আর একটা খ্রিষ্টমাসের আগে
আর একটা খ্রিষ্টমাসের আগে


দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেল|
কিছুতেই পারি না সময়কে থামিয়ে দিতে|
পারলে বেশ হতো, তাই না?
মাসটা ছিল নভেম্বর...
বদলি হয়ে গেলাম ইস্পাত নগরীতে;
আমার ব্যাচেলর কোয়ার্টারের সামনে কাঠ বাদাম গাছটার তখন পাতা ঝরছে,
যেভাবে টুপ করে চুপিসারে দিনের শেষে সাঁঝ খসে পড়ে|
ওদিকে আমার অফিস ঘরের সামনে উল্টো ছবি;
গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, নয়নতারারা দলবেঁধে গর্ভবতী|
শুধু কোন ফাঁকে আমাদের বয়েস পাঁচ বছর বেড়ে গেল;
ভুলে গেছ সব নিশ্চয়,
সবটা না পারলেও
খুঁটিনাটি তো বটেই - আমি জানি,
এক অলস রবিবাসরীয় দুপুরে তোমার সাথে দেখা|
তারপরে?
তারপরে যেমন ছায়াছবিতে হয়,
একটা একটা করে প্রহরের মালা গাঁথা;
আমার বাড়ি যাওয়া নিয়ে খোঁটা দিতে,
বলতে “কি এতো ঘন ঘন বাড়ি যাও?”
সেই থেকে দ্বৈত সত্ত্বার বোঝা বয়ে চলেছি...
দড়ির একদিকে আমার বাস্তব অন্যদিকে তুমি|
আচ্ছা, তোমার কোমর ব্যথাটা এখন আর নেই তো?
আমি টিপে দেবার কথা বললে,
কখনো লক্ষ্মী মেয়ের মতো উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে
আবার কখনো ভ্রূর ধনুকে রাত এনে বলতে
“ব্যথা কমে যাবে। তার চেয়ে চলো বারান্দায় তোমার কাঁধে মাথা রেখে তারা খসা দেখি”|
দেখতে দেখতে আর একটা বড়দিন চলে এল,
গির্জার ঘড়িগুলো সেজেগুজে মুখিয়ে আছে শুভক্ষণের অপেক্ষায়|
সেন্ট জেভিয়ারসে ক্যারলের রিহার্সাল চলছে হয়তো,
নগরী মেকআপ রুমে ফাইনাল টাচ দিতে ব্যস্ত,
আর আমি-
কুয়াশার বিষাদ স্তর সরিয়ে ভোর খোঁজার ছলে
প্রতি খ্রিষ্টমাসের আগে প্রার্থনা করে চলি-
“প্রভু তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করুক
মনের থলিতে খুশী ভরে দিক”।
সব কালো মেঘ সরে গিয়ে এক চিলতে আলো দিব্যি মনের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে,
আমার ভেতরে কেউ প্রেমকে বাঁচিয়ে রেখে আর একটা খ্রিষ্টমাসের অপেক্ষা করে
-শেষ দিন পর্যন্ত।