STORYMIRROR

Dr.Sanjoy Kumar Mallick

Others

2  

Dr.Sanjoy Kumar Mallick

Others

আমাদের ভুলি খুবই দুশ্চিন্তায়

আমাদের ভুলি খুবই দুশ্চিন্তায়

4 mins
205


সমস্যা নানা ধরনের এসে হাজির হয়।এমনিতেই করোনা, সামাজিক দুশ্চিন্তা, হিংসা-প্রতিহিংসা নিয়ে দিন কাটছে।আর এক সমস্যা এসে হাজির হয়েছে।বাড়িতে একটি পোষা কুকুর আছে,আমরা তাকে ভুলি বলেই ডাকি।ভুলি,বলে একটা ডাক দেওয়ার অপেক্ষা, যেখানেই থাক এক ছুটে লেজ নাড়তে নাড়তে সামনে এসে হাজির হয়।সারা রাত্রি দরজার সামনে না হয় গোয়াল ঘরে আশ্রয় নেয়।

কিন্তু ভুলিও এখন শান্তিতে নেই।সেই সঙ্গে আমরা পাড়ার সবাইও শান্তিতে নেই।


   গোয়াল ঘরে আশ্রয় নেয় বললে ভুল,প্রভুভক্ত টি সারারাত্রি বাড়ি ও গোয়াল ঘর পাহারা দেয়।দিনে বা রাত্রিতে অচেনা কেউ আসলেই ঘেউ ঘেউ করে তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করে।অন্যের গরু রাত্রিবেলা গোয়াল ঘরে আসতে পর্যন্ত পারে না।ঘেউ ঘেউ করে সীমানা পার করে দিয়ে আসে।দু-বার ছুটকে চোরকে পর্যন্ত তাড়া করেছে ভুলি।মাঝরাত্রে ঘেউ ঘেউ করছে আর আমাদের প্রাচীরের দরজায় এসে ধাক্কা দিচ্ছে।আমি ভাবলাম,অচেনা কেউ নিশ্চই বাড়ির কাছাকাছি আছে বা ঘোরাঘুরি করছে।হাতে টর্চ ও লাঠি নিয়ে যেই দরজা খুলে বেরিয়েছি,দেখি মুখে গামছা বেঁধে একজন দাঁড়িয়ে আছে।আমি কে ?কে?বলে চিৎকার করতেই চোর দিয়েছে দৌড়।ও বেচারা ফেসে গিয়ে কুকুরের ভয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল,আমার কাছে কুকুরটা আসতেই সুযোগ বুঝে পালিয়ে গিয়েছিল।আমি কিছুটা পিছু নিয়েছিলাম কিন্তু সে ততক্ষণে পগার পার। পরের দিন শুনি, পাশের বাড়ির ধান সেদ্ধ করা কড়াই চুরি হয়ে গিয়েছে।একবার বাড়ির পাশে সাপ বেরিয়েছিল। ব্যস, যতক্ষন না সবাই জুটেছে ততক্ষণ ভুলি চিৎকার করে গিয়েছে।এমন অনেক ঘটনা আছে।


   আলুচাষের পর মাঠ পুরো ফাঁকা,জমিতে কোন ফসল নেই,সামা ঘাসে মাঠ ভরে গেছে,সবার গরু,ছাগল চরে বেড়াচ্ছে।একদিন আমাদের দুটো গাই গরু দেখি গোয়ালে নেই,শুনলাম খোলা মাঠে ছাড়া আছে।আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম,গাই গরু গুলোকে কে চরাচ্ছে?যদি অন্য গরু মারপিট করে,কোন দিকে পালিয়ে যায়? তাহলে কি হবে? মা বলল,দেখে আয় কে চরাচ্ছে! মাঠে গিয়ে দেখি রাখাল বা বাগাল হল আমাদের ভুলি।কোন গরু পাশে আসলেই ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দিচ্ছে।আমাদের গাই দুটো দূরের দিকে চলে গেলেই ঘেউ ঘেউ করে ঘুরিয়ে আনছে।অন্য লোকের একটা গরু বাঁধা আছে সেই গরুটা আমাদের গরু গুলোর দিকে এগিয়ে আসে।হালকা মাথায় মাথায় ঘষতে ঘষতে লড়াই লেগে যায়।ভুলি দাঁড়িয়ে সব দেখছিল,লড়াই লাগা দেখে দু-একবার ঘেউ ঘেউ করল,কিন্তু লড়াই থামেনি। কাজ না হতে দেখে ভুলি হটাৎ করে দুজনের মাথার ওপর দিয়ে যেই ঝাঁপ দিয়েছে এমনি দুটো গরুই লড়াই ছেড়ে দু-দিকে ভয়ে পালিয়ে যায়।


       বাড়ির পাশাপাশি মাঠেও ওর নজর থাকে,মাঠের জমিতে মজুর কাজ করলে দিনে অন্তত চারবার মাঠ- ঘর যাতায়াত করে ও।বাবা যতবার মাঠ যায় ততবার ভুলি বাবার সঙ্গে যাবেই যাবে।বাবা যতক্ষন মাঠে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ও মাঠেই থাকবে।প্রভু বলে কথা!এখন ভাইপো যেদিকে যায় ভুলি তার সঙ্গে তাকে পাহারা দিতে যায়।কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখে থাকে ।সত্যি একটি অবলা প্রাণী মানুষের আদব-কায়দা, ভাষা প্রায় সবই বুঝতে পারে। কর্তব্য পালনে থাকে অবিচল।


আমি ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমাদের বাড়িতে সবদিন কোন না কোন একটা পোষা কুকুর থাকেই, এটাও আমাদের সৌভাগ্য।ঠাকুমা বলত,আমার দাদুর একটা পোষা ভুলা ছিল।কেউ বাড়িতে এলে তাকে নির্দেশ দিলে কুকুরটি বাড়ির ভেতর থেকে মুখে করে কম্বল এনে বসতে দিত।আমাদের কয়েক বছর আগে একটা ভুলা ছিল তাকে আমরা কালু বলে ডাকতাম।তাকে বাইরে যেতে বললে সে নিজেই প্রাচীরের দরজা খুলে বাইরে যেত, বেরোনোর পর দরজা লাগিয়ে দিল।


    সেই ভুলি এখন পড়েছে মহাবিপদে।বিপদের নাম ভাদ্র মাস।সারা দিন-রাত্রি প্রায় আটটা ভুলা নামক আপদ অন্য পাড়া থেকে এসে হাজির হয়েছে।ভুলি ওদের জ্বালায় অতিষ্ট।যেদিকেই যায় ওকে হয়রান করে মারে।আর আমারাও দিনরাত্রি কুকুরের চিৎকার, ঝগড়াতে অতিষ্ঠ।ভুলিও অতিষ্ট হয়ে প্রাচীরের দরজার কাছে এসে চিৎকার করতে থাকে।বারবার বাড়ির কাউকে দেখলেই ছুটে কাছে পালিয়ে আসে।আর পাগলা কুকুরগুলো কে ঢিলিয়ে, ভয় দেখিয়ে কিছুতেই খেদানো যাচ্ছে না।একটা খেদালে আর একটা এসে হাজির হয়।কখনও আবার একসাথে পাগলা ভুলার দল হাজির হয়।কোন ভয় দেখানোকেই ওরা মানছে না।সিফিলিস রোগে শরীর বা মন আক্রান্ত হলে যে কেউই এমন দিশাহারা হয়ে যায়।কোন ভয় দেখানো,মানসন্মানকে ওরা পরোয়া করে না।এদিকে মারতেও কেমন লাগছে,ফলে ওদের মেরেও তাড়াতে পারছি না।আর ভয় দেখানো কে তো ওরা তুচ্ছজ্ঞান করছে।এমনও হচ্ছে রাত নাই দিন নাই লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।সে যতক্ষন কে ততক্ষণ,লাঠি রেখে বাড়ি ঢুকলেই কুকুরের উৎপাত শুরু।এদিকে ভুলি চারিদিকে ছুটে বেড়ায়।যৌন নির্যাতনে ওর যৌনাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত নিয়মিত ঔষধ খাওয়াতে হচ্ছে। নিজেকে বাঁচাতে ও মাটি খুঁড়ে গর্ত করে তাতে বসে থাকে।কয়েকদিন যাবৎ কোন কিছুতেই জ্বালাতন থেকে ও রক্ষা পাচ্ছে না।অগত্যা রাত্রি প্রায় একটার সময় উঠে ওকে আমাদের আর একটা বাড়ির প্রাচীরের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দরজায় চাবি লাগাই। ভুলি এমনিতে আমাদের মেন বাড়ির প্রাচীরের ভেতরে প্রবেশ করতে চায় না।অগত্যা পাশে থাকা আমাদের আর একটা বাড়ির প্রাচীরে ডেকে ভেতরে রেখে চাবি লাগাতে হয় তবে পাগলা ভুলার দল চুপ করে পালিয়ে যায়।সারা রাত্রি শান্তিতে ঘুমানো যায়। আর কোন চিতকার চেঁচামেচি নেই।সব শান্ত। এভাবেই এখন ভুলি নিয়মিত প্রাচীরের ভেতর থাকবে যতদিন না ভাদ্র মাসের পরিবেশ নষ্ট হয়।


    এ এক মহাসমস্যা,স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানো,

ভুলির নিজের মতো করে জীবন কাটানোকে ভাদ্র মাসের বিকৃত কাম রোগে আক্রান্ত ভুলার দল গুরুত্ব দিচ্ছে না।তার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে তার স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করছে ও তার আশ্রয়দাতাদের,পাড়ার লোকের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। হালকা শাসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বরং আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠছে।এদিকে

মারধোর করলেও ভুলাদের সাপোর্টাররা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেবে। কামড়ে দিতেও পারে।তাতেও মহাবিপদ।অগত্যা সব দিক ভেবে ভুলির নিরাপত্তার জন্য ভুলিকেই নিরাপদ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করতে হল বা গৃহবন্দি করতে হল।আজ দেখলাম ওর দুই চোখের কোনে জল গড়াচ্ছে।

এই হচ্ছে বাস্তব অবস্থা।



Rate this content
Log in