রূপকথা ।
রূপকথা ।
অনেক অনেক দিন আগের কথা। চীন দেশে লিয়াং নামে এক রাজা ছিল। সে তার চার ভাই দের মধ্যে সব থেকে বড় ছিল। ভাইদেরকে নিজের ছেলের মত ভালবাসত অথচ ভাইরা প্রকাশ না করলেও মনে মনে লিয়াংকে খুব হিংসে করত। আর সুযোগ খুজত লিয়াং এর ক্ষতি করার। রাজা হিসেবে লিয়াং ছিল শান্তিপ্রিয় ও প্রজাবৎসল।
জিনজিং রাজা লিয়াং এর এক মাত্র কন্যা। ছোট্ট ফুটফুটে ফুলের মত সুন্দরী ও বাবা মায়ের চোখের মণি। জিনজিং এর একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। ছোট থেকেই সে পশু, পাখির ভাষা বুঝতে পারত আর তাদের সাথে কথা বলতে পারত।
একদিন লিয়াং এর ভাইয়েরা দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়ে লিয়াং আর তার স্ত্রীকে দূরে অনেক দূরে একটা নির্জন দ্বীপে বন্দী করে রাখে। ছোট্ট জিনজিং ঘুম থেকে উঠে বাবা মাকে দেখতে না পেয়ে কান্নাকাটি করে। লিয়াং এর ভাইরা মানে তার কাকারা কোন মতে তাকে ভুলিয়ে রাখে। জিনজিং একে তাকে জিজ্ঞেস করে, বাবা মায়ের খোঁজ করে। কেউই তাকে সঠিক খবর দিতে পারে না। পড়াশোনা, সংগীত চর্চা, অস্ত্র শিক্ষার পর অবসর সময়ে বাগানে ঘুরে বেড়ায়। সে কাঠবিড়ালী কে বলে,......
----- 'আমার বাবা মা কে দেখেছো?'
-----' না গো জিনজিং, তবে কোন খোঁজ পেলে তোমায় জানব।'
মন খারাপ করে সে প্রায় রোজই একে একে বাগানের প্রজাপতির, মৌমাছি, পিঁপড়ে, ফড়িং ….সব্বাইকে জিজ্ঞেস করে। জিনজিং এর এই কষ্ট দেখে তারাও কষ্ট পায়।
এক সময় বসন্ত শেষ হয়ে শীতল হওয়া বইতে শুরু করে। তার সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে আস্তে শুরু করে বিভিন্ন বিদেশী পরিযায়ী পাখির ঝাঁক।
এদিকে লিয়াং এর ভাইরা নিজেদেরকে রাজা বলে ঘোষণা করে। প্রজাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন আরাম্ভ করে।
জিনজিং একদিন বাগানের পশ্চিমে যে বিশাল জলাশয় আছে সেখানে যায়। সে পরিযায়ী পাখিদের থেকে জানতে পারে তার বাবা মা কোন এক নির্জন দ্বীপে বন্দী হয়ে আছে।
সে বাড়িতে গিয়ে চিঠি লেখে আর পরিযায়ী পাখিদের বলে যেন এই চিঠি বাবাকে দেয়।
ঠিক এক বছর পর আবার সেই পরিযায়ী পাখিরা এলে জিনজিং তার বাবার সংবাদ জানতে পারে। এভাবেই প্রতি বছর জিনজিং তার বাবা মায়ের সংবাদ পায়। দেখতে দেখতে আঠের টা বসন্ত পর করে ফেলে জিনজিং। এর
মধ্যে সে পড়াশোনা, অস্ত্রবিদ্যায় সংগীতে দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছে। তীরের বেগে ঘোড়ায় চড়ে এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে ছুটে ফেরে। একদিন ছুটতে ছুটতে নদীর তীরে এসে পৌঁছয়। সেখানে একটা বড় মাছের সাথে আলাপ হয়। তার পিঠে চড়ে তিন দিন পর সেই নির্জন দ্বীপে পৌঁছে যায়। জিনজিং বাবা মাকে উদ্ধার করে দেশে ফেরে আর সাথে নিয়ে আসে ওই দ্বীপের সব হিংস্র জন্তুদের। এ কাজে নদীর বড় বড় মাছেরা যথেষ্ঠ সাহায্য করে। লিয়াং কে দেখে দ্বীপের হিংস্র জন্তুদের সাথে নিজের দেশের জঙ্গলের জন্তু জানোয়ার ও যোগদান করে।
লিয়াং এর নেতৃত্বে জিনজিং তার কাকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। হাজার হাজার ওই সব হিংস্র জন্তু জানোয়ারের সাহায্যে অনায়াসেই সে তার দুরাচারী কাকাদের পরাস্ত করে বন্দী করে ফেলে।
দেশের মানুষ তার প্রিয় রাজা লিয়াংকে ফিরে পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। জিনজিং ও বাবা মা আর প্রিয় বন্ধুদের সাথে আগের মত খুশিতে দিন কাটাতে থাকে।
*****************************