Rima Goswami

Children Stories Horror

3  

Rima Goswami

Children Stories Horror

হিসাব যখন প্রেতাত্মার

হিসাব যখন প্রেতাত্মার

5 mins
244


পুলিশের চাকরি করতে করতে বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হতে হয় যার মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা চির জীবন মনে থেকে যায় । কথা গুলো রাজুর মামা শান্তনু সেন বললেন রাজু ও তার বন্ধুদের উদ্দেশ্য । রাজুর মামা সদ্য রিটায়ার্ড করে জঙ্গলমহল ছেড়ে কলকাতা নিবাসী হয়েছেন । উনি অকৃতদার তাই রাজুদের সাথেই থাকবেন এখন । রাজু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে এখন ফাঁকা বসে আছে তাই নিত্যদিন তার বন্ধুদের নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ির ছাদে আড্ডা দেয় । ওদের মূখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন মামা শান্তনু বাবু । রোজই সবাই ওনাকে ধরে বিভিন্ন গল্প বলার জন্য যা ওনার দেখা । আজ ও সবাই ছাদে জড়ো হয়ে গেছে সাথে মামাবাবু , গল্প শুরু হবে । রাজুর মা সবাইকে গামলা করে মুড়ি , আলুর চপ , পিঁয়াজ , লঙ্কা এসব দিয়ে গেছেন । এর পরও গল্পের ফাঁকে মাঝেমাঝে চায়ের অর্ডার হবে ওদের আর রাজুর মা নীনা হাসি মুখে কেটলি নিয়ে হাজির হবেন । আজ সবাই কিছু অন্য রকমের গল্প শুনতে চাইছিল , রোজ যেমন খুনি চোর এসবের গল্প হয় তেমন না একটু অন্য কিছু । মামাবাবু বললেন ভূতের গল্প শুনবি রে ছোকরার দল ? হিসেবী ভূতের গল্প । সবাই হা হা করে উঠলো , একবাক্যে রাজি । মুড়ি খেতে খেতে শুরু করেছে মামা গল্প যেটা ওনার ভাষায় বলি ........


তখন সদ্য সদ্য চাকরিতে ঢুকেচি জানিস ভাগ্না ! তু তখন হোসনি কো , অনেক কাল আগের কুথা টু আচেক । রাজু মাঝখান থেকে ফুট কাটে মামা তুমি দয়া করে নরমাল হয়ে কথা বলো জঙ্গলমহলের ভাষা ব্যবহার করতে হবে না , বুঝতে অসুবিধা হয় । মামা দাঁত বের করে হেসে বলল ভাগ্না অভ্যাস হয়ে গেছে রে , যাই হোক শুরু করি আবার । সে সময় আমি যুবক , রক্ত টগবগ করে ফুটছে । চাকরি পেয়ে জয়েন করলাম জয়দেব কেন্দুলি বলে একটা জায়গায় । অজয় নদীর ধারে একটা মাটির বাড়ি তে থাকার ব্যবস্থা হলো আপাতত । আমি আর নিকুজি বলে দুজন থাকতাম ওই ঘরটায় , রেঁধে খাবার মুরোদ ছিল না তাই পাশে এক চাষার ঘর ছিল তার বউ আমাদের রেঁধে দিত আমরা টাকাও দিতাম আবার বাজার ও করে দিতাম । ওই গ্রামের চাষা ওই দম্পতির কাছে আমি আজও ঋণী জানিস ভাগ্না ? আমাদের পেটে ভাত ওদের দয়াতেই সেসময় জুটেছিল আর একদিন প্রাণ ও ওনারাই বাঁচিয়ে ছিলেন । নিকুজির আসল নাম ছিল নিকুঞ্জ দোলুই । খুব ভীতু ছিল , আমার আন্ডারে হাবলদারের কাজ করতো ও । তখন শীতকাল , অজয়ের কনকনে হওয়া দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে । সেদিন রাতে আমরা রাতের খাবার খেয়ে শুতে যাবার যোগাড় করছি । এমন সময় দরজায় টোকা দিলো কেউ , প্রথমে ভাবলাম হওয়াতে আওয়াজ হচ্ছে । নিকুজি কে বললাম কি হে বাছা শুনতে পাচ্ছ ? দেখো এবার গিয়ে বাইরে কেউ দরজার কড়া নাড়ছে কিনা ! ও বললো মাফ করে দেন দাদা আমি পারবক লাই । এই ভর রাতদুপুরে আমি এই নিঝুম পুরীতে বসে আছি চাকরির লগে । আমি দোর খুলবক নাই , আপনার দরকার থাকবেক আপনি খুলুন । এর মধ্য আরেকবার টোকা পড়লো , অগত্যা আমি খুলতে গেলাম । দরজা খুলে দিলাম সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের ওসি রত্নাকর বাবু । এত রাতে আপনি এখানে দাঁড়িয়ে সাহেব ! আমি অবাক হয়ে বললাম , এর মধ্যে নিকুজি ও সাহেবের নাম শুনে এগিয়ে এসেছে । সাহেব বললেন সেন তুমি আর নিকুজি আমার সাথে চলো এখুনি একবার । হ্যাঁ বা না বলার অধিকার নেই তাই লুঙ্গিটা পাল্টে বেরিয়ে পড়লাম ওনার সাথে নিকুজি ও চললো একরাশ অনিচ্ছা নিয়ে । আমাদের কুঁড়ে থেকে বেরিয়ে আসতেই কেমন একটা সোঁদা ঠান্ডা বাতাস মুখের উপর ঝাপটা মেরে গেল । পাশে নদী বয়ে চলেছে আপনমনে । কূল কুল করে শব্দ যেন প্রমান দিচ্ছে পৃথিবীটা এখনো বেঁচে আছে । মাটির সাঁকো পেরিয়ে যাবার সময় নিকুজি আমাকে আচমকাই জোরে ধাক্কা দিলে আমি প্রায় পরেই যাচ্ছিলাম । রাগে পিছন ফিরে ওকে দুটো গাল পারতেই যাচ্ছিলাম এমন সময় আমি যেটা দেখলাম আমার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল । নিকুজির পিছনে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রেত , ভয়াল এক গলিত চর্ম অস্থিময় প্রেত যে আমাদের ওসি সাহেব সেজে ছলনা করে আমাদের ঘর থেকে বের করে এই মাঝ নদীতে সাঁকোর উপর পর্যন্ত এনেছে । আমি কিছু করবো বা কিছু ভাববো তার আগেই আমার সামনে ওটা নিকুজির ঘাড় মটকে ওকে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিলো । আমি বুঝে গেছি ততক্ষণে আমার সাধ্য নেই এর সাথে লড়াই করার আর এ এই মাঝ নদীতে নিজের রূপে এসেছে মানে এখানেই ও সবথেকে বেশি শক্তিশালী তাই আমাকে নদী পার করে যেতেই হবে না হলে মরণ নিশ্চিত । আমি কোনদিকে না দেখে ছুটলাম মুখে রাম নাম জপে যাচ্ছি অনবরত । কর কর করে বিদ্যুৎ চমকে উঠল , দমকা হাওয়া বইছে এত যে পরে যাবার মত অবস্থা তবে আমি হাল ছাড়িনি আর একবারও পিছনে ফিরে দেখিনি । পিছনে মৃত্যু যেমন এগিয়ে আসছে আসুক বারবার ঘুরে তার গতি মাপতে গেলেই মৃত্যু অবধারিত । নদীটা পেরিয়েই জয়দেব এর মন্দির , ওই মন্দির পর্যন্ত পৌঁছেই ধপ করে পড়ে গেলাম চোখ বন্ধ হবার আগে দেখলাম ওই প্রেত সাঁকোর শেষ যেখানে হয়েছে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে তার দুচোখ ভাটার মত জ্বলছে । যেন এপারে আসার অনুমতি তার নেই । আমি আর পারলাম না মূর্ছা গেলাম । সকালে জ্ঞান ফিরে আসে আমার দেখি মন্দিরের দাওয়াতে শুয়ে আছি আমি । জানতে পারি নদীর ওই পারে ওই কুঁড়ে ঘরে একসময় থাকত এক মুচি , যাকে পুলিশের লোকেরা ধরে নিয়ে যায় চুরির অপরাধে তার পর মাঝ রাতে ওই নদীর সাঁকোর মাঝ বরাবর এনে নির্মমভাবে হত্যা করে ফেলে দেয় অজয়ে । তার পর ওই কুঁড়েতে কেউ থাকেনি , বহুদিন পর পুলিশ এসে ওখানে থাকতে শুরু করলে জেগে ওঠে ওই অতৃপ্ত আত্মা । হিসেব এর কাঁটা সমান সমান করার জন্য সে বেছে নেয় অমাবস্যার রাতকে আর মাঝ নদীতে সাঁকোর উপর এনে আমাকে আর নিকুজিকে মারতে চায় । সে নিকুজিকে মেরে আধা সফল হলেও আমি একটু জন্য হাতছাড়া হয়ে যাই , ওদেরও সীমা অতিক্রম করার অনুমতি নেই আর ওর সীমা ওই সাঁকো পর্যন্তই । আমি বুঝি ওই কুঁড়েতে না থাকলেও আমি ওর শিকার তাই আমাকে ও ঠিক আবার তাল বুঝে হামলা করবে তাই তাড়াহুড়ো করে ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাই জঙ্গলমহল । যতদিন পর্যন্ত বেঁচে আছি কোনভাবেই আমার জয়দেব এর ওই অজয় নদীর সাঁকো পর্যন্ত যাওয়া চলবে না । কারণ পুলিশের করা এক অপরাধের জন্য ওই প্রেত আমাকে শাস্তির জন্য একবার যখন বেছে নিয়েছে সুযোগ পেলে ও আর হাতছাড়া করবে না । তো আর কি এই হলো এক অন্যরকম গল্প ভাগ্নে , হিসাব রক্ষণ এর গল্প ।

সেদিন মামা গল্প শেষ করে শুতে চলে গেল আমাদের আসর ও ভঙ্গ হলো । মামা রাতে কিছু খেলোও না হয়ত সেই নিকুজির জন্য মামার মনটা খারাপ ছিল ।



Rate this content
Log in