ধর্ষিতার চিঠি
ধর্ষিতার চিঠি
যেদিন মাগো জন্ম নিলাম আমি তোমার কোলে,
ছোট্ট মোদের সেই পরিবার উঠলো হেসে খেলে।
ছিলাম তোমার নয়ন মনি, বাবার বুকের ধন
স্নিগ্ধ মোর সেই হাসিতে জুড়াতাম প্রাণমন।
দুধে আলতা গায়ের রঙের ছিলাম যেন পরী,
আদর করে সবাই দিলে নাম ফুলেশ্বরী।
স্কুলে যখন ভর্তি হলাম বয়স মোটে ছয়,
শিক্ষাজীবন হলো শুরু, এক বুক আশাময়।
ধীরে ধীরে হলাম বড়,স্কুলের খেয়া পার
পড়শীর সব বলল এসে, বাড়িসনি আর বাড়।
সোমত্ত মেয়ে ঘরে রেখে ডাকিস নি আর ত্রাস
সময় থাকতে মেয়েরে বাঁধো বিয়ের নাগপাশ।
মনে আছে আজও আমার বাবার চোখে আগুন
তেজে রাঙ্গা মুখশ্রী আর ক্ষোভে রাগারুণ।
আমার মেয়ে বুঝবো আমি তোমার কিসের দায়
বললে তাদের মুখের উপর সপাটে তোমার রায়।
আবার শুরু পথ চলার তোমাদের আশীর্বাদে
নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে নতুন ভোরের সাথে।
সময় খালি এগিয়ে চলে চায় না পিছু ফিরে
আমার জীবন কাটতে থাকে সুখ দুঃখের ভীড়ে।
মনে আছে সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত
পথে কোথাও নেই কো কেউ নিঝুম আধার রাত।
টিউশন এর শেষে একা ফিরছিলাম ঘরে
এমন সময় এলো আওয়াজ হিংস্র পশুর স্বরে।
কোথা থেকে চারজন এসে উদয় হলো হঠাৎ,
উচ্চ স
্বরে বলল তারা আজই করব বাজিমাত।
গলার স্বরে চিনলাম তাদের গণেশ রাজা বিজয়
এলাকার ত্রাস সবাই তারা শয়তান অতিশয়।
উল্লাসে তারা উঠল মেতে রক্ষা দিল না মোরে,
ক্ষতবিক্ষত করলো আমায় সবাই মিলে ধরে।
ব্যর্থ হলো কাকুতি-মিনতি নিভলো সকল আশা
বুঝলো না মাগো কেউ তারা এই নীরব চোখের ভাষা।
যেদিন আমার দেহ এল সাদা কাপড়ে মোড়া
নিভলো মোদের পরিবারের সকল আনন্দধারা।
বাবা হল পাথর মাগো , চোখে নেইকো জল
তোমার চোখেও দৃষ্টি শূন্য চেতন হারিয়ে সকল।
পড়শীরা সব দাঁড়িয়ে সেদিনও দেখল তামাশা।
সব দোষ মেয়েটারই ছিল দুশ্চরিত্রা বেশ্যা।
সমাজের চোখে হায় সদাই শুধু মেয়েদেরই দোষ হয়,
দুষ্কর্ম করেও সদাই রাক্ষসদেরই হয় জয়।
মাগো তুমি ভাল থেকো,ভাল রেখো বাবাকে,
তোমাদেরই ভিড়ে এখনো সে আছে,খুকু বলতে যাকে।
থাকব আমি ততদিনই যতদিন না পাই বিধান,
এমনি করে কত আর যাবে অসহায়াদের প্রাণ?
ভগবানের কাছে আজো আমি বর মাগি অহরহ
অবসান হোক তোমাদের এই যন্ত্রণা দুঃসহ।
যেদিন আমি রাক্ষসের দল উচিত শিক্ষা পাবে
সেদিন আমার শান্তি মাগো মুক্তি পাব তবে।