বুভুক্ষু রাজপুত্র
বুভুক্ষু রাজপুত্র


গ্রিক দেশের লোককাহিনী
বুভুক্ষু রাজপুত্র
ইউরোপের একটি দেশের নাম গ্রিক। এদেশে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে পুরনো দেশগুলোর মধ্যেই রয়েছে গ্রিক দেশের নাম। এদেশে জন্ম নিয়েছিলেন অনেক বড় বড় বীড় পুরুষ।
সে দেশে ছিল এক রাজপুত্র। সে রাজপুত্র খাওয়াদাওয়াকেই জীবনের সবচাইতে বড় আনন্দের বলে মনে করতেন। রাজপুত্র ঠিক করলেন, একটা বিশাল আকারের বাড়ি বানাবেন, সেখানে তিনি নিত্যদিন তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ভোজ উৎসবের আয়োজন করবেন। তার আর দেরি হহ্য হচ্ছে না। রাজপুত্র আরো ভাবলেন, পাথরের বাড়ি বানাতে গেলে অনেক সময় লাগবে, তাই কাঠের বাড়ি বানাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। এদিকে তার বাবার রাজ্যে গাছ খুব বেশি ছিল না। তবে অতি চমৎকার একটি কুঞ্জবন ছিল, যেখানে বিরাট বিরাট গাছ চোখ জুরানো পরিবেশ সৃষ্টি করে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু কেউ সে সব গাছ কখনো কাটার সাহস করতো না, কারণ ঐ অপরূপ বাগানের প্রতিটি গাছে বাস করতো এক একটি পরী।
কিন্তু রাজপুত্র এসব ব্যাপারে ছিলেন উদাসীন ও নিষ্ঠুর। তিনি তার অনুচরবৃন্দ ও বন্ধুদের কুঠার, কোদাল, শাবল, করাত ইত্যাদি দ্বারা সুসজ্জিত করে পরীদের তরুবীথির বড় বড় গাছগুলো চটপট কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন। তার পরিকল্পিত ভবনের জন্য অনেক দেয়াল, মেঝে, ছাদ, দরজা, জানালা প্রভৃতি বানাবার জন্য কাঠ তো আর কম দরকার হবে না! কন্তু রাজপুত্রের সাথীরা তরুবীথিতে তাদের কুঠার চালাতে ইতস্তত করলো। তখন রাজপুত্র নিজে একটা মস্তবড় তীক্ষ্ণধার কুঠার হাতে নিয়ে তরুবীথির ঠিক মাঝখানে দাঁড়ানো বিশাল একটি ওক গাছকে লক্ষ করে বললেন, এই গাছ যদি নিজেই একটা পরী হয়, যদি এই গাছ সব পরীদের অত্যন্ত প্রিয় গাছও হয়, তবু আমি এটাকে ভূপাতিত করব, কারণ এটা দিয়েই তৈরি হবে আমার নতুন বাড়ির মূল কড়িকাঠ।
বলতে বলতেই রাজপুত্র তার মস্তবড় তীক্ষ্ণধার কুঠার দিয়ে গাছের গায়ে কঠিন আঘাত আনলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে দেখাগেল একটা বড় ক্ষত, তার ভেতর থেকে যেন ফিনকি দিয়ে রক্ত নির্গত হলো, আর গাছটি যেন আর্তনাদ করে উঠল। রাজপুত্র আবার তার কুঠার চালালেন, তখন থর থর করে কাপতে থাকা গাছের শাখাগুলোর মধ্য থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো- নিষ্ঠুর পাপি রাজপুত্র, আর তোমার কুঠার চালিও না। এটা পরীদের বিশেষ তরু। নিশ্চিত জেনো, এগাছের ক্ষতি করলে আমাদের পরী-রানি তোমাকে উপযুক্ত শাস্তি দেবেন।
কিন্তু রাজপুত্র ঐ সাবধাণ বানীতে কর্নপাত করলো না। তিনি আর তার সাথীরা গাছটির গায়ে আঘাতের পর আঘাত করতে লাগলো। গাছ তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে উঠল, একটা মড়মড় ধ্বনি হলো, ঐ বিশাল বৃক্ষ এখনই মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। গাছের ভেতর থেকে আগেকার কন্ঠস্বরটি আবার ধ্বনিত হলো, তোমার লোভ আর নিষ্ঠুরতার শাস্তি আসন্ন, বুঝলে? আমি আমাদের রানির সবচাইতে প্রিয় গাছ। তোমার এই কাজের জন্য তিনি তোমাকে কখনোই ক্ষমা করবেন না।
কিন্তু রাজপুত্র এর জবাবে সুধু হো হো করে হেঁসে উঠলেন। বিশাল বৃক্ষ প্রচন্ড শব্দ করে মাটিতে পরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রীদের সব গাছ কেটে ফেলা হয়। সেসব গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হলো কড়ি, বর্গা, তক্তা, চৌকাঠ, খিলান ও বাড়ি নির্মাণের আরো নানা জিনিস এবং এক সময় রাজপুত্রের পরিকল্পিত বিশাল বাড়ি নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়। তারপর রাজপুত্র সেখানে তার বন্ধুদের নিয়ে দিনের পর দিন ভোজন উৎসবে মেতে রইলেন।
বৃক্ষ-পরী কিন্তু চুপ করে বসে থকেনি। সে তার রানির কাছে গিয়ে পরীদের তরুবীথির দুর্দশার কথা বর্ণনা করলো এবং তাকে অনুরোধ করলো তিনি যেন ঐ দুষ্টু রাজপুত্রকে উপযুক্ত সাজা দেন।
সব শুনে রানি বললেন, ঠিক আছে, তুমি যা চাও তাই হবে। এই নাও আমার অশ্বযান। ক্ষুধা নামের এক ডাইনি, এখান থেকে বহুদূরে, উত্তরাঞ্চলে, বৃক্ষতরুহীন এক রুক্ষ পাহাড়ের পাশে একটি গুহায় বাস করে।
তাকে খুঁজে বার করে বলো যে, আমি আদেশ দিচ্ছি, সে যেন ঐ রাজপুত্রের কাছে গিয়ে তার উপর তার সবচাইতে কঠোর মায়াজাল বিস্তার করে। ক্ষদা তার উপর নিজের সর্বময় অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে, যার ফলে তার ক্ষুদার জালা কখনো মিটবে না। যত কাবে ততই তার পেটের ভিত ক্ষুধার আগুন আরো দাউদাউ করে জ্বলবে। যাও, যা বললাম তাই করো।
পথে নানা রকম বিপদ উপেক্ষা করে, দীর্ঘ পথ পারি দেবার পর অবশেষে বৃক্ষ-পরী ডাইনি-খুধার গুহার কাছে এসে পৌছল। সেখানে শুধু বরফের রাজত্ব। কোথাও সবুজের চিহ্ন মাত্র নেই। সে গুহার মধ্যে দেখলো এক বুড়ু বসে আছে, গায়ের চামড়া শিথল, কো৬চকানো, হাত-পা কাঠির মতো শুকনো, গাল দুটি থোবড়ানো। তার প্রতি পরী-রানির নির্দেশ শুনে ডাইনি-বুড়ি কর্কশ গলায় খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে উঠল, তারপর একটা অপার্থিব চিৎকার করে উত্তরের হিমশীতল বাতাসের মধ্যদিয়ে তার কাজ করার জন্য ছুটে গেল।