STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Children Stories Horror Classics

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Children Stories Horror Classics

গল্পদাদুর আসর-পরোপকারী পেত্নী

গল্পদাদুর আসর-পরোপকারী পেত্নী

9 mins
263



প্রায় সপ্তাহ খানেক ঝড় বৃষ্টির পর, আজ একটু ধরেছে আকাশটা। সোস্যাইটির বাচ্চারা আজ বেজায় খুশি। গত রোববারের পর, এই শনিবার বিকেলে তারা মাঠে খেলতে আসলো। শিশিরবাবুর দৌলতে, খেলাধূলা আর শরীরচর্চার দিকে বেশ মন দিয়েছে সবাই। তাদের রোগ বালাইও কমেছে, আর চেহারাও ভালো হচ্ছে সবার।

খেলাধূলা না করলে, শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো সব সচল হবে কি করে? আর যত বেশী তারা সচল থাকবে, শরীরও তত ফিট থাকবে। মনেও আনন্দ থাকবে। খেলতে খেলতে একটু আধটু লাগা ব্যথায়, প্রলেপ দেবার জন্য তো তাদের গল্পদাদু আছেই।

ডেটল, স্যাভলন, স্পিরিট, তুলো, ব্যাণ্ডেজ, ব্যাণ্ড এইড ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ, একটা ফার্স্ট এইড বক্স নিয়েই মাঠে আসেন তিনি রোজ। সামান্য একটু আধটু কাটা ছড়ার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু তিনিই করে দেন। বেশি ক্ষত হলে, বা চোটের পরিমাণ বেশি হলে, তাকে তিনি নিজেই বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন। রোজ খবর নেন বাড়িতে গিয়ে, কেউ খেলতে না এলে।

তাঁর স্নেহের অথচ নিয়মনিষ্ঠ অভিভাবকত্বে যে বাচ্ছারা সুপথে যাচ্ছে, সেটা বোঝে সবাই। তাঁর প্রতি সকলের আস্থা আর শ্রদ্ধাও তাই ভীষণ রকম বেশি। শিশিরবাবু নিজেও সেটা জানেন এবং বোঝেন বলেই, সর্বদা চোখ কান খোলা রাখেন বাচ্ছাদের নিয়ে বের হলে।

বৃষ্টি বন্ধ হলেও, মাঠে জমা জলে ভিজে মাটিতে খেলা সম্ভব হচ্ছিলো না। কিন্তু গল্পদাদুর আসরে বসতে হলে খেলতেই হবে, তাই ভারী দোটানায় পড়লো তারা। দু'একবার বলে লাথি মারতে গিয়ে আছাড় খেলো মিঠাই আর অয়ন দুজনেই। দৌড়াতে গিয়ে, পড়ে ব্যথা পেল তিতাস আর মিঠু। তিতাস অবশ্য মিঠুকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে গিয়ে ব্যথা পেল।

শিশিরবাবু তাদের ডেকে নিলেন, খেলতে হবে না বলে। তারপর বললেন - আমি বলেছিলাম বলে, তোমরা রোজ এই যে খেলাধূলা করো, আমার খুব ভালো লাগে। তাতে তোমাদের শরীর আরো সুগঠিত মজবুত হয়ে উঠুক, এটাই তো চাই। কিন্তু খেলার জন্য যখন মাঠ উপযুক্ত নয়, তখন জোর করা কেন? আমায় তো বলবে, দাদু আজ খেলা যাবে না, মাঠে কাদা হয়েছে।

এই দেখো, পড়ে গিয়ে তোমাদের জামা কাপড় সব নোংরা হয়ে গেছে। কেউ ব্যথা পাওনি তো? মনে রেখো, মিথ্যা কথা যেমন কখনই বলতে নেই, সে যত বড়ই ভুল করে ফেলো না কেন, তেমনি সত্যি কথাও বলতে হয় সব সময়, নির্ভয়ে। আজই দেখো না, যদি মাঠে নেমেই যখন দেখলে কাদা হয়ে আছে, খেলা যাবে না - আমায় তখনই এসে বললে না কেন?

তাহলে তো আমি তোমাদের খেলতে বারণ করতাম কাদায়। তার চেয়ে বরং কমিউনিটি হলে বসে যোগ ব্যায়াম করা যেত! তারপর এই গঙ্গার ধারে বসে গল্প - কি ভালো হতো না? কি বলো তোমরা?

সকলে - হ্যাঁ দাদু, আমাদের তোমাকে বলা উচিত ছিলো, যে মাঠে খেলা যাবে না আজ। আমরা ভাবলাম, না খেললে যদি তুমি রাগ করে, গল্প না বলো? এক সপ্তাহ হয়ে গেলো দাদু, তোমার কাছে গল্প শুনিনি।

শিশিরবাবু - না, তোমরা এটা ভুল ভেবেছো। দাদু কি বুঝতে পারবে না যে কাদায় খেলা যায় না? তোমরা বুঝতে পারলে, আর দাদু বুঝতে পারবে না কেন? যাই হোক, এমন আর করো না। কোন অসুবিধা হলে আমায় বলবে, আমি নিশ্চয়ই তার একটা সমাধান করে দেবো। ভয় পেয়ো না সত্যি কথা বলতে। এখন তোমরা চট করে ঘরে গিয়ে, ভেজা জামা কাপড়গুলো পাল্টে এসো চটপট। তারপর....

সকলে - গল্প হবে। তাই না দাদু?

শিশিরবাবু - হ্যাঁ। যাও যাও, চট করে ঘর থেকে, পোশাকগুলো বদলে এসো।

ওরা চারজন দৌড় দিলো ঘরের দিকে। বাকিদের নিয়ে শিশিরবাবু ফিরে এলেন, গেটের পাশে সেই আগের দিনের ছাউনিটার নিচে বসার জায়গায়। দারোয়ান আংকেল বোধ হয় বুঝতে পেরেছিলো যে, আজকের আসর মাঠে বসবে না। তাই আগে থেকেই শতরঞ্জি বিছিয়ে রেখেছিলো সে ওখানে।

সবাই এসে ওখানেই বসলো। মনামি গান শিখছে অনেকদিন হলো। তাই শিশিরবাবু বললেন - দিদি, তুমি একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনাতে পারো? ওরা আসতে আসতে, তোমার মিষ্টি গলায় একটা গান শুনি বরং।

ওহে বাহাদুর, বাবা তুমি ঐ চপওয়ালার ওখান থেকে, কটা গরম গরম পাঁপড় ভাজিয়ে আনোতো, দেখি। তাঁর থেকে টাকা নিয়ে দারোয়ান আংকেল গেলো পাঁপড় আনতে। মনামি গান ধরলো - মম চিত্তে নিতি নিত্তে...

ওরা চারজন যখন পোশাক পাল্টে ফিরলো ততক্ষণে বাহাদুর সকলের জন্য পাঁপড় নিয়ে চলে এসেছে! ওরা এসে পাঁপড় খেতে খেতে বসে পড়লো আসরে। মনামির গানও শেষ হয়েছিলো। পাঁপড়ে কামর দিতে দিতে বলল - দাদু, আমরা তো ভয় পেলেই, বাঁচার জন্য মাঝে মাঝে মিথ্যে কথা বলি। বিপদ থেকে বাঁচতে, বা কোন ভালো কিছুর জন্যও কি মিথ্যে বলা যায় না?

শিশিরবাবু - মিথ্যে আমরা বলি কেন, সত্যকে লুকাবার জন্য! সত্য কি কখনও লুকানো থাকে দিদি? মিথ্যে বলে কিছুক্ষণের জন্য পাড় পেতে পারো, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। আর ভালো কিছু? মিথ্যে দিয়ে ভালো কিছু কখনই হতে পারে না।

আমার নিজের চাকরীর সময়ের একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমাদের চাকরি নিয়েই টানাটানি পড়তে পারতো, তবু মিথ্যে বলি নি। শেষে এক পেত্নী এসে, সে যাত্রা চাকরিটা খুব বাঁচিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো আমাদের।

সকলে - পরোপকারি পেত্নী দাদু? আজ ঐ পেত্নীর গল্প হবে দাদু? দারুণ, দারুণ মজার হবে, শুনবো।

শিশিরবাবু - ঠিক আছে, সে বলবো 'খন। কিন্তু তার আগে, তোমরা ট্যাপ থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসো। খাবার জল এখানে আমার কাছে আছে। কিন্তু, এখন খাবে না, গল্প শেষ হলে তখন খাবে। তেলেভাজা খেয়ে, সঙ্গে সঙ্গে জল খেতে নেই।

সকলে চটপট হাতমুখ ধুয়ে এসে, শিশিরবাবুর চারপাশে বসে পড়লো। তিনিও এবার গুছিয়ে বসে, গল্প শুরু করলেন -

আমার তখন স্পেশাল ব্রাঞ্চে পোস্টিং। এক বেটা নিগ্রো জালিয়াতি করতে গিয়ে, ধরা পড়েছে। তার পাসপোর্টটাও নাকি নকল বলে খবর ছিলো। তাই তার ইন্টারোগেশন, মানে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিলো। বড় সাহেবের হুকুম, সন্ধ্যেয় ধরা হয়েছে যখন, সারারাত যাবতীয় জিজ্ঞাসাবাদ করে, সকালেই তাকে কোর্টে তুলতে হবে।

আমার ওপরেই দায়িত্ব বর্তালো। সারারাত ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সে কোনটার উত্তর দেয়, তো কোনটার দেয়না। নিজের মেজাজ ধরে রাখাই তখন দুরুহ ব্যাপার। এর মধ্যে সে ব্যাটার পায়খানা পেয়েছে বললো। একজন সিপাই এসে তাকে নিয়ে গেলো বাথরুমে। লোকটা সেই যে বাথরুমে ঢুকলো, আর বেরই হয় না।

রাতজাগা সেই বয়স্ক সিপাইটা তো, ঐ পায়খানা ঘরের বাইরে টুলে বসেই ঢুলছে! এত দেরী দেখে আমিই এসে দেখি সিপাইটা ঘুমাচ্ছে। কায়দা করে, বাইরে থেকেই সেই পায়খানার দরজাটা খুলে, দেখি - সেই নিগ্রো আসামী ভ্যানিশ! পায়খানার জানালা দিয়ে গলে, বাইরে পালিয়েছে। কাস্টাডি থেকে আসামী পালিয়ে যাওয়ার অর্থ - আমাদের চাকরি যাওয়া, সর্বনাশ! সেই বেচারা সিপাইয়েরও ঘুম টুম সব ছুটে গেলো আসামী পালিয়েছে শুনে।

আমাদের ঐ অপিসটা যে বাড়িটায়, তার চারিদিক প্রায় চোদ্দ পনেরো ফুট উঁচু খাড়া দেওয়ালে ঘেরা। কোন মানুষের পক্ষে, সহজে তো সেই পাঁচিল ডিঙানো সম্ভব নয়। আর সামনের দিকে গেটে বসে আছে পাহারারত তিন চারজন কনস্টেবল! তাহলে, সে পালালো কোথায়? কিভাবেই বা পালালো?

চারিদিকে খোঁজ খোঁজ চলছে। পাঁচিল টপকে কেউ যায়নি, সেটা নিশ্চিত করলো পাহারায় থাকা কনস্টেবল গুলো। ওরা নাকি সন্ধ্যে থেকেই চারপাশে রাউণ্ড দিচ্ছে, বড়সাহেবের কথায়। তিনি বোধ হয় লোকটার পালিয়ে যাবার টেন্ডেন্সী আঁচ করতে পেরেছিলেন।

লোকটা যদি পাঁচিল টপকে না পালায়, বা সামনের গেট দিয়েও না যায়, তো সে গেলো কোথায়? পায়খানার জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ভালো করে দেখলাম বাইরেটা। কোন পাইপ লাইনও তো নেই ওখানে, যেটা ধরে নিচে নামা যায়। অপিসটা তো টপ ফ্লোরে! পাইপ সব এই বাথরুমের নিচে থেকে শুরু হচ্ছে। সেখানে তো ঐ বাথরুম থেকে যাওয়াও যায় না, তাহলে!

শুধু কার্নিশটা ধরে ধরে লোকটা বেরিয়ে গেলো? আর গেলোই বা কোথায়? ছাদে যাবার কোন সিঁড়ি নেই। ইংরেজ আমলের বাড়ির কাঠের সিঁড়ি। আমাদের অপিসের গেট পর্যন্ত এসেই সিঁড়ি শেষ। ওপরে ছাদে ওঠার কোন পথ নেই! তাহলে? চিন্তার ভাঁজ পড়লো উপস্থিত সবারই কপালে।

আঁতিপাঁতি করে গোটা বাড়িটার নিচে থেকে ওপর খোঁজা হলো। কোথাও লোকটার পাত্তা নেই। প্রতি ফ্লোরেই আমাদের গার্ড থাকে। তারাও কিছু দেখেনি! কি মুশকিলেই পড়লাম। আমি বুঝলাম, বিষয়টা বড়সাহেবকে জানানো দরকার। তাই তাঁকে কল করে সব জানালাম।

তিনিও ঘুমাতে পারেননি টেনশনে। এখন আমার মুখে এই খবরটা শুনে, একবারে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন - বলেছিলাম সাবধানে থাকতে। নিচের গার্ড গুলো কি করছিলো? ওরা ধরতে পারে নি কেন? সব কটাকে সাসপেন্ট করবো কাল, যদি লোকটাকে খুঁজে বের করতে না পারো। কাল সকালে, যেভাবেই হোক ওকে খুঁজে, স্টেটমেন্ট নিয়ে, তারপর কোর্টে তুলবে। - বলে রেগে ফোনটাই কেটে দিলেন।

আমার সাথে থাকা সহকর্মীরা বললো - কি দরকার ছিলো, সত্যি কথা জানিয়ে গালাগালি খাওয়ার? খোঁজাখুঁজি চলতো, তারপর কাল সকালে যা হোক কিছু একটা বলে দিলেই হত! আমি বললাম - তিনি, আগেই বুঝতে পেরেছিলেন ঐ নিগ্রোটা পালাতে পারে। সেই মত গার্ডদের ডিউটি করতেও বলে গেছেন। এত রাতেও না ঘুমিয়ে, তিনি কি আর এমনি জেগে বসে আছেন! আর তোমরা বলছো - তাঁকে মিথ্যে বলে পাড় পাওয়া যাবে?

এবার সবাই চুপ করে গেলো। সবাই মুখ চুন করে বসে, আলোচনা করছি কি করা যায়। এমন সময় নিচের তলার গার্ডটা এসে বললো - স্যার ঐ মহিলা কি আপনাদের এখানে এলেন? মানে আপনারা ডেকেছেন?

আমরা একজোটে বললাম - মহিলা? এত রাতে? সে বললো - হ্যাঁ স্যার, বেশ টপ স্কার্ট পরা স্মার্ট একজন মাঝ বয়সী মহিলা, ঠক ঠক করে হিল তোলা জুতোর আওয়াজ করে, ওপরে এলো তো!

আমরা তো অবাক, এখানে তো কেউ আসে নি। আর সে নাকি নিচেও নামেনি। তাহলে সেই বা গেলো কোথায়? এ যেন আর এক উৎপাত। এক নিগ্রোয় রক্ষে নেই, আবার মহিলা এসে হাজির! তাকে ভালো করে অপিসের চারিদিক দেখতে বললাম। কিন্তু সে খানিকক্ষণ পর এসে বললো - স্যার, সে অপিসে ঢুকলে, তবে তো তার দেখা পাবেন! সে মহিলা তো সোজা ওপরে ছাদে চলে গেলো!

শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম - ছাদে কি করে যাবে? সিঁড়ি কোথায়? সে বললো - তাই তো। কিন্তু আমি যে তাকে দেখলাম, ঠক ঠক করে হেঁটে ছাদে চলে যেতে! বললাম - তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছিলে, বা কিছু খেয়েছো? সে লজ্জা পেয়ে বললো - স্যরী স্যার। কিন্তু, আমি তো তখন থেকেই, আপনাদেরই সঙ্গে খোঁজাখুঁজি করে যাচ্ছি। ঘুমাবো কেন?

বললাম - তাহলে, একবার ভাবলে না কেন - যে ছাদে যাবার সিঁড়িও নেই, গ্যাপও নেই, সেখানে ঐ মহিলা মানে যাকে তুমি দেখেছো, সে গেলো কিভাবে? গার্ড বেচারার কাছে এর কোন উত্তর ছিলো না। তাই সে মুখ নিচু করে, চলে যেতে উদ্যত হলো। ঠিক সেই সময় হিল পড়া জুতো পড়ে, কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে আসার, পায়ের শব্দ শোনা গেলো আবার!

গার্ড লোকটা আমাদের দিকে চেয়ে, ঘাড় নেড়ে ইশারা করে বললো - ঐ দেখুন, আবার আসছে। আমরা সবাই দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম - কি করেই দেখি মহিলাটি। তিনি এসে যথারীতি ঠক ঠক করে হেঁটে, আমাদের অপিস পাড় করে ছাদে চলে গেলেন!

অবাক হয়ে দেখলাম - তাঁর পা ফেলার সাথে সাথে, যেন ছাদে যাবার কাঠের সিঁড়িও একটা তৈরী হয়ে যাচ্ছিলো! ছাদে ওঠারও একটা গ্যাপ রয়েছে - যেটাকে আমরা ছাদের জল বেরোবার আউটলেট ভাবতাম! সেটাকেই দেখলাম ওপর দিকে ঠেলে খুলে দিয়ে, তিনি ছাদে চলে গেলেন!

আমরা সবাই পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকি - এটা কি হলো? গার্ড লোকটার তখন বেশ রোখ চেপে গেছে! সে ইলেক্ট্রিকের কাজ করার জন্য, অপিসে যে মইটা ছিলো সেটা এনে লাগালো ছাদের ঐ জায়গায়। তারপর চড় চড় করে উঠে গিয়ে, ওখানটায় ঠেলা দিতেই, সত্যিই সেটা ওপরদিকে খুলে ছাদে যাবার রাস্তা পাওয়া গেলো!

সে ছাদে উঠেই ডাকলো - স্যার তাড়াতাড়ি উঠে আসুন। তার পিছু পিছু আমরাও মই বেয়ে ছাদে উঠলাম। দেখি, সেখানে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে শুয়ে রয়েছে নিগ্রোটা! তাকে পেয়ে আমাদের বুকে বল এলো! মহিলার কথা ভুলে তখন সবাই মিলে দড়িতে বেঁধে, লোকটাকে নিচেয় নামালাম। তারপর এক এক করে সবাই নেমে এলাম।

জ্ঞান ফিরলে, নিগ্রোটা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকলো অনেকক্ষণ। তারপর, তার মুখে শুনলাম - সে তো পায়খানার জানালা দিয়ে বের হয়ে, কার্নিশ ধরে পালাবার চেষ্টা করছিলো। তখন এক মহিলাই নাকি তার হাত ধরে, তাকে ছাদে টেনে তুলেছিলো! কিন্তু ছাদে ওঠার পর, সে দেখে মহিলা কোথায় - একটা কঙ্কাল দাঁড়িয়ে! তারপর সে তার চোখের সামনেই ভ্যানিশ হয়ে যায়। তাতেই ভয় পেয়ে সে জ্ঞান হারিয়েছিলো।

মহিলার পোশাক পরিচ্ছদের বর্ণনা শুনে বুঝলাম, আমরাও তাঁকেই দেখেছি! তিনি তো আমাদের বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন, কিন্তু কেন তা জানতে পারলাম না। পরে শুনেছি, ঐ বাড়িতে এ'রকম অনেক আত্মারই নাকি নিত্য আনাগোণা আছে! আর তারা সবাই বেশ উপকারীও।

বাকিদের কথা জানিনা, তবে সেদিন রাতে ঐ পরোপকারী পেত্নী যে আমাদের সবার চাকরীটা বাঁচিয়ে দিয়েছিলো, সেটা আমায় মানতেই হবে।

সকলে - কি ভালো পেত্নী গো দাদু! একদিকে ঐ ক্রিমিনালটাকে অজ্ঞান করে, ধরেও রেখে দিয়েছিলো, আবার তোমাদের ডেকে দেখিয়েও দিলো! তোমাদের সবার চাকরি বাঁচিয়ে দিয়ে গেলো! দারুণ পেত্নী দাদু। সত্যি কথা বলেছিলে তাই, দেখো পেত্নী এসে তোমাদের বাঁচিয়ে দিল। আমরাও সব সময় সত্যি কতা বলবো দাদু।

শিশিরবাবু - তা যা বলেছো। পেত্নীটাই বাঁচিয়ে দিয়ে গেলো, নয়তো সত্যি কথা বলার পর, আর যে কি কি শাস্তি মাথায় নাচছিলো ঐ ভুলের জন্য, কে জানে! চলো চলো, সন্ধ্যে হয়ে আসছে তো। এবার জল খাও সবাই। দিয়ে চলো ফেরা যাক। ওহে বাহাদুর, তুমি শতরঞ্জিটা গুছিয়ে হলঘরে রেখে দিও বাবা।

সকলে সোস্যাইটির ভিতরে যাবার রাস্তা ধরলো। বাহাদুর এসে শতরঞ্জিগুলো গোছাতে লাগলো। আকাশে তখন চাঁদ উঠেছে।



Rate this content
Log in