এক চিলতে হাসি
এক চিলতে হাসি


“রূপা...!রূপা...!রূপা...!আর যে পারি না...
এই কিন্তু শেষ!”
মনেস্ট্রির উপরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
হাঁপাচ্ছেন, বছর সত্তরের অনিমেষ।
ত্রিশ বছরের অপরূপা থমকে দাঁড়ায়,
দশ’ সিঁড়ি নীচের থেকে মুখ বেঁকায়।
“তা বললে হবে? খেলছিলাম যে বেশ!
“বুড়ো হয়েছি, তোর সঙ্গে পারবো না মা!”
ঘাড় ঘুরিয়ে, কোমরে হাত দিয়ে
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে অপরূপা,
ঠিক যেন সাত বছরের মেয়ে।
“এমা...!বাবু...আমায় ধরতে পারে না!”
মাসখানেক আগের ঘটনা…
গাড়ীতে চেপে পুরো পরিবার হয়েছিল রওনা
জিতের হাতে স্টিয়ারিং; গাড়ী ছুটছিল বেগে
পুরী যাবার রাস্তায়, ঘটলো দুর্ঘটনা।
সামনের সিটে, পাঁচ বছরের বাবু,
ছিটকে কোথায় পড়লো...
আজ অবধি তার কোন খোঁজ না পাওয়া গেল।
জিতের মৃত্যু ঘটনাস্থলে,
মা’কে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
তিনদিন তিনরাত্তির লড়াই করে
তিনিও তারার দেশে গেলেন চলে।
খবর শুনে অপরূপা হলো পাগলপারা
স্বামী, পুত্র হারিয়ে এমনিতেই ছিল দিশেহারা।
আত্মীয়-কুটুম যে যেখানে ছিল, সকলে ছুটে এল
মনের ডাক্তার দেখানোর উপদেশ দিল।
মেয়েকে নিয়ে অনিমেষ তাই এসেছেন মেঘালয়ে
মানসিক হাসপাতালে সে এখন চিকিৎসাধীন।
সারাদিন মেঘ রোদ্দুরের খেলা যেমন চলছে,
কখনো ‘বাবু’ হয়ে আবার কখনো ‘বাবা’ হয়ে
অপরূপাকে সামলাতে খাচ্ছেন হিমশিম।
মুখের এক চিলতে হাসি তবুও হারিয়ে যায় নি।
“পাগল হলেই বা! মেয়েটা তো আমার...,
সে চিনতে না পারলেও, আমি তো ভুলে যায় নি।”