শঙ্কু তখনও বেঁচে
শঙ্কু তখনও বেঁচে
২রা মে , ২০৫০ :
আজ অনেকদিন পর নিজের বৈজ্ঞানিক সত্ত্বার উপস্থিতি অনুভব করলাম । প্রায় ৭০ বছর হলো অমরত্ব লাভের রসায়ন আবিষ্কার করেছি । তারপর এই যুগকে রক্ষা করার মতো গ্রীণোকম যন্ত্র যা এক ট্রিগারে নতুন বৃক্ষরোপণ করবে , রেডোগ্রাফ যন্ত্র যা চালু করলে মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন কমাতে সাহায্য করবে আর সবচেয়ে বড়ো যেটা উল্লেখ্য গ্যালিস্কোপ যেটা কিনা একটা গ্যালাক্সির কোথাও কোনো নক্ষত্রের প্রদক্ষিণকারী গ্রহে প্রাণ আছে কিনা নির্দ্বিধায় বলে দেবে । বলা বাহুল্য গ্রীণোকম পৃথিবীর সবুজ প্রায় দ্বিগুণ করেছে ৫০ বছরে । আবার রেডোগ্রাফের দরুণ বহু টেলিকম কোম্পানির প্রাথমিক বিরাগভাজন হলেও পরে তারা মেনে নিয়ে রেডিয়েশন কমাতে বাধ্য হয়েছে । এদিকে , গ্যালিস্কোপ যন্ত্রে ইতিমধ্যে সৌরজগতের বাইরে ৪টে ভিন্ন গ্রহে প্রাণের সন্ধান পাওয়া গেছে । আমার তৈরী লঙ্গিপ্লেক্স পুরো বিশ্ববাসীর জন্য উপলব্ধ হলেও সকলকে প্রয়োগ করতে নারাজ হয়েছে কিছু দেশের সরকার । কারণ হিসাবে জানিয়েছে , এটায় আদমসুমারিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে । কিছু কঠিন দুরারোগ্য ব্যধিগ্রস্ত লোক , দেশের মঙ্গলকার্যে জরুরী মানুষ এমন লোককেই প্রয়োগ করেছে সব সরকার । এখন আসি আজকের আবিষ্কারে ।
বর্তমান পৃথিবীতে যে সম্পদটির উপর সব দেশের মধ্যে লড়াই চলছে তা হলো জল । আমার নিজের অবাক লাগে , প্রায় ৫০ বছর আগেও খনিজ তৈল প্রায় একই রকম গুরুত্বপূর্ণ ছিলো ।
আজ সেই জায়গায় পানীয় জল এসে হাজির হয়েছে । প্রায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা শুনতে পাচ্ছি এমন সময় ইতালিতে বসে আমার এই রিসার্চ । ১০ বছরের তপস্যায় এই লাভ । বিভিন্ন গাছের ফলের বীজ নিয়ে ঘাঁটার অভ্যাস আমার চিরকালের । তেমনই দুটি ফলের বীজের সংকর করে একটি নতুন বীজ তৈরী করি । ফলের স্বাদও হয় অদ্ভুত , ঝাল ও টক মেলানো । নাম একটা কিছু ভাবার সময় হয়নি । তারই মধ্যে এক অদ্ভুত বর্ণের আলো তৈরী করি । এক্সট্রাহাইভায়োলেট নাম দিয়ে তৈরী এই মোনোক্রোমাটিক লাইট ওই ফলের গাছের গায়ে পড়ার পর গতিতে ধারাপ্রবাহ হতে দেখে আমার চমক সপ্তমে পৌঁছালো । ক্রমাগত গ্রীণোকম দিয়ে আমার ইতালির ঘরের আশেপাশে ওই গাছ রোপণ করতে লাগলাম । অবশেষে নিশ্চিত হলাম গ্যাস বাদ দিয়েই জল আবিষ্কারের এই পদ্ধতি সম্বন্ধে ।
৬ ই মে , ২০৫০ :
আমার আবিষ্কার সম্পর্কে বড়ো বড়ো সায়েন্স জার্নালগুলোকে জানাতেএ বিলম্ব করলাম না । ফোন এলো দুদিন পর ।
৯ই মে , ২০২০ :
গতকাল আমি আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ক্রোল ও আমার দেশের বিজ্ঞানী রাজেশ সিনহা দুজনের থেকেই একটি করে চিঠি পেয়েছি । দুজনেই আমার সঙ্গে দেখা করতে চান । কিন্তু আগে আমি রাজেশকে জানালাম দুদিনের মধ্যে দেশে ফিরছি । এখানে বলে রাখি , রাশিয়ায় অমরত্বের ফর্মুলা বানানোর পর বিশ্বে আমার বেঁচে থাকার খবর ছড়ালে পর গিরিডিতে কিছুকালের মধ্যেই আসি কিন্তু তদ্দিনে আমার দেশের বাড়ি উধাও , সেখানে সরকারী দপ্তর তৈরী হয়েছে । আমায় তার আগেই পুরোনো ইতালিয় বন্ধুর পৌত্র ওর খালি এক বাড়িতে থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলো । তাই ওর বাড়িতেই থাকা । আজ আবার ৬০ বছর পর দেশে ফিরছি ।
১২ ই মে , ২০২০ :
আমার দেশে আসার খবরে দিল্লীতেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সম্মান জানানো হয় । তরুণ বিজ্ঞানীরা একে একে আমার সাথে দেখা করতে এলেন হোটেলে । এলেন রাজেশও ।
আমার আবিষ্কারের কথা রাজেশের সহায়তায় সরকারের মোহর পেলো । ঠিক এই সময় ক্রোলের আবার একটি চিঠি । আমার আশ্চর্য লাগলো এই যে কী করে ক্রোল আমার ঠিকানা জানলো ? ওকে জানিয়েছি যদিও আমার দেশ হয়ে আমেরিকা যাবো । কিন্তু ঠিকানা তো বলিনি !
১৩ ই মে , ২০২০ :
ক্রোল জানিয়েছে এখানেই আসছে ও । আজ ১২ টা নাগাদ নামবে ওর ফ্লাইট । রাজেশকে এই কথা জানাতে ও ভ্রু খানিক কুঞ্চিত করেছে । অবশেষে বলেছে সে সাথে থাকবে অতএব চিন্তার কিছু নেই ।
ক্রোল এসে জানালো যে এই সরকারের অনেক লোকের সাথে তার সম্পর্ক আছে , তাদের থেকেই জানা । তারপর সে যেটা বললো সেটার বিষয়ে আমি প্রস্তুত ছিলাম না ।
" তোমার জলের আবিষ্কারটা আমি কিনতে চাই । দেখো শঙ্কু , বিশ্বে জল নিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি জলের সরবরাহ করতে পারে বিশ্বকে তবে তোমার দেশ ও আমার দেশ দুই দেশই বাঁচবে এবং আমাদের শত্রুদেরও পদানত করতে পারবো । "
" এ আমি যে করতে পারবো না এ বলাই বাহুল্য । অতএব , তোমার অফার নিয়ে ফিরে যাও । ভারতে ইতিমধ্যে আমার আবিষ্কার সর্কারি মোহর পেয়েছে । অতএব... "
" এখানে বসে আমার এই জামার বোতামে আঙুল দিলেই ভারতের বিভিন্ন জায়গা ধ্বংস হয়ে যাবে । আর তাতেই কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে । অতএব ... "
শঙ্কু বললো , " একটু বসো আসছি । "
ব্যাগের থেকে একটা বড়ির মতো বের করে চায়ে মিশিয়ে নিয়ে এলো । নিজেরও এককাপ চা আনলো ।
" আগে চা পান করো , তারপর ভেবে দেখছি ! "
একটু অবাক হলেও পান করলো ক্রোল । অবাক হয়ে রাজেশ দেখলো ক্রোল বলছে , " এ কোথায় আমি ? তোমরা কারা ? আরে আরে আমার বাড়ি ঘর ... "
" তোমায় বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে বলে দিয়েছি দেশের সরকারকে । কোনো চিন্তা নেই । "
ক্রোল গেলে পর রাজেশ জানতে চাইলো , " কী ব্যাপার হলো স্যার ? "
" মেমোরাব বড়ির একটায় ইহজন্মের সব স্মৃতি মুছে যায় । বিশ্বের ক্ষতির জন্য কোনো কিছু আমি ডিসক্লোজ করিনা সহজে । কিন্তু আজ এটা ব্যবহারে বাধ্য হলাম । "
শ্রদ্ধায় হাতজোড় হয়ে এলো রাজেশের ।