Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Indrani Bhattacharyya

Children Stories Comedy Horror

4.7  

Indrani Bhattacharyya

Children Stories Comedy Horror

আলাপ

আলাপ

10 mins
22.9K


"এই যে মশাই , কলম বাগিয়ে আমাদের নিয়ে মস্করা হচ্ছে বুঝি! "খুব আস্তে কিন্তু বেশ তীক্ষ্ম পিন পিনে সুরে মনে হলো কানের কাছে কেউ যেনো হঠাৎ কিছু বলে উঠলো। ডাম্বেল লিখতে লিখতে পেনটা একটু থামিয়ে মনের ভুল ভেবে আবার শুরু করলো লেখা। প্রতিযোগীতার নিয়ম মোতাবেক কালকের মধ্যেই যে জমা করতে হবে ভূতের গল্পটা। মন দিয়ে কলম চালাতে চালাতে আবার কিছুক্ষণ পর সেই একই সুরে কানে এলো কথাগুলো -" ইঃ, সাহস দেখো ছেলের। এই রেতের বেলা হিসি করতে গেলে পাড়াসুদ্ধু লোক হেঁকে ডেকে নিয়ে যায় আর এখন কিনা যেই প্রতিযোগীতার গন্ধ পেয়েছে ওমনি গল্প লিখবে বলে সেই আমাদের নিয়েই টানাটানি শুরু করেছে।" এবার বেশ রাগ হলো ডাম্বেলের। কথাগুলো এক্কেবারে সত্যি হলেও এই ভাবে জোরে জোরে কেউ বলে নাকি। যতই হোক তার তো একটা মান সম্মান আছে নাকি! আজ বাদে কাল সে ক্লাস সিক্সে উঠবে। তাছাড়া বারবার লেখায় এইভাবে বাঁধা পড়ায় ডাম্বেল বিরক্তও হল খুব আর বলতে বাঁধা নেই, সামান্য এক চিমটে ভয়ও হলো মনে। কারণ ঘরে যে সে আর ঠাকুর্মা ছাড়া আর তৃতীয় কেউ নেই। ঠাকুর্মারও এখন নাক দিয়ে হুরহুর, ভুসভুস নানান শব্দ খেলা করছে। তাহলে কে তাকে এই মাঝ রাত্তিরে জ্বালাতন করছে? সে যা শুনলো, তেমন কেউ নয় তো?


যাই হোক, মনের ভয় গোপন রেখে সামনে রাখা আলোটা খানিক বাড়িয়ে দিয়ে ডাম্বেল মশারির সেই অন্ধকার কোনার দিকে তাকিয়ে বেশ সাহস করে ছুঁড়ে দিল প্রশ্নটা - "কে , কে ওখানে? সাহস থাকে তো সামনে এসো বলছি" । ওমনি হেসে কুটিপাটি খেয়ে সেই অদৃশ্য অনাহুত অতিথি আবার বলে উঠলো "তোমাকে কে বলেছে, আমরা আলো দেখলে ডরাই? আমাদের আলোতে দিব্যি ভালো লাগে, বেশ চনমনে লাগে শরীর, মন। কেবল তখন তোমাদের চোখের সামনের আঁধার কেটে গিয়ে মনের ওপর পাথরের মত চেপে বসা ভয়টা হালকা হয়ে যায় ভেবে তোমরা ভাবো আমরা বুঝি ভয় পেয়ে পালিয়ে গেছি"। ডাম্বেল এবার ভয় পেতে গিয়েও বেশ অবাক হয়ে বলল - "তা কি করে হয়। সবাই তো বলে আলো ভূতেদের যম! " সেই আগন্তুক তক্ষুনি বেশ ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো- " ওমনি সবাই বললেই হল বুঝি ! সব বানানো গাঁজাখুরি গপ্পো। আমরা আলো - আঁধারে সবেতেই সব সময় থাকি। কখনো তোমরা দেখতে পাও, কখনো পাও না। ঠিক যেমন দিনের বেলা তোমরা আকাশে চাঁদ নক্ষত্র কিচ্ছুটি দেখতে পাও না। তা বলে কি দিনের বেলায় তারা আকাশ থেকে উবে যায় নাকি? এই যেমন তুমি আলো বাড়ানোর ফলে তোমার মশারির কোণের অন্ধকার পাতলা হয়ে গিয়ে আমার ছায়াটা কেমন আড়াআড়ি ভাবে দোল খাচ্ছে দেখো।" ডাম্বেল শুনেই তড়াক করে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো সত্যি তো! একটা ঝুলের মত কিছু যেন ঝুলছে মশারির সেই আলো - আঁধারি কোনে। ছায়াটা আবার দুলে দুলে বলে উঠল - " কি, এবার আমার কথা বিশ্বাস হলো তো ছেলে? আমি তো এতক্ষন অন্ধকারে মিশে ছিলাম। তাই গলা শুনতে পেলেও দেখতে পাওনি আমায়। যাই হোক । এবার আসল কথা বলো দেখি। ভূতেদের নিয়ে এরকম অদ্ভুতুড়ে গপ্পো কেনো লেখ বলো তো তোমরা? আমরা কি সত্যি এতো খারাপ? তোমরা যেমন আমাদের দেখে ভয় পাও, আমরাও কিন্তু তোমাদের ভারি ভয় পাই। মোটেই দরকার না পড়লে তোমাদের ছায়া মাড়াতে চাই না। আমি নেহাত পুঁটি ভুত। তোমার মতই বয়সে ছোট বলে সাহস একটু বেশি। তাই তো অনেকদিন ধরে তক্কে তক্কে থেকে আজ সাহস করে আলাপটা সেরেই ফেললাম।"

 ডাম্বেলও ততক্ষণে ভয় কাটিয়ে খানিক স্বাভাবিক হয়েছে। কেনো জানি পুঁটি ভুত হওয়া সত্ত্বেও পুঁটিকে দেখে আর তার কথা শুনে মোটেই ভয় লাগছিল না তার। ভুতের সাথে গল্প করতে তারও বরং বেশ মজাই লাগছিল। নিজেকে বেশ বীরপুরুষ গোছের কিছু একটা মনে হচ্ছিল। 

কথায় কথায় কিছুক্ষণের মধ্যেই গল্প জমে উঠল। ডাম্বেল এবার পুঁটি ভূতকে তার ভুতুড়ে জীবন সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করবে বলে ভাবলো। বলা তো যায় না। এমন সুযোগ তো আর সচরাচর আসে না। কখন কোন কথা লেখালিখির সময় কাজে লেগে যায়, তা কে বলতে পারে। ডাম্বেল ছোট হলে কি হবে, ছোট থেকেই গল্প লেখার হাত খুব ভালো। এর মধ্যেই ছোটদের কিছু পত্র -পত্রিকায় ডাম্বেলের কিছু লেখা বেরিয়েছে। সেই মত ডাম্বেল সবে পুঁটিকে প্রশ্ন করতে যাবে, তার আগেই পুঁটি ভুত তিড়িং করে খানিক লাফিয়ে উঠে বলে উঠলো - " আহ্, কি দারুণ গন্ধ গো। মনে হচ্ছে টেবিলের ওপর রাখা ওই বাটিটার থেকে আসছে "। ডাম্বেলের শুনে খুব মায়া হল। তাড়াতাড়ি খেজুর গুড়ের তৈরি দুধ পুলির বাটিটা পুঁটির দিকে এগিয়ে ধরে বললো " ইশ, বেমালুম ভুলে গেছিলাম। কথা বলতে বলতে খাবার কথা জিজ্ঞেসই করা হয়নি তোমাকে। তুমি নিশ্চয়ই অনেকক্ষন আগে খেয়ে বেরিয়েছ? খিদে তো পাবেই। আসলে আজ তো পৌষ সংক্রান্তি ছিল। ঠাকুমা তাই দুধ পুলি করেছিল। আমি অল্পই খেয়েছি। বেশিটাই রয়েছে এখনও। তুমি চাইলে খেতে পারো বন্ধু"। বলার সাথে সাথে ডাম্বেলের মনে হল যেন একটা ছোট সরু বিনুনির মত ছায়া সুড়ুৎ করে মশারির ফাঁক গলে এগিয়ে এলো বাটিটার দিকে। 

পুঁটি ভুত বাটিটার দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা নিশ্বাস টেনে বলল - " আঃ, কতকাল পর খেলাম। খাবার তো নয়, যেনো অমৃত। সেই যখন বেঁচে ছিলাম তখন একবার- দুবার মায়ের হাতে খেয়েছি। ভাগ্যিস, তোমার সাথে পরিচয় হল আজ। না হলে এ জিনিস কি আর কপালে জুটত!" ডাম্বেল বাটির দিকে তাকিয়ে বলল - " কিন্তু তুমি খেলে কই। খাবার তো সেই পড়েই আছে একই ভাবে"। পুঁটি বললো- " ধুৎ, কি যে বলো না তুমি! আমরা কি আর তোমাদের মত গপগপিয়ে খেতে পারি? ভুত কিনা, তাই আমাদের খাওয়া ওই বাতাসে নিঃশ্বাস টেনেই হয়। আমরা খিদে পেলে ওই ভাবেই পোলাও -কোরমা -বিরিয়ানি জিভেগজা গন্ধ শুঁকে খাই"। ডাম্বেল কথার মাঝেই প্রশ্ন গুজে বললো -" ঠিক ধরেছি। তোমাদেরও তাহলে আমাদের মতোই খিদে পায় বলো?" পুটি বললো -"পাবে না কেনো বন্ধু? ভুত বলে কি আর মানুষ নই? ইল্লী আর কি! মাঝে মাঝে এমন এমন প্রশ্ন করছো যে পেটে সুড়সুড়ি দিয়ে হাসি পাচ্ছে।" ডাম্বেল ফের পুঁটিকে মাঝ পথে থামিয়েই রাগ রাগ করে বললো - "হ্যাঁ, তোমার তো দেখছি আমার সব কথা শুনলেই হাসি পাচ্ছে। কিন্তু ভেবে দেখেছো কি, হাসির কথা তো তুমি বললে! তোমরা আবার মানুষ হলে কবে থেকে শুনি?" পুঁটি বেজায় দুঃখ পেয়ে বলল - "এ আবার কোন দেশীয় কথা বন্ধু? মরে গেলে বুঝি মানুষ আর মানুষ থাকে না? এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি ইস্কুলে পড় কি করে বলো তো?" ডাম্বেল ভেবে দেখলো যথেষ্ট যুক্তি আছে পুঁটির কথায়। সে তখন পুঁটিকে স্বান্তনা দিয়ে বলল - " আসলে ভূতেদের সম্পর্কে বড়রা সবাই এমন ভয় দেখায় আর গল্পের বইগুলোতেও তেমনই সব অদ্ভুতুড়ে কান্ড কারখানার কথা লেখা থাকে কিনা। তাই তো না বুঝেই সন্দেহ করেছিলাম তোমার কথায়। ঘাট হয়েছে আমার। এতদিনে বুঝলাম তোমরাও মানুষ "। পুঁটি এবার খানিক শান্ত হয়ে গাল খানিক ফুলিয়ে বলল - "আলবাত্ মানুষ। শুধু বেঁচে নেই, এই যা। বরং মানুষের মধ্যেই আজকাল অনেক অমানুষ দেখি। এই তো, দিন কতক আগে আমাদের পাড়ায় তোমাদের মত দেহধারী মানুষ হবার টিকিট বিলি হচ্ছিল। এছাড়া গত অমাবস্যায় হওয়া লটারিতে জীবন্ত মানুষ হবার লিস্টে যে দু চার জনের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছিল তার মধ্যে আমার নামও উঠেছিল। আমি তো শুনেই সেই প্রস্তাব তক্ষুনি নাকচ করে দিয়েছি। এই আমি বেশ আছি। আমার পাশের নিম গাছে থাকা খুণখুনে পেত্নীর বড্ড সখ আবার দেহধারী মানুষ হবার, সাজগোজ করার, তাকেই দিয়ে দিয়েছি টিকিটখানা। ”শেষের কথাগুলো বেশ তাচ্ছিল্য সহকারে বলে খানিক বিরতি নিল পুঁটি। ডাম্বেল সে কথা শুনে বিজ্ঞের মত একটু হেসে বললো - "তুমি আসলে বড্ড বোকা বন্ধু ! সেধে কেউ ভুত হয়ে থাকতে চায়? কত কষ্ট বলো তো ! আর ওই কথাটা কিন্তু তুমি মোটেই ঠিক বলনি যে আমাদের চারপাশে বেঁচে বর্তে থাকা সব মানুষ নাকি ঠিক মানুষ বা মানুষ পদবাচ্য নয় "। পুঁটি কিন্তু হার না মেনে বরং বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল- "কে বলে ভুল বলেছি? জেনে রাখো আজকের দুনিয়ায় এটাই সার সত্য। তোমরা, দেহধারী মানুষেরা নিজেদের মধ্যেই সারাক্ষণ খালি ঝগড়াঝাটি দলাদলিতে ব্যস্ত। সব আমরা দেখতে পাই, জানতে পারি। সবাই সব বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। তুমি কি পোশাক পরবে, ঘুমোবে, খাবে, পুজো করবে কি করবে না, করলে কাকে করবে, কোন বই পড়বে, তুমি ছেলে না মেয়ে, কালো না ফর্সা সব নিয়ে সমাজের কিছু ধেড়ে লোকজনের বড্ড বেশি মাথা ব্যাথা। এদের ব্যপার- স্যাপার দেখলে বনের পশুরাও লজ্জা পায়। পশু বলাতে মনে পড়লো, আজকাল তো আবার তোমরা তাদের ওপরেও বলা নেই, কওয়া নেই, জুলুম কর, গায়ের জোর ফলাও। ছ্যা, ছ্যা , এত কিছুর পরেও নাকি আবার নিজেদের তোমরা মানুষ বলে বড়াই কর ! " ডাম্বেল লজ্জা পেয়ে বলল - " আমাদের তো অনেক নিন্দে করলে। সব যে বুঝলুম তাও নয়। হয় তো তোমার সব কথা বুঝতে হলে আরেকটু বড় হতে হবে। কিন্তু এটা বলো দেখি কোন যুক্তিতে তোমরা নিজেদের মানুষ বলে দাবী করো?" পুঁটি বেশ দরাজ কণ্ঠে বলে উঠলো - " শোনো তবে। আমরা হলেম গে সত্যিকারের মানুষ। শুধু বেঁচে নেই এই যা। আমাদের সবার একটাই দেশ। মাঝে কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই। যে যার মত খুশি থাকে, যার মত খুশি খায়, যেখানে খুশি যায়। কোথাও কোনো বাঁধা নেই। সবাই সবার আত্মার আত্মীয়। সকলের সাথে সকলের প্রাণের যোগ। তবে হ্যাঁ , দেশে শান্তি বজায় রাখার প্রয়োজনে কিছু নিয়মকানুন মানতে হয় বই কি! নচেৎ আমাদের রাজামশাই কড়া শাস্তি দেন "। ডাম্বেল শুধোল- " কি সেই নিয়ম?" জবাবে বলল পুঁটি- "এই যেমন ধরো ভূতেদের মধ্যে সকলের তো চেহারা বা শক্তি সমান নয়। মামদো, ডাকিনী, ব্রহ্মদত্ত্যি বা স্কন্ধকাটার ক্ষমতা পেত্নী, মেছো ভুত, গেছো ভুত, শাকচুন্নি বা আমাদের মত পুঁটি ভুতের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু তা বলে কারণে অকারণে দুর্বলের ওপর কেউ জোর খাটাতে পারে না, সব ধরনের ভূতেরা নিরাপদে মনের খুশিতে যাতে থাকতে পারে সে ব্যাপারে সকলকে খেয়াল রাখতে হয়। জীবিত মানুষ যখন আমাদের সাথে অন্যায় আচরণ করে যেমন আমাদের বাসযোগ্য পুরনো বাড়ি, ইমারত ভেঙে ফেলে, বড় বড় পুরনো গাছ কেটে ফেলে তখন সেই সময় আমরা সবাই একজোট হয়ে বিপদের দিনে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে আবার নতুন আস্তানা খুঁজে বের করি। তা বলে বেঁচে থাকা মানুষজনকে অকারণে উৎপাত করা যায় না। যদিও রাজামশাইয়ের চোখের আড়ালে এই নিয়মের মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম হয়। তবে রাজামশাই জানতে পারলে খুব রাগ করেন , শাস্তিও দেন। তাহলেই বলো আমরা তোমাদের থেকে মানুষ বলার বেশি হকদার কিনা ? "ডাম্বেল মাথা চুলকে বললো - "কথাগুলো তো সত্যি ভেবে দেখার মত। আমার নিজেরই মাঝে মাঝে চারপাশের অবস্থা দেখে ভারি ভয় হয়। যতদিন যাচ্ছে ততই বড়রা যেনো ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কেমন মারকুটে আর ঝগড়ুটে হয়ে পড়ছে। স্কুলে যা যা শেখানো হচ্ছে তার সঙ্গে রোজের জীবনের যেনো কোনো মিলই নেই। কখনো পরীক্ষায় কে কত বেশি নম্বর পাচ্ছে তার ওজনের ভিত্তিতে , আবার কখনো কার বাড়িতে কত দামী জিনিস আছে বা কার কটা গাড়ি আছে তার হিসেব বুঝে বড়দের শেখানো বুদ্ধি মত ছোটরা বন্ধু পাতাচ্ছে সকলে। স্যার বা ম্যামরা যেনো কিছু দেখেও দেখছেন না। আমার সত্যি বলতে একদম ভালো লাগে না এসব নকল বন্ধুত্ব। তোমার কাছে স্বীকার করতে বাধা নেই, আজ তোমার সাথে গল্প করার পর আমারও খুব ভুত হতে ইচ্ছে করছে তোমার মত। আর ইচ্ছে করছে তোমার মত একজন সত্যিকারের বন্ধু পেতে যার সাথে মন খুলে কথা বলা যাবে, যাকে ভরসা করা যাবে চোখ বুজে। আমার সত্যি খুব নিজের মতো করে বাঁচতে ইচ্ছে করে আজকাল, প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে ইচ্ছে করে, একটা বড় মাঠে রোজ বিকেলে জমিয়ে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এ শহরে আর তেমন হওয়ার আর জো কই? খেলার তো মাঠই নেই কাছে পিঠে, চারপাশে খালি আকাশ ঢাকা বাড়ির সারি। এখানে আজকাল বড্ড দমবন্ধ লাগে আমার, কেমন যেন হাঁসফাঁস করে সব সময়। এই বাড়িতে ঠাকুমা ছাড়া আমার সঙ্গে গল্প করারও আর তেমন কেউ নেই। মা বাবা তো অফিসেই থাকে সারাক্ষণ। অনেক সময় রাতেও ফেরে না। সঙ্গী বলতে কিছু গল্পের বই , আঁকার খাতা, রং পেন্সিল বক্স আর মাথায় ভেসে বেড়ানো হরেক রকম হাবিজাবি গল্প যেগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে রাখি খাতায়। আসলে আমি তো তেমন মিশুকে নই । তাই স্কুলেও তেমন বন্ধু নেই। সারাদিন একলা একলা বড্ড মন কেমন করে। অনেক না বলা কথা দিনরাত দলা পাকিয়ে থাকে গলার কাছে। তাই তো একা একা আপন মনে গল্প লিখি।..."

এ ভাবেই কথা বলতে বলতে কখন যেন কেটে গেলো রাতটা। ফিকে হয়ে আসতে লাগলো বাইরের আঁধার। কাছে পিঠে কোথায় যেন ডেকে উঠলো একটা দুটো নাম না জানা পাখি। ঠাকুরমাও ঘুমের ঘোর কাটিয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলেন। আর কিছুক্ষন পরেই মোড়ের মাথার কেষ্টদার চায়ের দোকানটা খুলে যাবে। তার ধরানো উনুনের ধোঁয়ায় জেগে উঠবে সারা পাড়া। পুঁটির ছায়াটা এবার মশারির গা ঘেঁষে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো। তারপর ডাম্বেলের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো - " সত্যি খুব সমস্যা তোমার। এই সুযোগ বন্ধু। যাবে নাকি আমার সাথে, ভুতের রাজ্যে, খেয়াল খুশির দেশে? সেখানে তুমি আমার মত আরো অনেক বন্ধু পাবে আর তোমার ইচ্ছে মত সব কিছু করতে পারবে। সেখানে আমরা সবাই মিলে আনন্দ করে থাকবো। তোমার কোনো কষ্ট থাকবে না আর" । ডাম্বেল একটু ভেবে বলল - 'আচ্ছা, তবে তাই হোক। আমি বরং কিছুদিন তোমার সাথে ঘুরেই আসি নতুন দেশে। তারপর ঠাকুমার জন্য মন কেমন করলে আবার নয় ভুতের রাজাকে বলে টিকিট কেটে ফিরে আসবো এখানে। "


তারপর আর কি।


খোলা রইলো খাতা। পরে রইল কলম। আর রইল পরে ডাম্বেলের চোখ খোলা বাতিল শরীরখানা।

নতুন বন্ধু পুঁটির সাথে ডাম্বেল পাড়ি দিল একশো মজা আর দুশো খুশির দেশে, ভূতের রাজ্যে।


Rate this content
Log in