উদাহরণ
উদাহরণ
উদাহরণ
আকাশ পাতাল ভাবছি । অনেকক্ষণ থেকেই ভাবছি । কিন্তু কোনো ক্লু পেলাম না । অথচ একটা
লেখা আমাকে লিখতেই হবে । হঠাত্ শীলার কথা
মনে পড়তেই কলম টা ধরলাম । শীলা একটা দরদি চরিত্র । না না ও আমার স্কুলের বন্ধু নয় ।
আমার কলেজের বন্ধুও নয় । পথ চলতি আলাপ ।
কোথায় যেন গিয়েছিলাম । হ্যাঁ ঠিক. .মনে পড়েছে ।
পুজোর বাজার করছিলাম । নিউ মার্কেটে । বীণা
মানে আমার স্ত্রী সাথেই ছিল । বাজার প্রায় সারা ।
অনেকক্ষণ ঘোরা ঘুরি করার পর একটু চা তেষ্টা
পেতেই সেই পরিচিত দোকান টায় গেলাম ।
বড় ভাঁড়ের দু ভাঁড় চা আর দুটো বিস্কুট নিলাম ।
চা টা খুব সুন্দর করে ওখানে । আয়েস করে চা টা খাওয়ার দেখছিলাম বীণার হয়েছে কি না । একটু
পরে টাকা বের করতে গিয়ে মাথায় হাত । টাকা ..?
তখনই মনে পড়ল ---ও টাকার ব্যাগ তো বীণার কাছে । বীনা তখন ব্যাগ - এ হাত ঢুকিয়েছে ।
কিন্তু বীণার ও তখন মাথায় হাত । আরে .....!
কাঁধ থেকে ব্যাগ হাতে ধরে দ্যাখে পুরো ব্লেড চালিয়েছে কেউ । যা: .......একেবারে পেনিলেস
যাকে বলে ! কি করেই বা চা এর দাম দেবো...
আর ফিরবই বা কি করে ! ঐ যে বললাম । পেনিলেস ......! দুজন দুজনকে দোষারোপ করি ।
আমি বলি তোমার দোষ । বীণা বলে আমার ।
আমি কাউন্টার করি , 'আমার পকেট খালি হবার
পর তোমার ব্যাগে হাত দেবার কথা ছিল '।
কিন্তু আমার পকেট যে ফাঁকা-- আমার এক্কেবারে
খেয়াল ছিল না । তোমার ব্যাগে যে একজন ব্লেড
চালালো .... তুমি ..?
আমতা আমতা করে বীণা বললো , এতো ভিড়....
আমি বললাম , ভিড় তো হবেই । পুজোর বাজার
বলে কথা । ওরা তো ভিড়েই কাজ সারে । ফাঁকায়
নয় সেটা বোধ হয় তুমি জানতে না ? তিন হাজার টাকা কখন যে উধাও হয়ে গেলো ! ছি ছি -----!
বীণা চুপ করে থাকে । কিন্তু এখন উপায় ...?
তখনই শীলার দিকে চোখ পড়েছিল । ও তো পাশেই
বসে চা খাচ্ছিল । আমাদের বাক বিতনডা দেখে
ও উঠে দাঁড়ালো । বললো , আমি চা এর দাম দিয়ে
দিচ্ছি । বীণা বললো , এ মা সে কি ?
আমি বললাম অনুনয় করে ----
--না না .....। আপনায় দিতে হবে না ।
--কেন , দাদা বৌদিকে আমি দু কাপ চা খাওয়াতে
পারি না ?
----না ঠিক সেটা নয় ..।
----তাহলে ? একটা অসুবিধা তো হয়েইছে । আমি
যদি ....
------ না না
----- কেন না না । আমি তো আপনার বোনের মতো
না কি । আমি দু কাপ ....
বীণা আমায় ইসারা করতেই আমি চুপ করলাম ।
শীলাই চা এর দাম মিটালো । কিন্তু পরেরটা ?
পকেটে তো গাড়ি ভাড়াও নেই ।
শীলাই আমাদের জিজ্ঞাসা করলো , 'আপনারা
কোথা থেকে এসেছেন ?'
--আমরা বৈদ্যবাটি থেকে এসেছি ।
---- বৈদ্যবাটি ?
---- তুমি কোথা থেকে ?
---- আমি তো ঐ দিকেই থাকি ।
----ঐ দিকে মানে ?
----- আমার তো শেওড়াফুলি । আমাদের তো
ওখানে দোকান আছে ।
------কিসের দোকান ?
------ জামা কামড়ের । আমার দাদা আর আমি
কেনাকাটা করতেই এসেছি ।
------ তোমরা ফিরবে কিসে ?
------ ট্রেনে ।
----- তাহলে ----
----- ঠিক আছে । ব্যবস্থা হয়ে যাবে । চিন্তা করবেন
না । আমরা তো সাথে রইলাম । আর সেই মুহূর্তে আমি যেন ঈশ্বরকে দেখতে পাচ্ছিলাম ।
তখন জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারলাম ওর নাম
শীলা । আমরা কপর্দক শূন্য হয়ে বসে আছি শীলার
ভরসায় । বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করার পর শীলার দাদা জিনিস পত্র নিয়ে ওখানে এলো ।
শীলা ওর দাদাকে সব পরিচয় দিল । ওর দাদা সব
কিছু শোনার পর দু:খ প্রকাশ করলেন । কিছু করার নেই । অসম্ভব ভীড় । শুধু মানুষের মাথা
দেখা যাচ্ছে । শীলার দাদা একটা গাড়ি করলো ।
আমরা সবাই জিনিস পত্র নিয়ে উঠলাম । গাড়ি
চলতে শুরু করলো । হাওড়া স্টেশনে পৌছে আর
এক বিপত্তি । ওভার হেড লাইনের তার ছিড়েছে ।
তার জন্য আগে পিছে অসংখ্য গাড়ি দাঁড়িয়ে ।
হাওড়া স্টেশন থিক থিক করছে । গড়ি কখন
ছাড়বে ঠিক নেই । অগত্যা আবার গাড়ি ।
শেওড়াফুলিতে ওরা নেমে গেলো । ঐ গাড়িতেই
আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। তখন রাত আট টা ।
পরের দিন সকালে ওদের বাড়ি গিয়ে গাড়িভাড়াটা
দিয়ে এলাম । ওনারা নিতে চাইছিলেন না । কিন্তু
এক প্রকার জোর করেই ভাড়াটা আমি দিয়ে এসে
ছিলাম । সেই থেকে শীলাদের সাথে একটা আত্মীয়তা তৈরি হয়েছে । ওরা আমাকে দাদা বলে ।
আমি শীলাকে বোন বলি । শীলা আমাকে ভাই ফোঁটার দিন ভাই ফোঁটা দেয় । একটা মধুর সম্পর্ক
আমি খুব উপভোগ করি । শীলা বর্তমান যুগে একটা উদাহরণ আমার কাছে । আমার জীবনে
হঠাত্ ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আমি লিখে ফেললাম ।
.....................................................................