NILAY CHATTERJEE

Others

4.0  

NILAY CHATTERJEE

Others

উদাহরণ

উদাহরণ

4 mins
44



উদাহরণ

আকাশ পাতাল ভাবছি । অনেকক্ষণ থেকেই ভাবছি । কিন্তু কোনো ক্লু পেলাম না । অথচ একটা

লেখা আমাকে লিখতেই হবে । হঠাত্ শীলার কথা

মনে পড়তেই কলম টা ধরলাম । শীলা একটা দরদি চরিত্র । না না ও আমার স্কুলের বন্ধু নয় ।

আমার কলেজের বন্ধুও নয় । পথ চলতি আলাপ ।

কোথায় যেন গিয়েছিলাম । হ্যাঁ ঠিক. .মনে পড়েছে ।

পুজোর বাজার করছিলাম । নিউ মার্কেটে । বীণা

মানে আমার স্ত্রী সাথেই ছিল । বাজার প্রায় সারা ।

অনেকক্ষণ ঘোরা ঘুরি করার পর একটু চা তেষ্টা

পেতেই সেই পরিচিত দোকান টায় গেলাম ।

বড় ভাঁড়ের দু ভাঁড় চা আর দুটো বিস্কুট নিলাম ।

চা টা খুব সুন্দর করে ওখানে । আয়েস করে চা টা খাওয়ার দেখছিলাম বীণার হয়েছে কি না । একটু

পরে টাকা বের করতে গিয়ে মাথায় হাত । টাকা ..?

তখনই মনে পড়ল ---ও টাকার ব্যাগ তো বীণার কাছে । বীনা তখন ব্যাগ - এ হাত ঢুকিয়েছে ।

কিন্তু বীণার ও তখন মাথায় হাত । আরে .....!

কাঁধ থেকে ব্যাগ হাতে ধরে দ্যাখে পুরো ব্লেড চালিয়েছে কেউ । যা: .......একেবারে পেনিলেস

যাকে বলে ! কি করেই বা চা এর দাম দেবো...

আর ফিরবই বা কি করে ! ঐ যে বললাম । পেনিলেস ......! দুজন দুজনকে দোষারোপ করি ।

আমি বলি তোমার দোষ । বীণা বলে আমার ।

আমি কাউন্টার করি , 'আমার পকেট খালি হবার

পর তোমার ব্যাগে হাত দেবার কথা ছিল '।

কিন্তু আমার পকেট যে ফাঁকা-- আমার এক্কেবারে

খেয়াল ছিল না । তোমার ব্যাগে যে একজন ব্লেড

চালালো .... তুমি ..?

আমতা আমতা করে বীণা বললো , এতো ভিড়....

আমি বললাম , ভিড় তো হবেই । পুজোর বাজার

বলে কথা । ওরা তো ভিড়েই কাজ সারে । ফাঁকায়

নয় সেটা বোধ হয় তুমি জানতে না ? তিন হাজার টাকা কখন যে উধাও হয়ে গেলো ! ছি ছি -----!

বীণা চুপ করে থাকে । কিন্তু এখন উপায় ...?

তখনই শীলার দিকে চোখ পড়েছিল । ও তো পাশেই

বসে চা খাচ্ছিল  । আমাদের বাক বিতনডা দেখে

ও উঠে দাঁড়ালো । বললো , আমি চা এর দাম দিয়ে

দিচ্ছি । বীণা বললো , এ মা সে কি ?

আমি বললাম অনুনয় করে ----

--না না .....। আপনায় দিতে হবে না ।

--কেন , দাদা বৌদিকে আমি দু কাপ চা খাওয়াতে

পারি না ?

----না ঠিক সেটা নয় ..।

----তাহলে ? একটা অসুবিধা তো হয়েইছে । আমি

      যদি ....

------ না না

----- কেন না না । আমি তো আপনার বোনের মতো

        না কি । আমি দু কাপ ....

বীণা আমায় ইসারা করতেই আমি চুপ করলাম ।

শীলাই চা এর দাম মিটালো । কিন্তু পরেরটা ?

পকেটে তো গাড়ি ভাড়াও নেই ।

শীলাই আমাদের জিজ্ঞাসা করলো , 'আপনারা

কোথা থেকে এসেছেন ?'

--আমরা বৈদ্যবাটি থেকে এসেছি ।

---- বৈদ্যবাটি ?

---- তুমি কোথা থেকে ?

---- আমি তো ঐ দিকেই থাকি ।

----ঐ দিকে মানে ?

----- আমার তো শেওড়াফুলি । আমাদের তো

     ওখানে দোকান আছে ।

------কিসের দোকান ?

------ জামা কামড়ের । আমার দাদা আর আমি

        কেনাকাটা করতেই এসেছি ।

------ তোমরা ফিরবে কিসে ?

------ ট্রেনে ।

----- তাহলে ----

----- ঠিক আছে । ব্যবস্থা হয়ে যাবে । চিন্তা করবেন

       না । আমরা তো সাথে রইলাম । আর সেই মুহূর্তে আমি যেন ঈশ্বরকে দেখতে পাচ্ছিলাম ।

তখন জিজ্ঞাসা করতেই জানতে পারলাম ওর নাম

শীলা । আমরা কপর্দক শূন্য হয়ে বসে আছি শীলার

ভরসায় । বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করার পর শীলার দাদা জিনিস পত্র নিয়ে ওখানে এলো ।

শীলা ওর দাদাকে সব পরিচয় দিল । ওর দাদা সব

কিছু শোনার পর দু:খ প্রকাশ করলেন । কিছু করার নেই । অসম্ভব ভীড় । শুধু মানুষের মাথা

দেখা যাচ্ছে । শীলার দাদা একটা গাড়ি করলো ।

আমরা সবাই জিনিস পত্র নিয়ে উঠলাম । গাড়ি

চলতে শুরু করলো । হাওড়া স্টেশনে পৌছে আর

এক বিপত্তি । ওভার হেড লাইনের তার ছিড়েছে ।

তার জন্য আগে পিছে অসংখ্য গাড়ি দাঁড়িয়ে ।

হাওড়া স্টেশন থিক থিক করছে । গড়ি কখন

ছাড়বে ঠিক নেই । অগত্যা আবার গাড়ি ।

শেওড়াফুলিতে ওরা নেমে গেলো । ঐ গাড়িতেই

আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। তখন রাত আট টা ।

পরের দিন সকালে ওদের বাড়ি গিয়ে গাড়িভাড়াটা

দিয়ে এলাম । ওনারা নিতে চাইছিলেন না । কিন্তু

এক প্রকার জোর করেই ভাড়াটা আমি দিয়ে এসে

ছিলাম । সেই থেকে শীলাদের সাথে একটা আত্মীয়তা তৈরি হয়েছে । ওরা আমাকে দাদা বলে ।

আমি শীলাকে বোন বলি । শীলা আমাকে ভাই ফোঁটার দিন ভাই ফোঁটা দেয় । একটা মধুর সম্পর্ক

আমি খুব উপভোগ করি । শীলা বর্তমান যুগে একটা উদাহরণ আমার কাছে । আমার জীবনে

হঠাত্ ঘটে যাওয়া ঘটনাটা আমি লিখে ফেললাম ।

.....................................................................



Rate this content
Log in