The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sayandipa সায়নদীপা

Children Stories

2  

Sayandipa সায়নদীপা

Children Stories

আদরের ভাগ(তাতাইয়ের গল্প-৬)

আদরের ভাগ(তাতাইয়ের গল্প-৬)

5 mins
737


---- এই তাতাই কি হয়েছে তোর?


---- কিছু না।


---- কিছু না বললেই হল? সকাল থেকে দেখছি মুখ গোমড়া করে বসে আছিস!


---- ধুরর কি যে বলিস না!


---- আচ্ছা শোন না পিচাইকে নিয়ে এই ছুটিতে আমাদের বাড়ি আসবি? পিচাইকে খুব করে চটকাবো।


---- তাহলে পিচাইকে নিয়ে চলে যাস তোর বাড়ি, আমি নিয়ে যেতে পারব না। 

মেজাজে কথাগুলো বলে হনহন করে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে টয়লেটের দিকে চলে গেল তাতাই। দিঠি হতভম্বের মত তাকিয়ে রয়ে গেল দরজার দিকে। টয়লেটে ঢুকে মুখে ভালো করে জলের ঝাপটা নিলো তাতাই। সে কোনোদিনও বন্ধুদের সাথে এইভাবে কথা বলেনি, কিন্তু আজ বলল। তাতাই জানে না কেন কিন্তু আজ ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে। এটা রাগ না কষ্ট না অভিমান জানেনা তাতাই। টয়লেটের ছাদে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। আচমকাই নেমেছে বৃষ্টিটা। সোয়েটার থাকা সত্ত্বেও গা'টা শিরশির করছে। ঠাম্মি বলে শীতকালে নাকি বৃষ্টি হয়না, কই এই তো বৃষ্টি পড়ছে মুষলধারে। আসলে মন খারাপের তো কোনো সময় হয়না, সে যখন হোক আসতে পারে--- শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা…

আজ তেইশে ডিসেম্বর, দেখতে দেখতে সেই দিনটা চলেই এলো। ঠিক তিন বছর আগে যে দিনটা তাতাইয়ের সব আনন্দ কেড়ে নিতে এসেছিল। পঁচিশে ডিসেম্বর… পিচাই জন্মেছিল যেদিন। আজকাল পিচাইয়ের নাম শুনলেও মাথাটা গরম হয়ে যায় একেক সময়। এখন মাঝেমাঝেই তাতাইয়ের মনে ও যেন অদৃশ্য হয়ে আছে, এই পৃথিবীতে সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু শুধু পিচাই। স্কুল ছুটির পর আজকাল আর বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না। আগে বাড়ি গেলে মা তাতাইকে কোলে নিয়ে ওর জামা জুতো খুলে দিতেন, স্কুলের গল্প শুনতেন মন দিয়ে, তারপর নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন। ঠাম্মিও তো তখন খাইয়ে দিতেন তাতাইকে। আর এখন... ! রোজ তাতাই যখন বাড়ি ফেরে তখন দেখে মা পিচাইকে খাওয়াতে ব্যস্ত। তাতাইকে নিজে নিজেই জামা জুতো খুলতে হয়, ঠাম্মি খাবার বেড়ে দিলেও খেতে হয় নিজের হাতে। তারপর ঠাম্মি পিচাইকে নিয়ে চলে যান বেড়াতে। তাতাইয়ের দিকে কারুর নজর আছে নাকি! কিছুদিন আগেই স্কুলে একটা শব্দ শিখেছে তাতাই---- "অনাথ", যাদের মা বাবা থাকে না তাদের অনাথ বলে। তাতাইয়েরও তো আজকাল নিজেকে অনাথ মনে হয়, সব থেকেও ওর কিছুই নেই। পিচাই আবার যবে থেকে তাতাইয়ের স্কুলে ভর্তি হয়েছে ওর বন্ধুদেরও পিচাইকে নিয়ে মাতামাতি দেখার মতন। ওরা তাতাইকে দশটা কথা বললে তার এগারোটায় থাকে পিচাই, যেন তাতাইয়ের নিজের কোনো অস্তিত্বই নেই। এই পঁচিশে ডিসেম্বর পিচাইয়ের তিন বছরের জন্মদিন পালন হবে, তাতাই দেখছে আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মা, বাবার সেকি ব্যস্ততা যেন কিই না কি একটা হবে। তাতাইয়ের যদিও মনে নেই, তবুও ও ভালো করেই জানে ওর তিন বছরের জন্মদিনে এতো ধুমধাম নিশ্চয় হয়নি। আসলে তাতাইকে আর কেউ ভালোবাসেনা, এটাই সত্যিই।

 

   আজ বড়দিনের ছুটি পড়ার কথা। তার আগে আজ স্কুলে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল মাঠের খোলা মঞ্চে। কিন্তু বৃষ্টিটা এসে সব ভণ্ডুল করে দিল। স্কুলের ভেতরের হলঘরে অনুষ্ঠানগুলো করার চেষ্টা করা হলেও আগের সেই উৎসাহ আর রইল না। অনুষ্ঠান শেষ হতেই তাতাইদের একটা করে টিফিন প্যাকেট ধরিয়ে দেওয়া হল। বৃষ্টি পড়ছে তাই বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই। সব বন্ধুরা টিফিন প্যাকেটটা খুলে খেতে শুরু করে দিয়েছে, সেই সাথে চলছে দেদার আড্ডা--- কে ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাবে, কে কবে পিকনিকে যাবে এই সব হচ্ছে আলোচনার বিষয়। তাতাইয়ের একটুও ভালো লাগছেনা এই আড্ডা। ও বেঞ্চের এক কোণে বসে আনমনে টিফিন প্যাকেটটা খুলল। প্যাকেটের ওপরেই চকচকে নীল খামে মোড়া একটা ক্যাডবেরী। ওটা দেখা মাত্রই কেন না জানি তাতাইয়ের চোখের সামনে ভেসে উঠল পরশুদিনের একটা দৃশ্য। মাসিমণি এসেছিলেন ওদের বাড়ি, দু ভাই বোনের জন্য দুটো ক্যাডবেরি এনেছিলেন। পিচাই একটা বাটিতে ক্যাডবেরিটা নিয়ে খেতে বসেছিল, এতো ধীরে ধীরে খাচ্ছিল যে চকলেটটা গলে ওর গোটা মুখে মাখা হয়ে গিয়েছিল। তাও আঙুলগুলো চাটতে চাটতে বলেছিল, "কি চুন্দর চকো, এমন আমি কক্কনো কাইনি।" 

দাঁতে দাঁত চিপে প্যাকেটটা ছিঁড়ে চকলেটটায় কামড় বসালো তাতাই, আর কামড়াবার সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতরটা কেমন যেন চিনচিন করে উঠল। কিছু একটা অস্বস্তি হচ্ছে ওর, চকলেটটা খেতে কেমন যেন দ্বিধা লাগছে। সেই সাথে নিজের ওপরেই ভীষণ রাগ উঠছে তাতাইয়ের।


---- এই তাতাই ওটা তোর ভাই না?

দিয়ার কথায় চমকে উঠল তাতাই। পিচাই…! সে কি করে আসবে এখানে। তাতাইদের স্কুলের মধ্যে একই ক্যাম্পাসে প্লে স্কুল, প্রাইমারি স্কুল আর হাইস্কুল রয়েছে। প্লে স্কুলটা তো প্রাইমারির থেকে একটু দূরে। 

দিয়া বসেছে দরজার দরজার সোজাসুজি, তাই ওর কথাকে তো ফেলে দেওয়া যায়না। চকলেটটা রেখে দরজার দিকে ছুটে গেল তাতাই। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, চারিদিক বৃষ্টির দাপটে সাদা হয়ে আছে। তারই মধ্যে তাতাই দেখতে পেল একটা তিন ফুটের শরীর বুকের কাছে কি যেন একটা চেপে নিয়ে এগিয়ে আসছে এদিকে। ওর পরনে কমলা রঙের একটা গেঞ্জি… পরশু দিনই মাসিমণি এনেছিল এই জামাটা। 

"পিচাই…" অস্ফুটে উচ্চারণ করল তাতাই।

তাতাইদের স্কুল ক্যাম্পাসটা বড় বড় গাছে ভর্তি। বহুকালের গাছপালা সব। তাতাই তাকিয়ে দেখলো পিচাই এই মুহূর্তে জামগাছের তলা দিয়ে হাঁটছে টুলটুল করে, বৃষ্টির ছাঁটে এগোতে পারছেনা যেন। এদিকে জামগাছের একটা ডাল অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে। আর কিছু ভাবতে পারল না তাতাই, কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মত ছুটল সেদিকে। ওর বন্ধুরাও অবাক হয়ে বেরিয়ে এলো বারান্দায়। তাতাই ছুটে গিয়ে পিচাইকে ধরে নিয়ে সরতে গেল কিন্তু কাদার মধ্যে টাল সামলাতে না পেরে ধপ করে পড়ে গেল দুজনেই। আর সঙ্গে সঙ্গে ওদের পেছনে সশব্দে ভেঙে পড়ল জাম গাছের ডালটা। বুকটা কেঁপে উঠল তাতাইয়ের। ও টের পেলো পিচাইদের বিল্ডিং থেকে কে যেন ছাতা মাথায় দিয়ে এগিয়ে আসছে এদিকে আর চিৎকার করছে, "কি বিচ্চু ছেলে রে বাবা। আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালাল এভাবে, এক্ষুণি…"

আন্টিটার কথা শেষ হওয়ার আগেই ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠল পিচাই। তাতাই চমকে উঠে তার দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা সাদা সাদা কি যেন লেগে আছে পিচাইয়ের মুখে, গায়ে। তাতাইয়েরও জামায় লেগেছে সেটা। উঠে বসে পিচাইকে তুলতে তুলতে ধমকে উঠল তাতাই, "বৃষ্টির মধ্যে কেন বেরিয়েছিলি বল?"

পিচাইয়ের কান্নার সুর আরও চড়া হল।

"কি হল কথা বলছিস না কেন?" 

কাঁদতে কাঁদতেই পিচাই ওর আধো আধো গলায় বলে উঠল, "ওলা পেতে কলে পেট্টি দিয়েথিল, তুই পেট্টি খেতে ভালোবাছিছ বলে আনথিলাম…" এই বলে আবার জোরে কেঁদে উঠল পিচাই।

হতভম্ভ হয়ে গেল তাতাই। না চাইতেও ওরও দু চোখ চাপিয়ে জল পড়তে শুরু করল। পিচাই জানে তাতাই পেস্ট্রি খেতে ভালোবাসে বলে!!! এই দুর্যোগ উপেক্ষা করে সে নিজে না খেয়ে তার দিদিভাইয়ের জন্য নিজের ভাগের পেস্ট্রিটা নিয়ে আসছিল…!!!

নিজেকে হঠাৎ বড় ছোটো মনে হচ্ছে তাতাইয়ের। এই ভাইকেই সে হিংসা করছিল! এই ভাইয়ের ওপর সে রাগছিল মনে মনে! আর কেউ ভালো বাসুক না বাসুক পিচাই তাকে এত্তো ভালোবাসে...!!! আর এই ভালোবাসাকেই এতদিন সে গুরুত্বহীন ভেবে অবহেলা করে যাচ্ছিল। তাতাইয়ের মনে পড়ে গেল আজ থেকে তিন বছর আগে সে স্যান্টা ক্লজকে একটা জ্যান্ত পুতুল উপহার চেয়েছিল খেলার সঙ্গী হিসেবে। তার জ্যান্ত পুতুল পেস্ট্রি আর কাদা মেখে আজ বসে আছে তার সামনে, চোখ ভর্তি জল তার। দু'হাত বাড়িয়ে পিচাইকে নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরল তাতাই… এটা তার ভাই, তার নিজের ভাই… তার জীবনের সেরা উপহার, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপহার। এই ভালোবাসার কাছে বাকি সব কিছু তুচ্ছ। পিচাইয়ের ভেজা মাথায় একটা চুমু এঁকে দিলো তাতাই, "আমার কাছেও পেস্ট্রি আর ক্যাডবেরি আছে ভাই, চল দুজনে ভাগ করে খাই।"


Rate this content
Log in