Rajkumar Mahato

Children Stories Drama Inspirational

4.0  

Rajkumar Mahato

Children Stories Drama Inspirational

আদর্শ হিন্দু হোটেল

আদর্শ হিন্দু হোটেল

2 mins
240


কোন একটা কাজে গিয়েছিলাম রানাঘাট। রানাঘাটে কাজ সারতে দুপুর হয়ে গেল। পেটে ইঁদুরের দৌড় শুরু হয়েছে ততক্ষনে। কি জানি কোন ছোটবেলায় ভুল করে হয়ত ইঁদুর খেয়ে ফেলেছিলাম, খিদে পেলেই দৌড় লাগায়‌। রেল স্টেশনে একটা ভাতের হোটেলে খেতে ঢুকেছিলাম।‌ চেয়ারে বসে যখন মেনু কার্ড‌ খুঁজছি, ঠিক‌ সেই সময় পাশ থেকে একজন আওয়াজ দিল " কি দেব বাবু?"

তাকিয়ে দেখলাম রোগা গড়নের একটা কালো লোক। বুঝলাম এই তাহলে বংশী। কথার উত্তর দিতে যাব এমন সময় পাশ থেকে একজন মহিলা এসে বললেন " বাবু ভালো ইলিশ আছে, পমফ্রেট হবে।"

অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম এ তো সেই পদ্মঝি। 

শান্ত স্বরে বললাম " না না ওসব লাগবে না। রুই কাতলা কালিয়া থাকলে দাও, পেটি দিও।"

বংশী " আচ্ছা বাবু" বলে চলে গেল। পদ্মঝিও গেল বংশীর পিছনে। 


কিছুটা দূরে তাদের রান্নাঘর। দরমা দিয়ে গড়া। হোটেলের খাওয়ার জায়গা দেখার জন্য একটা জানালা করা আছে। শুনলাম সেদিকে পদ্মঝি তুলকালাম বাঁধিয়েছে। উঠে গিয়ে দেখলাম একজন বড় একটা ডেকচিতে ডাল বসিয়ে খুন্তি দিয়ে ঘাঁটছে। মনটা আনন্দে ভরে উঠল, আচ্ছা এই তাহলে হাজারী ঠাকুর। ওই যাকে পদ্মঝি একেবারে দুচোখে দেখতে পায়না। ছাপোষা একটি লোক, মুখভর্তি কাঁচাপাকা দাঁড়ি, খালি শরীর, একটা জীর্ণ ধুতিতে বসে খুন্তি নাড়ছে, আর পদ্মঝি এর দিকে একবার করে মলিন চোখে তাকিয়ে আবার মুখ নামিয়ে নিচ্ছে। 


খাবার টেবিলে এসে বসলাম। গরম ভাত , ডাল,‌ আলু ভাজা, আর মাছের কালিয়া এল। শুরু করলাম খাওয়া। উফফ, এ যেন অমৃত খাচ্ছি। এত সুস্বাদু খাবার জীবনে কোনদিন খাইনি আমি। পেটের ইঁদুরটা শান্ত হল।


খাওয়ার শেষে প্লাস্টিকের মগের জল দিয়ে হাত ধুয়ে বললাম " কত হয়েছে?"

গদিতে বসে থাকা ধুতি পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক বললেন " আজ্ঞে দু আনা বাবু।" বুঝলাম এই বেচু চক্কোতি। 


তারপর থেকে যতবার রানাঘাটে গিয়েছি "আদর্শ হিন্দু হোটেল" খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। শেষে একদিন শুনলাম হাজারি ঠাকুর নাকি বম্বে গিয়েছেন। সেখানে তাঁর উঁচু পোস্টের চাকরি হয়েছে। এখন হোটেল তার জামাই দেখাশোনা করে। 


হ্যাঁ, ঠিক এইভাবেই হারিয়ে গিয়েছিলাম " আদর্শ হিন্দু হোটেল" এর মধ্যে। যখন‌ই ব‌ইটা খুলে হাজারি ঠাকুর, পদ্মঝি, বংশী দের পড়েছি। মনে হয়েছে, তাদের পাশে বসেই পড়ছি। হাজারি ঠাকুর খুন্তি নাড়ছে। তার মাংস রান্নার সুবাস‌ নাকে গুঁতো মারতে থেকেছে। নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে পরেছে। পদ্ম ঝি কটাং কটাং করে কটুক্তি বলছে। বেচু বাবু টাকা গুনছে। স্টেশনে চলন্ত কেন্নোর মত রেলগাড়ি গুলো এসে থামছে‌। তার থেকে নামছে যাত্রী, তারা খেতে আসছে হাজারী ঠাকুরের হাতের রাঁধা মাংস। হাজারী স্বপ্ন দেখছে, তার নিজের হোটেল হবে। তার স্বপ্ন পূরন হচ্ছে। এ যেন এক যুগের গল্প, এক সময় থেকে অন্য সময়ের উত্থান পতনের গল্প। 


আসলে এ গল্প স্বপ্ন পূরনের গল্প। 


এই কলম এই লেখা যুগ যুগ ধরে চলছে, চলবে।


Rate this content
Log in