পাঁচ টাকার গল্প
পাঁচ টাকার গল্প
-"দাদুভাই, মুখটা শুকনো কেন? মা বকেছে?"
মুখ ভারী করে সন্তু উত্তর দিল -" হ্যাঁ |"
-" কিন্তু কেন দাদুভাই? তুমি কি আবার কোনো দুষ্টুমি করেছো? "
-"না, শুধু পাঁচটাকা চেয়েছিলুম, ঘুগনি খাবো বলে!"
বিছানায় শয্যাগত বছর সত্তরের বৃদ্ধ শঙ্কর চ্যাটার্জীর হাতে সময় বেশি নেই! দুই চোখের কোণে সাদা ক্লেদ জমে আছে খানিক | দুর্বল হৃদপিন্ডের ক্ষীণ দপদপ শব্দ শুনলে বোঝা যায় তাঁর প্রাণ যেন আটকে আছে কোনো এক স্মৃতির হাত ধরে |
শঙ্করবাবু আস্তে আস্তে উঠে বসার চেষ্টা করলেন | দুর্বল, রক্তহীন হাতটাকে অতি কষ্টে সামনে বাড়িয়ে তাঁর নাতির সামনে ধরে নাড়াতে নাড়াতে বললেন -" দাদুভাই, আমার বালিশের নিচে একটি থলে রাখা আছে | আমায় ওটা দেবে? "
সন্তু, দাদুর কথামতো মাথার বালিশের নিচে থাকা থলেটি বের করে দাদুর হাতে দিল |
বৃদ্ধ শঙ্করবাবু, থলেটি একটিবার খুললেন | তারপর থলের মুখে একটি গিঁঠ মেরে সন্তুর হাতে দিয়ে বললেন -" এই নাও দাদুভাই | তোমার ঘুগনির পাঁচটি টাকা এর মধ্যে আছে | আর তোমাকে মায়ের কাছ থেকে বকুনি খেতে হবে না!" - বলে জোর করে হাসির চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এক বিষম খেয়ে শুয়ে পড়লেন |
বৃদ্ধ শঙ্করবাবু চোখ বুজলেন | বন্ধ দুই চোখের নিচে তিনি দেখলেন, একটি ছোট্ট ছেলে তার দাদুর কোলে বসে বেশ আনন্দ করে ঘুগনি খাচ্ছে | নিজেকে চিনতে পারার আনন্দে তাঁর প্রাণটা আজ স্মৃতির বন্ধন থেকে মুক্ত !
সমাপ্ত........
