আসছি আমি মা
আসছি আমি মা


মা,
ভালো আছো ?
না না ... আজ আর বলা সাজে না ।
পুজো আসছে মা , আরও একটা পুজো ।
শ্রীচরণেষু লেখার ভনিতাটা করলাম না ।
বাড়ি ছেড়েছিলে মা তুমি যেবার ...
মানে তোমায় ছাড়তে বাধ্য করেছিলাম
সেবারেও কিছুদিনের মধ্যেই ছিলো পুজো ।
আমি যত্ন করে তোমায় ট্যাক্সিতে তুলে
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো বলে ...
ক্ষ - ক্ষমা কথাটা এই ইতর বলতে পারে না ...
আশ্রমের চৌকাঠ অবধি নিয়ে গেলাম ;
তুমি মুহূর্তে আমার দিকে চমকে তাকালে ।
তারপর , কিচ্ছু না বলে এগিয়ে গেলে ।
আজ আরও একটা পুজো চলে এলো ,
বাড়িতে আমি আগাছা হয়েই ছিলাম
আজ সেটা সাফ করে দিলো ওরা -
মানে আমার দুই ছেলে , দেখালো আশ্রমের পথ ।
তোমার বৌমা যাওয়ার বেলায়
খুব করেছিলো আক্ষেপ , করেছিলো দোষারোপ ।
কিন্তু তখনও এইদিনের কথা ভাবেনি ও ,
কালচক্র বুঝি এভাবেই সম্পূর্ণ হয় ।
বন্ধুর বাড়ি দুদিন থেকে কিছু কাজ সেরে
আসবো মা , তোমার কাছে , তোমার পাশে ;
তুমি দেবে তো আমায় আদর ?
ইতি,
অমিয়
প্রিয় অমিয়বাবু ,
আপনাকে বৃদ্ধাশ্রমে স্বাগতম ।
বছর বিশেক আগের কথা আমি ভুলিনি ,
ভুলিনি তারও পনেরো বছর আগের কথা ।
মায়ের সাথে কাটাবেন জীবন ... হায় রে !
তাঁকে কোথায় পাবেন এখন সরকারবাবু ?
জীবনের শেষ দশটা শরৎ যিনি একাই কাটালেন ,
বার বার চিঠি লিখে , ফোন করেও
একটিবারও তিনি কোনও উত্তর পেলেন না ;
পাগলের মতো তখন পাশে চেয়েছেন আপনাকে ।
প্রতিমাসের খরচাবাবদ টাকাটা কিন্তু পৌঁছে যেত ,
তবু মুখটা একবারও দেখলেন না আপনার ।
এখানে এসে আমার সাথে দেখা ;
দেখেই ভরে যায় চোখ দুঃখভরা জলে ।
p>
শ্রীতমা নামটা কি মনে পড়ে আপনার ?
আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো যার সাথে ,
বিয়ের দিন যে দেখলো আপনাকে
প্রেমিকার সাথে গাঁটছড়া বাঁধা অবস্থায় ।
" একটা নার্স হয়ে স্বপ্ন দেখো কী করে
আই . এ. এস কে পাওয়ার ? "
মনে পড়ে সেই কথাগুলো ?
উনি নিজের মেয়ের চেয়েও বাসতেন ভালো ,
আমায় বুকে টেনে নিয়েছিলেন ।
আপনার কপালটা আমায় হাসাচ্ছে ,
মাকে জীবিত অবস্থায় পাশে রাখলেন না ,
এখন চাইছেন ফের তাঁকে পাশে ;
কিন্তু হায় যে যায় সে তো ফিরে নাহি আসে !
ইতি,
শ্রীতমা
শ্রীতমার চিঠি পড়ে ৭০ বছরের অমিয়
লজ্জায় ঘেন্নায় নিজেই গেলো ভেঙ্গে ।
বন্ধুর বাড়ি ছেড়ে পা বাড়ালো নিরুদ্দেশে ,
কানে তখন অবিরত " খোকা ঘুমোলো " ধ্বনি ।
পাগলের মতো ছুটতে লাগে সে ,
কোথায় যাবে , কী করবে জানে না সে ।
কখনও " মা তুমি কোথায় ? " বলে চেঁচালো ;
কখনও মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলো ।
সেকেণ্ড ব্রিজের উপর দুরন্ত গাড়িগুলো ,
হাওয়ার বেগে ছুটছে যেন সব ,
রেলিং ধরে স্রোতস্বিনীর পানে চায় , বলে ওঠে ,
" ওই তো ওই তো মা দাঁড়িয়ে ওখানে । "
মা যেন বলছেন , " আয় খোকা , আয় ...
কতদিন দেখিনি তোকে ... আয় ...
আমার ফাঁকা বুকটা এবারে পূর্ণ হবে ।
কোথায় ছিলি বাবা , কোল শূন্য করে ?
যাওয়ার বালাতেই দেখা দিলি না ...
এবার তো আয় আমার কাছে ... "
অমিয় বললো , " আসছি আমি মা ,
সব ভুলে খোকাকে জড়িয়ে নেবে তো ?
খোকাকে ক্ষমা করতে পারবে তো ?
তোমার সাথে চিরকালীন হয়ে থাকবো । "
এই বলে গঙ্গাবক্ষে ঝাঁপ দিলো সে ,
মা বুঝি খোকাকে এদ্দিনে কাছে পেলো ,
খোকা অমোঘ শান্তিতে কাটাবে পরলোক ।
আর কোনোদিন তারা আলাদা হবে না ।