনগরের ওই দুষ্টু সওদাগরের কবল থেকে'। রূপনগরের রাজকুমার রূপকুমার বললো শুনে - ' আমিও যাবো আপনার সাথে'। অনেক মানা করা সত্ত্বেও, বেলি সঙ্গ নিল অসুস্থ শরীরে। ঠাম্মিকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজা আর রাণীমা নিয়ে গেলেন রাজপ্রাসাদে।

জাদুকর বলল - ' এখান থেকে সড়ক পথে সুরজনগর তিন দিন আর চার রাত্রির পথ। তাই আকাশপথেই যাওয়া ভালো। যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে ততই মঙ্গল'।এই বলে জাদুকর মস্ত বড়ো এক ঈগল পাখির রূপ ধরল। পিঠে চাপিয়ে নিল বেলি আর রাজকুমারকে। তারপর কালবৈশাখী ঝড়ের থেকেও দ্রুত গতিতে উড়তে লাগল আকাশপথে। মুহূর্তের মধ্যে পেরিয়ে গেল কত শত পাহাড়, নদী ,গ্রাম, নগর ,‌ জনপদ, রাজপথ। চার রাত্রির পথ এক রাতেই অতিক্রম করে সকাল সকাল পৌঁছে গেল আসমানী জলে ঘেরা সমুদ্র পাড়ের ছোট্ট দ্বীপ - নগরী সূরজনগর। সেখানে গিয়ে জাদুকর জাদু মন্ত্রবলে নিজেকে সাজিয়ে নিল সাধারণ এক চাষীর বেশে। রাজপুত্র আর বেলিকে একি উপায়ে সাজাল চাষী - পুত্র আর কন্যা রূপে। 

তারপর সেই খানে দুদিন থেকে ওই নগরের অধিবাসীদের থেকে সেই দুষ্টু সওদাগর সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জোগাড় করল। জানতে পারল এই সওদাগর পৃথিবীর সব আশ্চর্য জিনিস আর সুন্দর মনের মানুষদের কি ভাবে বন্দী করে রেখেছেন তার মায়াপুরীতে। তারপরের দিন অমানিশার রাতে পরিকল্পনামাফিক সুযোগ বুঝে তারা চুপিচুপি লৌহকঠিন প্রহরা পেরিয়ে ঢুকে পড়লো সেই অভিশপ্ত মায়াপুরীতে। 

অমন বিলাসবহুল প্রাসাদ তারা এর আগে কখনো দেখেনি। রূপনগরের রাজপ্রাসাদও যেনো এর বৈভবের সামনে হার মেনে যায়। এ যেনো বহুমূল্য রত্নে শোভিত পৃথিবীর বুকে গড়া এক টুকরো ইন্দ্রপুরী। তারা যদিও সে সব দিকে নজর দিয়ে সময় নষ্ট না করে এগিয়ে গেলো মায়াউদ্যানের দিকে। জাদুকর ততক্ষণে তার জাদুদন্ডের সাহায্যে ভেঙ্গে ফেলেছে মায়া প্রাচীর। মশালের ছায়াঘেরা আলোয় উদ্যানের মাঝে দেখতে পেল শান বাঁধানো এক মস্ত সরোবর। বুঝতে পারলো এই সেই সরোবর যার কথা শুনেছে তারা নগরের স্থানীয় মানুষ জনের মুখে। কাছে গিয়ে দেখলো মশালের আলোতে মর্মরের দেওয়ালের মত ঝকঝক করছে বরফ জমাট দীঘির জল। ভালো করে দেখবে বলে বেলি এগিয়ে গিয়ে তরতরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো জলের কাছে। সামনে গিয়ে দেখার পর তার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো দারুন ভয়ে আর উত্তেজনায়। জাদুকর আর রুপকুমারকেও দেখালো রক্ত জল করে দেওয়া সেই দৃশ্য।

দেখা গেল দীঘির সেই বরফ জমাট জলের বহু গভীরে পড়ে রয়েছে বহু মানুষের নিথর দেহ। মনে হচ্ছে সবাই যেনো ঘুমিয়ে আছে বহুকাল ধরে। যেনো কেউ বুঝি ডাকলেই এক্ষুনি উঠে বসবে তারা। বেলি গিয়ে জাদুকরকে বললো - ' মঙ্গলভাই এবার আমার দিদিকে ফিরিয়ে দাও । নিশ্চয়ই তাকে ওই দীঘির জলেই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে দুষ্টু সওদাগর'। জাদুকর বললো - ' এই দীঘিতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করতে পারবে একমাত্র তুমিই। দীঘির জমাট জলে ঘুমিয়ে থাকা মানুষদের জাগাতে হলে একটাই পথ আছে। এদের কোনো একজনের কাছের বা বলতে পারো রক্তের সম্পর্কের কেউ এসে যদি দরদ দিয়ে ওই বরফ জমাট জলে মিশিয়ে দেয় নিজের চোখের দু ফোঁটা জল তাহলেই বরফ যাবে গলে। তারপর মন প্রাণ দিয়ে স্মরন করতে হবে দীঘির নিচে ঘুমিয়ে থাকা সেই আপনজনকে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে তোমাকেই নিতে হবে এই মানুষগুলোর প্রাণ ফেরানোর দায়িত্ব '। 

সবটা শুনে বুঝে বেলি দীঘির জলে মিশিয়ে দিল তার দিদির জন্য প্রাণ নিড়োনো দু ফোঁটা চোখের জল। সাথে সাথে কাজ হলো ম্যাজিকের মত। দীঘির সমস্ত বরফ মুহূর্তের মধ্যে গলে জল হয়ে গেলো । তার পর বেলি এক মনে ডাকতে লাগলো তার দিদি এলীকে। কিছুক্ষন এরকম চলার পর হঠাৎই শুনতে পেলো দীঘির নিচে জলের মধ্যে কিছু একটা নড়াচড়ার শব্দ । 

এদিকে ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে বাগানের গাছে পাখিদের কলকাকলি। জাদুকর বুঝতে পারলো ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই। যা করার তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে। সওদাগর একবার উঠে পড়লে বিপদের আর শেষ থাকবে না। বেলি এবার জাদুকরের কথা মত ঝটপট খুলে দিল জলে তার অজগর সাপের মত লম্বা বেনিখানি। তাকে আঁকরে ধরে একে একে উঠে আসতে লাগলো জলের নিচে এতদিন ধরে সর্বস্বান্ত হয়ে সওদাগরের হাতে বন্দী থাকা মানুষজন। রাজকুমার ইতিমধ্যে বীর বিক্রমে তার তরবারির আঘাতে ঘায়েল করে করে ফেলেছিল দুর্গের বেশ কয়েকজন প্রহরীদের। ফলে মূল ফটক ছিল প্রহরা শূন্য। সেখান দিয়েই একে একে সবাইকে বের করে বাইরে নিয়ে গেলো তারা। তারই মধ্যে বেলি খুঁজে পেয়েছে তার হারিয়ে যাওয়া দিদি এলীকে। খুশিতে জড়িয়ে ধরেছে দুজনই দুজনকে। দুই সহোদরার চোখেই তখন বাঁধ ভাঙ্গা খুশির জল। 

হঠাতই শুনতে পেলো পেছন থেকে তাদের নাম ধরে কারা যেনো ডাকছে। বেলি বুঝলো সে ডাক জাদুকরের নয়। বড়ো মধুর সে ডাক,যেনো জন্ম জন্মান্তরের চেনা। মনে হলো দুই বোনই যেনো এই ডাক শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছে বহুকাল ধরে। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো এক দেবদর্শন পুরুষ এবং মহিলা চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে হাত বাড়িয়ে দাড়িয়ে আছেন। এলি বললো - ' বোন ওনারা আমাদের মা আর বাবা। ওনারা যখন ঠাম্মির কাছে আমাদের রেখে বিদেশ যাত্রা করেন তখন তুই অনেক ছোট, সদ্য জন্মেছিস। তাই তোর মনে নেই কিছু '। তারপর তাদের দিকে ফিরে বললেন - ' কিন্তু তোমরা এখানে এলে কি ভাবে? ঠাম্মি কত খুঁজেছে তোমাদের। সবাই বলত তোমাদের নাকি মাঝ দরিয়ায় জাহাজডুবি হয়েছিলো'। বাবা বললেন - 'সবই কপালের ফেরে আর লোভের বশে হয়েছে মা। তোর মা আমার কাছে সুরজনগরের এক ছড়া গজমতির মালা চেয়েছিলেন। জানিস তো সুরজনগরের গজমতি পৃথিবী বিখ্যাত। সেইবার রূপনগরে এরকমই চাঁদের হাটে দেখা হয় এই দুষ্টু সওদাগরের সাথে। সে বলে - 'এখানে আমার দোকান থেকে এক ছড়া না কিনে আমার সাথে সরাসরি সূরজনগর চলুন। আপনার স্ত্রীকেও নিয়ে চলুন সাথে। সুরজনগর সমুদ্রের কোলে খুব সুন্দর জায়গা। সেখানে প্রচুর সস্তায় এমন হার পাবেন আর সেই সাথে ঘোরাও হবে ভালো। থাকা খাওয়ার জন্য আমার মহল তো রইলই। আপনি ব্যবসায়ী মানুষ। স্ত্রীর জন্য হার তো কিনবেনই চাইলে সাথে লগ্নি করুন এতে। নগদ অর্থ থাকলে নিয়ে চলুন সাথে আর নিয়ে আসুন গজমতির সম্ভার এই রূপনগরে। দেখবেন আপনি দুদিনেই হয়ে যাবেন রূপনগরের সব থেকে ধনী মানুষ'। এই সব শুনে বুঝলি মামনি আমি আর লোভ সামলাতে পারিনি। সওদাগরের ভালো মানুষি দেখে গলে গিয়ে তার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দিলাম সহজেই। সওদাগর এখানে আমাদের এনে সব সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে বন্দী বানিয়ে রাখলো জলের নিচে..।'  

এতদিনের জমে থাকা আরো কথা বলতে যাচ্ছিলেন এলি বেলির বাবা কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে জাদুকর এবার তাড়া দিয়ে বললেন - ' বাকি কথা নয় তোলা থাক আপাতত। আপনি আপনার দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন এখনই। আমি বাইরে সব ব্যাবস্থা করে রেখেছি। যান, তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যান'। 

ইতিমধ্যে বাইরে লোকজনের শোরগোলে ঘুম ভেঙেছে সওদাগরের। কি হয়েছে দেখার জন্য কোলাহল লক্ষ্য করে বাগানের দিকে আসতেই পথ রুখে দাড়ালো রূপনগরের বীর রাজপুত্র রূপকুমার। সেই সুযোগে এলি বেলীকে নিয়ে তাদের মা বাবা বেরিয়ে পড়লেন মায়াপুরী ছেড়ে। সওদাগর মোটেই তখন এরকম অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তবু লড়াই করতে পিছপা হলেন না। বেশ কিছুক্ষন ধরে রাজপুত্র আর সওদাগরের মধ্যে চললো মারকাটারি যুদ্ধ। কিন্তু অপ্রস্তুত অবস্থায় বেশিক্ষণ যুদ্ধ চালাতে পারলেন না সওদাগর। বন্দী হলেন রাজপুত্রের হাতে। 

তারপর আর কি । বন্দী সওদাগর আর এলি বেলি কে নিয়ে তাদের মা বাবা আর রাজপুত্র ফিরে গেলেন রূপনগর। জাদুকর সহ বাকি মানুষজন যে যার দেশে ফিরে গেলেন।সওদাগরের লোক ঠকিয়ে আনা ধন সম্পদ অর্ধেক অর্ধেক করে জমা করা হলো রূপনগর আর সুরজনগড়ের রাজকোষে যাতে ভবিষ্যতে গরীব দুঃখীদের উন্নয়নে ব্যাবহার করা যায় সেই অর্থ। রূপনগরের রাজা সওদাগরকে খুব কড়া শাস্তি দিলেন যাতে সে এরকম অন্যায় আর কোনোদিন কারুর সাথে না করতে পারে। রাজকুমার আর বেলীকে তাদের বীরত্বের জন্য সম্মানিত করা হলো আর জাদুকরকেও তার সততা ও সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করা হলো। 

এদিকে ঠাম্মি তো ভীষণ খুশি তার ছেলে বৌমা আর নাতনিদের ফিরে পেয়ে।সবার জন্য তিনি বহুদিন পর রান্না করলেন ছানার পায়েস আর তালের ক্ষির। সবাই বহুদিন পর চেটে পুটে খেলো সব আর খুব মজা করলো সেই সাথে। রাজপুত্র আর জাদুকরেরও নেমন্তন্ন ছিল সেদিন। তোমাদেরকেও নেমন্তন্ন করেছিল কিন্তু বলতে দেরি হয়ে গেলো একটু। এরপর যেদিন আবার এমন মহাভোজ হবে নিয়ে যাবো তোমাদের আর সারাদিন খেলা করবো এলি ,বেলি আর রাজকুমারের সাথে। কথা দিলাম বন্ধু।


Rate this content
Log in