ভূত চতুর্দশী কবিতা (প্রথম পর্ব) কলমে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ভূত চতুর্দশী কবিতা (প্রথম পর্ব) কলমে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
অন্ধকার রাতের গ্রাস, অমাবস্যার বিভীষিকা, চতুর্দশীর এই রাত যেন জেগে ওঠে এক অন্য জগতে। যেখানে মৃত আত্মাদের আনাগোনা, যেখানে অতৃপ্ত বাসনারা ডানা মেলে। কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী তাঁর ছন্দে, তাঁর কল্পনায় এই রাতকে করেছেন জীবন্ত। তাঁর "ভূত চতুর্দশী কবিতা (প্রথম পর্ব)" যেন এক প্রাচীন কাহিনীর সূচনা, যেখানে ভূত-প্রেতের এক অন্য জগৎ আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়।
কবি বলেন, এই রাতে শোনা যাক ভূতের গল্প। সে গল্পে আছে নানা ধরনের ভূত, নানা প্রকারের আত্মা। মেছোভূত, গেছোভূত, যারা তাদের পরিচিত জীবনের ছায়া ধরে ঘুরে বেড়ায়। আছে এক ভূতের সর্দার, যার আদেশে বুঝি সব অলৌকিক ঘটনা ঘটে। এদের পাশাপাশি আছে বেঁটে ভূত, মোটা ভূত, যাদের দেখে হয়তো ভয় নয়, বরং হাসির উদ্রেক হতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভয়ের উদ্রেক করে শাকচুন্নি, যারা রাতের অন্ধকারে এক অন্য রূপ ধারণ করে।
কবির এই আখ্যান শুধু ভূতের প্রকারভেদেই থেমে থাকে না, বরং তা মৃত্যুর কারণ ও তার পরবর্তী জীবনের এক অলৌকিক চিত্র তুলে ধরে। ব্রাহ্মণ যদি অপঘাতে মৃত্যু বরণ করে, তবে সে ব্রহ্মাদৈত্য হয়ে জন্ম নেয়। এ যেন এক চক্র, যেখানে অপমৃত্যু এক অলৌকিক সত্তায় রূপান্তরিত হয়। একইভাবে, মুসলিমের অপঘাতে মৃত্যু হলে, সে মহম্মদ ভূত হয়ে মাঝরাতে ঘুরে বেড়ায়। এই বর্ণনাগুলি কেবল অলৌকিকতাই নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী এক কল্পিত যাত্রার চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
অবিবাহিতা কুমারী, যার জীবন অতৃপ্ত বাসনায় ভরে থাকে, অপঘাতে মৃত্যু হলে সেও ঘুরে বেড়ায় সেই অতৃপ্তির ভার নিয়ে। পেত্নীরা, যারা শ্যাওড়াগাছে তাদের বাসা বাঁধে, অন্ধকারের ডালে ঝুলে তাদের অপূর্ণ আশাগুলি নিয়ে। এ যেন এক হাহাকার, যা রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও ভারাক্রান্ত করে তোলে।
বিবাহিতা নারী, যার জীবন অপঘাতে শেষ হয়ে যায়, সেও এক অন্য রূপে ফিরে আসে। শাকচুন্নি হয়ে তারা শাঁখা-পলা পরে, যেন মৃত্যুর পরেও তারা জীবনের কিছু চিহ্ন ধরে রাখতে চায়। কিন্তু এই সব প্রতীকের পেছনে লুকিয়ে থাকে এক গভীর অতৃপ্তি, এক অতৃপ্ত বাসনার অনবরত তাণ্ডব।
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী তাঁর লেখনীর মাধ্যমে এই ভূত চতুর্দশীর রাতকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তিনি তাঁর কবিতায় লিখেছেন, "ভূত হয় মোর পূত পেত্নীরা হয় ঝি, লক্ষ্মণ লিখিল কাব্যে ভূত চতুৰ্দ্দশী।" এই পংক্তিগুলি যেন তাঁর কাব্যের মূল সুর, যেখানে তিনি এই অলৌকিক সৃষ্টিগুলিকে এক নতুন রূপে, এক নিজস্ব কাব্যিক সত্তায় প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই প্রথম পর্বের কবিতা কেবল এক সূচনা, যা আমাদের আরও অনেক ভূতের গল্পের গভীরে টেনে নিয়ে যাবে, অমাবস্যার রাতের রহস্যের আরও গভীরে।
ভূত চতুর্দশী কবিতা (প্রথম পর্ব)
কলমে কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ভূত চতুর্দশী আজি শুন সর্বজন,
ভূতের বৃত্তান্ত কথা করিব বর্ণন।
মেছোভূত গেছোভূত ভূতের সর্দার,
বেঁটে ভূত মোটাভূত শাকচুন্নি আর।
ব্রাহ্মণের অপঘাতে মৃত্যু যদি হয়,
মরে ব্রহ্মাদৈতা হয়ে পুনঃ জন্ম লয়।
মুসলিম যদি কেউ মরে অপঘাতে,
মহম্মদ ভূত হয়ে ঘুরে মাঝরাতে।
অবিবাহিতা কুমারী অপঘাতে মরে,
অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে ঘোরাফেরা করে।
পেত্নীরা শ্যাওড়াগাছে ডালে বাঁধে বাসা
অন্ধকার রাতে ঝুলে, নাহি পূরে আশা।
বিবাহিতা নারী যদি অপঘাতে মরে,
শাকচুন্নি হয়ে তারা শাঁখা পলা পরে।
ভূত হয় মোর পূত পেত্নীরা হয় ঝি,
লক্ষ্মণ লিখিল কাব্যে ভূত চতুৰ্দ্দশী।
