জুয়ার টানে
জুয়ার টানে
রোজ রোজ তিনকোনা পরোটা বানিয়ে দিতো মা,
যতদিন ছিলাম আমি ক্লাস ওয়ান, টু, আর থ্রী।
হাতে গোনা কয়েকজন এমন স্টুডেন্টদের মধ্যে পড়ি,
লাইনে দাঁড়িয়ে গম ভাজা আর গুঁড়ো দুধ
হয়না নেওয়া, ছুটোছুটি করে তড়িঘড়ি !
কখনও সখনো কেউ সেধে দিতো অবশ্য দুধের গুঁড়ি,
কিন্তু লোভ তো ছিলো ঐ গমভাজার দিকে বরাবরই।
নেই কি আমার দাঁতের জোর একটুও!
তখনই তো আমি আখের টুকরো হাতে দিলে,
একা একাই দাঁত দিয়ে ছুলে খেতে পারি!
বুঝিনা মায়ের কি দরকার, টিফিন গুছিয়ে দেবার?
এ যেন মায়ের আমায় নিয়ে বড়ই বাড়াবাড়ি!
সকলের সাথে মিলে মিশে চলবো,
লাইনে দাঁড়িয়ে হাত পেতে গম ভাজা নেবো!
কুড়মুড় করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো,
আমার নিজের প্রাপ্য গমভাজার ভাগ নেবো,
দাঁতের জোর এভাবেই বাড়াবো।
গুঁড়ো দুধ চেটে খেতেও বেশ লাগে, বাড়িতেও আছে,
ঐ শত্রু টিফিন বক্সটা কেন যে বাবা এনেছে!
ওটাই আমার জীবন থেকে আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।
গমভাজা তো আর কোথাও পাবার উপায় নেই,
মাকে বলেছি, বলে "ওতে পেট ব্যথা হয়,খেতে নেই।"
ক্লাস ফোরে নতুন স্কুল, এখানে টিফিন আনেনা কেউ,
হাতে পাঁচ-দশ পয়সা নিয়ে কিছু কিনে খায় সকলেই।
চানাচুর, চিঁড়েভাজা, ঝাল-মুড়ি আরো কতো কি!
আমার পছন্দের ছিলো বুড়ো মতো এক বিহারী,
কাঁচের বাক্সে তার সাজানো থাকতো শোনপাপড়ি।
না, মিষ্টি খাবার লোভে নয়, যেতাম ঐ চাকার টানে,
দেখতে, ঘুরিয়ে দিলে ঘুরতে ঘুরতে তা কোথায় থামে!
পাঁচ বা দশ পয়সার শোনপাপড়ি তো পাবোই,
এখানে তো আর হারানোর কিছু নেই।
যদি কোনোদিন থামে গিয়ে পঁচিশের ঘরেই !
আড়াই হাজার বছর ধরে জুয়া খেলার নেশাটা,
মানুষের রক্তে ঢুকে গেছে বোধহয় এভাবেই!
