মিছিল
মিছিল
মিছিল
ভোটের দামামা বাজছে । সব রাজনৈতিক
দল নিজের নিজের সমর্থকদের নিয়ে মিটিং মিছিলে ব্যস্ত । পুলক কোনো দলে নেই । ও কোনো
দলের হয়ে মিটিঙে যায় না । অথচ ঐ পুলক নিজেই
না কি মিছিলে যাবার উদ্যোগ করছে-সবাই অবাক!
ব্যাপার খানা কেউই ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ।
বৈশাখের চড়া রৌদ্র সকাল থেকে সবাইকে ঘরমুখি
করে রেখেছে । কিন্তু এই রৌদ্রের মধ্যেই আজ না কি তাবড় তাবড় দুই যুযুধান শিবিরের জমায়েত ।
পুলকের অবশ্য মিছিল আজ নয় । কাল ভোরে ।
এক দিকে ভালো । রোদের আঁচ গায়ে লাগবে না ।
পুলক কিন্তু আজ বিকেলে মিটিং শুনতে যাচ্ছে ।
স্কুল মাঠে মিটিং । পড়ন্ত রোদে মাঠ ঝাঁ ঝাঁ করছে ।
আর একটা মিটিং হবে ফুটবল মাঠে । দুটো মাঠই
লোকে লোকারন্য । মাইকে মাইকে ছয়লাপ ।
ঠিক সময় মিটিং শুরু হয়েছে । স্কুল মাঠে বিরাট বক্তৃতা দিচ্ছেন একজন উঁচুদরের নেতা । কথা বলতে বলতে জনতার দৈনন্দিন জীবনের কষ্ট , বাজার দর , পেট্রল , কেরোসিন তেলের দাম ,
বেকারত্ব সবই মোচনের কথা বললেন । ওনারা
ক্ষমতায় এলে প্রচুর চাকরি দেবেন দেশের বেকার
ছেলেদের । প্রতিশ্রুতিও দিলেন ।
পুলক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিল সব । এক ফাঁকে
একবার ফুটবল মাঠেও এসে দাঁড়াল । দুই দলের
সেই একই ভাসা । সেই গরীবি হটাও । চাষীদের
রোজগার আমরা বাড়িয়ে দোব । প্রতি ব্ছর
একলক্ষ ছেলের চাকরির ব্যবস্থা পাকা করবো ।
কথাও দিলেন । পুলক মনে মনে হাসল । পুলক নিজেই তো পাশ করে বসে আছে আজ কতদিন।
আরো অনেক কথা । অনেক প্রতিশ্রুতি । বিভিন্ন
অর্থ ভাণ্ডার থেকে গরীব দের অর্থ সাহায্য দেওয়ার
অঙ্গীকার করলেন । গরীবদের থাকার ঘর করে দেবেন । এমন কথাও বললেন । কিন্তু আসল কথাটা কেউ বললেন না । তাপ প্রবাহে মানুষ ঘরের
জানালা দরজা বন্ধ করে বসে আছে । দেশের ভালো করবার জন্য দায়িত্ব মাথায় নিয়ে যাঁরা এই
গরমে প্রাণপাত করছেন তাঁদের কোনো হেলদোল
নেই । পুলক সরে এলো ।
ও নিজে একজন বেকার । কিন্তু ওর জনপ্রিয়তা
প্রচুর । ও একটা টিম তৈরি করেছে । সেই টিম পাড়ায় - অঞ্চলে গাছ লাগায় । আগাছা পরিষ্কার
করে । নালা নর্দমা সাফ করে নালার মুখ বড় বড় পুকুরে নিয়ে গিয়ে ফেলে । একশো দিনের কাজ নেই । বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে ----।
কাল সকালে নয় ভোরে ওর মিছিল আছে । গ্রামের
সমস্ত মানুষ -- ছেলে বুড়ো সকলকে সে মিছিলে
যোগদান করতে অনুরোধ করেছে । গ্রামের পুরোহিত মশায় কেও সাথে রেখেছে ।
ভোর হতেই সাজ সাজ রব । সবাই ছুটছে দিঘির
ওপারে মাঠ পেরিয়ে একেবারে পুর্ব প্রান্তে । উত্তর
দিকে জঙ্গল । কোনো অসুবিধা নেই ।
সব মানুষ হাঁটছে । ধান জমি পেরিয়ে পাশের গ্রামের ফুটবল মাঠ । ঐ মাঠের প্রান্তে এসে দাঁড়াল
সবাই । পুলক পুরোহিত মশায় কে বললো -- ' দেখুন তো ঠিক সময় টা । উনি পাঁজি খুলে
সময় দেখে বললেন পাঁচ টা চার । এখনও এক
মিনিট বাকি । আসন পাততে পাততেই এক মিনিট
শেষ । ওদিকে লাল আভাও দেখা দিয়েছে ।
পুরোহিত মশায় আসনে বসলেন ।জোড় হাত করে
সূর্যের প্রণাম মন্ত্র জোরে জোরে উচ্চারণ করতে
লাগলেন । ওং জবা কুসুম শঙ্কাসং কাশ্যপেয়ং
মহাদ্যুতিম --------।
উপস্থিত জনতাও ওনার সাথে গলা মেলালো ।
তারপর পুরোহিত মশায় উঠে দাঁড়ালেন । পঞ্জীকা খুলে সূর্যস্তোত্র পাঠ করলেন । তখন সবাই হাত জোড় করে এক মনে সূর্যের দিকে তাকিয়েছিল ।
সূর্য পূজা শেষ হতেই পুলক একটা কবিতা পাঠ করলো উচ্চস্বরে --।
হে সূর্যদেব-- --তোমার
রোষানল নিবারণ করো
তুমিই জগতের শক্তি
তোমার শক্তিতে জগৎ বিদারো
দিনে দিনে তোমার বাড়ছে তাপ
অসহ্য মানুষ এবার ছাড়ছে হাফ !
জলাশয় নি:শেষ - সবুজ নেই ...
পানীয় জলও নেই...
কোনো রকমে আছি পৃথিবীতেই !
তুমি শুষ্ক হাওয়া বন্ধ করো
সমুদ্র থেকে জলীয় বাতাস ভরো
উঠুক ঝড়, আসুক কালো মেঘ-
পৃথিবী শীতল হোক !
আগামী দিনে আমরা কি রেখে যাবো
ভবিষ্যত শিশুদের কাছে ?
জল দাও প্রভু - জল দাও
মানুষের দু:খ কষ্ট নাও
মাঠে শস্য ভরে দাও
সবুজে সবুজে ভরে যাক পৃথিবী ----
হে সূর্যদেব !
.................................................................
পুলকের কবিতা পাঠ শেষ হতেই পুরোহিত মশায়
আবার হাত জোড় করে সূর্যদেবকে প্রণাম করলেন।
সকলেই হাত জোড় করে প্রণাম করলো । তারপর
যেমন মিছিল করে গিয়েছিল ঠিক তেমনি মিছিল
করে গ্রামে ফিরে এলো ওরা ।
-----------------