বিচিত্রা ও
বিচিত্রা ও


বিচিত্রা : কারে বলছ তুমি নগ্না ,
তোমার বস্ত্র নিয়ে এত গর্ব কেন ?
ওই সুন্দর খোলামকুচির আবদারের নিচে
তোমারও তো ওই শরীর
মেদবহুলা আর পিষ্ঠপ্রদেশে কেশ চুম্বন ।
একম : আহা তুমি আমি সভ্যতার
নবপাঠে পঠিনী , সাজে কেন
আদিম নগ্নরূপ , বলো সাজে কি ?
নাও পোশাক পরিয়া নাও ।
বিচিত্রা : না আজ উন্মুক্তা , মুক্তা আমি ,
আদিম ব্যবহার যে এখনও বজায় ,
তবে রূপটাকে হাওয়া , মাটি , সূর্যে
মেশাতে ক্ষতি কী হে ?
দ্বিতীয়ম : মন্দ বলে নাই বিচিত্রা কিছু ,
এ পোশাক নিয়ে গর্ব ... না ;
তা চলে না ... তবু যতটা ...
শিল্পী এলেন বোধহয় ... চল চল ।
একম : বিচিত্রা এত অবুঝ হোস না সখী ,
ঢাক ঢাক এইক্ষণে শিল্পী এসে পড়ে ।
বিচিত্রা : শিল্পী আসিলে মোর তাতে কী ?
আমি আজি ...
( শেষ হলো না বিচিত্রার কথা ,
শিল্পীর হলো আগমন ।
সবে ছুটলো শিল্পী সন্নিকটে ,
বিচিত্রা রইলো একলা একইভাবে । )
শিল্পী : আজ আমি অঙ্গচিত্র আঁকবো ,
ক্যানভাস হবে তোমরা ।
তবে ক্যানভাস ঠিক যদি না হয় ,
এই শিল্প প্রকাশ হবে না সঠিক ।
বুঝলে তোমরা ?
( রমণকাল বিনা শরীর দেখানো ,
শাস্ত্র মতে পাপ মনে করে সকলেই |
সভ্য হয়েছি , আর যাই হোক
নির্লিপ্তভাবে শিল্পীর সম্মুখে ...
সকলেই না করতে শিল্পী বিফল মনোরথ
অমনি বিচিত্রা সামনে এল ছুটে | )
বিচিত্রা : আমার নেই আপত্তি ,
তুলির সোহাগ অঙ্গময় মাখবো , আহা !
ভাবিয়া যেন শিহরণ ওঠে |
শিল্পী : কিন্তু শাস্ত্রভয় তোমার নেই ?
ওদের যেমন প্রত্যেকের আছে ...
একম : গতরাতে এইস্থানে এসেছে ও ,
আসার পর হইতেই কইছি , শোনেই না ;
বলে গায়ে কোনরূপ অলংকার দেবে না ,
আহা বলুন তো পোশাক কি অলংকার ?
বিচিত্রা : বটেই তো , অলংকারই বটে |
না সরালে তো বাসনায় জমিতো না |
বাসনাই তো আমায়
এই আলয়ে ঠেলে দিলো |
তাই আমি ...
শিল্পী : আচ্ছা বস একবার দেখে লই
ক্যানভাস হতে পারো কিনা ?
( অবশেষে তুলি হাতে বসে পড়েন ,
বিচিত্রার অঙ্গময় যন্ত্র বাদ্যযন্ত্র
কত যে আঁকা তার নাই ঠিক |
সম্পূর্ণ হলো দুটি দিন পর | )
বিচিত্রা
(উল্লসিত কন্ঠে ) : দেখো দেখো দেখো সবাই ,
তুলির রঙে আমি সেজে উঠেছি |
তানপুরা তবলা হারমোনিয়াম ...
এমনও সাজানো যায় ?
শিল্পী তুমি অতুলনীয় |
( এক আন্তর্জাতিক সংগীত সম্মেলন ,
বিদেশ হতে বহু এসেছেন অমন |
নিজে দেশের প্রতীক রূপে বিচিত্রা
প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে রয় | )
( হঠাৎ )
বাসনা
( চমকিত ) : একি বিচিত্রা , তুমি কেমনে এলে ?
এ যে সৃজন সমাবেশ , তুমি তুচ্ছ ...
কে আছ ইহাকে নিয়ে যাও |
বিচিত্রা : শোনো হে শুনো সবে
বাসনা কহে সৃজন এর কথা |
হাসালে , তুমি হাসালে প্রিয় ...
শিল্পী সাজাইছে যে এমন ,
তোমার রাগের কি বা কারণ ?
ও তুমি কি তবে মুক্ত শরীর ...
না সে আর পাবে না |
সৃজন আবরণে তা ঢেকে গেছে |
বাসনা
( উত্তেজিত কন্ঠে ) : যত নিচু জাত ঘৃণা ...
ছায়া মাড়ানোও যে মানা |
ওই আলয় তোমার সঠিক স্থান |
বিচিত্রা : শোনো হে বাসনায় সব না জ্বলে ,
না জ্বলে কামনায় |
আমি আজ নগ্না হয়েও আবৃতা ,
আর তুমি আবৃত হয়েও
ভিতরে একজন নগ্ন দন্তনখরসমৃদ্ধ পিশাচ |