Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sanghamitra Roychowdhury

Tragedy Classics

3  

Sanghamitra Roychowdhury

Tragedy Classics

আমি আনন্দিতা

আমি আনন্দিতা

3 mins
815


আমার নামটা যে কে, আর কেনইবা রেখেছিলো 

আনন্দিতা, তা আমি জানি না,

জন্মেরও আগে থেকেই তো কখনো পাই নি আনন্দের লেশটুকুরও ঠিকানা।


এই যেমন ধরো না, যখন আমি মায়ের পেটে ছিলাম,

মায়ের বুকভাঙা কান্না তখন থেকেই তো শুনতাম।

সত্যি বলছি, কতবার শুনেছি......

মা অনুচ্চারিত শব্দে করছে নিরুচ্চারে, আমার মৃত্যু কামনা।

সেই থেকেই বোধহয় আমার জীবন-সম্পর্ক ইত্যাদিতে,

ঘোর ঘৃণা - বিতৃষ্ণা।

তবে বুঝি, মায়ের আমার, উপায় ছিলো না!


তারপর ভূমিষ্ঠও অবশ্য হলাম শারীরবৃত্তীয় নিয়মে,

তবে মুখে না জুটলো মধু, না জুটলো মায়ের দুধ, জন্মে।

মায়ের অনাহারক্লিষ্ট বুকটা মরুভূমির মতো শুকনো খটখটে ছিলো যে!


ঠাকমা ক'দানা চিনি জলে গুলে তাতে ন্যাকড়া ডুবিয়ে মুখে ধরেছিলো .....

চকচক করে তাই শুষে নিয়েছিলাম,

পেটে রাক্ষুসে ক্ষিদে ছিলো যে,

কেঁদে কেঁদে গলাটা কাঠ-শুকনো হয়েছিলো।


তারপর আগাছার মতো বেড়ে উঠতে থাকলাম,

হামাগুড়ির পরে টলোমলো পায়ে হাঁটতেও শিখে গেলাম....

আছাড় খেয়ে পড়ে, আবার উঠে দাঁড়িয়ে,

টাল সামলাতে সামলাতে চলতাম।


বাপটা আমার কী একটা কাজ করতো, রোজগার মন্দ ছিলো না....

তবে ঐ যে, দু-দু'টো ম'য়ের নেশা ছিলো,

মদ আর মেয়েমানুষ! তাতেই উড়ে যেতো সব।

আমার দড়ি পাকানো মায়ের কপালে দৈবাৎ জুটতো...

শুধু টালমাটাল মাতাল এক জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির....

উত্তপ্ত লাভাস্রোত কেবল!


অগ্ন্যুৎপাত শেষে আবার যে কে সেই....

মা'টা কোমরে খেতো কখনো ক্যাঁক করে এক লাথি,

আবার কখনো প্লাস্টারবিহীন, ইঁট বারকরা দেয়ালে 

খেতো মাথায় সজোর ঠোকা, কপাল ফুলে হোতো আলু।

না না, শখ করে নিজে খেতো না! আমার গুণধর

বাপ খাওয়াতো, ধরে চুলের মুঠি।


প্রাণপণ এড়িয়ে চলতাম আমার জন্মদাতা ঐ শয়তান লোকটাকে।

আরেকটু বড়ো হতে বুঝতাম শুয়ে নড়বড়ে ভাঙা চৌকিতে....

বীভৎস আগ্রাসন চলছে ফাটাচটা মেঝেটাতে!

দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে, চোয়াল শক্ত করে,

পড়ে থাকতাম নিঃশ্বাস বন্ধ করে।


একতরফা লড়াই জিতে আমার বাপ, যেদিন পরক্ষণেই,

গালাগালি দিচ্ছিলো মা'কে যাচ্ছেতাই,

সেদিন আর মাথার ঠিক রাখতে পারলাম না....

জন্ম তো আমার ঐ রাক্ষসের বীজেই!


আমার বারো বছরের শরীরটা...... 

আর এক দানবীয় শক্তি নিয়ে ছিটকে উঠে গিয়ে,

কাঠের মোটা দরজার খিলটা নিয়ে,

পেছন থেকে বাপটার মাথায় সপাটে দিলাম বসিয়ে।

এক ঘায়েই মাতালটা হাত-পা ছড়িয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো,

সেদিন মায়ের সর্বক্ষণ ছলছল করা চোখে একটু রোদ

চলকে উঠেছিলো।


তারপর মা বললো, পালা... ঠাকমা বললো, থাক,

পালাতে হবে না, সন্দেহ হবে লোকের।

থাকুক ও ঘরেই, আপদটা বিদেয় হয়েছে,

হাড় জুড়িয়েছে!


হতবাক মা হাঁ করে চেয়ে ঠাকমার দিকে.....

ছেলের হাতে রোজ কিল চড় খাওয়া ঠাকমাই বললো,

শোনো, মদ গিলে ও ড্রেনে পড়েছিলো।

রাতের অন্ধকারে ভাঙা বালতি ভর্তি করে,

নর্দমার পাঁক তুলে এনে ঠাকমা দিয়েছিলো মাখিয়ে,

দাঁত ছড়কুটে মরে‍ পড়ে থাকা ছেলের মাথায় গায়ে।

নাহ্, কোনো কেস-খামারি হয় নি, করবে কে?


এরপর শুরু অন্য লড়াই, তিনটে তিন বয়সের নারীর বেঁচে থাকার লড়াই,

ঘরে বসে মা'টা করতো শাড়ির পাড়, কাঁথা সেলাই।

ঠাকমা দু'বাড়িতে রাঁধতো আগে থেকেই, সেটা চারবাড়ি হোলো,

আমি ইস্কুলে যেতাম বটে, ওখানে যে মিডডে মিলটা মিলতো!

ঠাকমা মাঝে মাঝে পেট কাপড়ে করে লুচিটা-নাড়ুটা...

চুরি করে কাজের বাড়ি থেকে আনতো।


তারপর যেই আমার চোদ্দো পুরলো,

অমনি চারধারে কাক-চিল-শকুন, শেয়াল-হায়েনার

ওড়াউড়ি ঘোরাঘুরি শুরু হোলো।

মা-ঠাকমা চুপ, কিছু বলার অবস্থায় নেই আর!

আর আমিও খুঁটে খেতে, খেটে খেতে শিখে গেলাম,

শেখাতে হয় নি,

রক্তবীজেরা মাটিতে পড়লেই শিখে যায় এমনিই।


তারপর আমার নামের "আ"-টাকে বিয়োগ করে হলাম শুধুই "নন্দিতা".....

খেয়ে পড়ে আছি, আছে সবই, বাড়ি-গাড়ি টাকা-পয়সা।


কাজটা কী? ঐ যে গো, শোনো নি? "এসকর্ট".....

আরে বাবা, সোজা ইংরেজিতে "প্রস্টিটিউট",

আর গোদা বাংলায় "বেবুশ্যে".....

অবাক হলে বুঝি? না গো, অবাক হবার কিছু নেই,

অবশ্য বিনা আপত্তিতে পারো ঘেন্না করতেই।


তবে এটাই সত্যি গো, 

সস্তা নয়, আমি এখন আন্তর্জাতিক!

ছিপছিপে শ্যামলা ঢলোঢলো এইট-পাশ আনন্দিতা.....

নন্দিতাকে টপকে এখন "ন্যান্ডিটা", হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো,

"ন্যান্ডিটা"...... সামথিং স্পেশাল, ফ্যান্টাস্টিক!


Rate this content
Log in

More bengali poem from Sanghamitra Roychowdhury

Similar bengali poem from Tragedy