বিচার(18)
বিচার(18)


এক অজানা দিনে
এক অজানা আদালতে,
এক অজানা দোষে
এক অজানা মামলা ওঠে।
বিচারপতি মাত্র দুজন
বিচার করবে তিন আসামির,
তাদের বিচার ধারা ভিন্ন মেরুর
একজন উত্তরের, অপরজন দক্ষিণের।
একে একে সব আসামি
এসে দাঁড়ায় কাঠগড়ায়,
বিচার করবেন অভিজ্ঞ দুই বিচারপতি
তাদের ভিন্ন ভিন্ন আইনের ধারায়।
প্রথমে জবার পালা
তাই জবার আর্জি শুনুন,
"জবা বিনম্র স্বরে বলল
আমি বাঁচতে চাই।
আমার যা কিছু আছে
আমি সব তোমাদের দেব,
পরিবর্তে আমি শুধু বাঁচতে চাই।
আমার শ্রেষ্ঠ লাল রঙ
তোমাদের জীবন রাঙিয়ে তুলবে,
তা আমি তোমাদের দেব,
আমি শুধু বাঁচতে চাই। "
দুই বিচারপতি শুনলেন সব
তবে বিচার হবে ভিন্ন ধরন।
এরপর দ্বিতীয় গোলাপের পালা
এবার গোলাপের আর্জি শুনুন,
"সে আরও বিনম্র স্বরে বললো
আমি বাঁচতে চাই।
আমার যা কিছু আছে
আমি সব তোমাদের দেব,
পরিবর্তে আমি শুধু বাঁচতে চাই।
আমি যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ
জগত তা মেনে নিয়েছে নত মস্তকে,
আমার যেমন রঙের বাহার
তেমনি আমার রূপের মাধুর্য্য,
আমার সুগন্ধে গোটা ভুবন বেসামাল,
আমার রূপ-রস গন্ধ যা আছে
আমি তা তোমাদের দেব
আমি শুধু বাঁচতে চাই"
দুই বিচারপতি শুনলেন সব
তবে বিচার হবে ভিন্ন ধরন।
এবার তৃতীয় আসামি ক্যাকটাসের পালা
তবে ক্যাকটাসের আর্জি শুনুন,
আমার যা কিছু আছে
আমি সব তোমাদের দেব
পরিবর্তে আমি শুধু বাঁচতে চাই।
আমার তো তেমন কিছুই নেই
তোমাদের মন জোগানোর জন্য,
আমার আছে শুধু কাঁটা
আমি তা তোমাদের দেব
আমি শুধু বাঁচতে চাই। "
দুই বিচারপতি শুনলেন সব
তবে বিচার হবে ভিন্ন ধরন।
অভিজ্ঞ বিচারপতিদ্বয়
অনেক আইনের বই দেখলেন,
অনেকটা সময় নিলেন বটে
তবে ভিন্ন ভিন্ন রায় দিলেন।
প্রথম বিচারপতি বললেন অতি শুদ্ধ ভাষায়
"অত্যন্ত ভেবেচিন্তে দেখিলাম
জবা আর গোলাপ আমারে
তাদের রূপ-রঙ রস দেবে
আমার উপভোগের জন্য,
আমার লালসা পূরনের জন্য,
আর ওই অধম ক্যাকটাস
আমারে কাটা দেবে।
ধরো ওই আসামিকে
ওকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করিলাম্। "
এবার দ্বিতীয় বিচারপতি বললেন
অত্যন্ত শান্ত স্বরে সরল ভাষায়
"তোমরা তিনজনই নির্দোষ
তোমাদের যা কিছু আছে
আমায় তা দিতে পারো।
আমি সবকিছুই উদার মনের গ্রহণ করবো।
তোমাদের তিনজনকেই মুক্তি দিলাম
তোমাদের সকলেরই বাঁচার অধিকার আছে।"
বিচারপতির চোখের জল আর বাঁধ মানলো না
ঝরঝর করে ঝরে পড়ল ধরণীর বুকে,
সবাই এবার মুক্তি পেল।
শ্রোতারা রায় শুনে বুঝলেন
প্রথম বিচারপতির কী নাম?
সেই তো জগৎ শ্রেষ্ঠ জীব
মানুষ নামের অকৃতজ্ঞ বেইমান।
আর দ্বিতীয় বিচারপতি
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পরম মাতা প্রকৃতি।।