Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Rinki Banik Mondal

Others

2  

Rinki Banik Mondal

Others

অধিকারের লড়াই

অধিকারের লড়াই

7 mins
222


-----"না না এইটা একদম হাল্কা রঙের। ভালো লাগছে না। দাদা ঐ যে,,, ঐ লাল শাড়িটা,,,সোনালী বুটি দেওয়া, একটু দেখাবেন?" তাতানের বিয়ের জন্য জামাকাপড়ের বাজার করতে এসে তাপসীর কিছুতেই নিজের জন্য হাল্কা রঙের শাড়ির দিকে চোখ যায় না।

কিন্তু তাপসীর বৌদির রুমার ইচ্ছে তার একমাত্র অবিবাহিত বয়স্ক ননদ হালকা রঙের শাড়িই কিনুক। তাই তো সে তার স্বামী তরুনকে কানে কানে বলেই ফেলল- -----"দেখলে, তোমার দিদির এই বয়সেও সেই রঙিন শাড়ির দিকেই মন। যা তা একেবারে। তোমার দিদির জন্য তো এবার আমাদের মাথা কাটা যাবে। বুড়ি হতে চলল এখনো শখ কমেনা!" 

তরুনটাও হয়েছে একবারে! বৌ যখন উঠাচ্ছে, উঠছে। যখন বসাচ্ছে, বসছে। বৌ এর কোনো কথায় ও প্রতিবাদ করেনা। এমনকি রুমা অন্যায় করলেও নয়। আসলেই রুমা ওর ননদকে দুচক্ষে দেখতে পারেনা। রুমা আর তরুন কলেজে পড়ার সময় পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিল। তখন তাপসী এম.এ পড়ছে। ভাই দিদির আগে এইভাবে বিয়ে করে নেওয়ায় পরিবারের কেউ খুশি হয়নি। তবে তাপসী কিন্তু খুব খুশি হয়েছিল রুমাকে পেয়ে। একেবারে নিজের বোনের মত ওকে ভালোবাসতো।

কিন্তু সেই ভালোবাসার দাম রুমা কোনোদিনও দিতে চায়নি। মুখে কিছু না বললেও রুমা মনে মনে তাপসীকে একদম সহ্য করতে পারে না। এম.এ পাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই তাপসীর জন্য একটা বিশাল ধনী পরিবার থেকে সম্বন্ধ আসে। যদিও তাপসীর বাবাও কিছু কম ধনীব্যক্তি নয়। তারও চাল ডালের ব্যবসা। চার পাঁচটে গুদাম আছে এর জন্য। তরুনও বিয়ের পর ব্যবসার এক অংশ সামলাচ্ছে। তাপসীকে দেখেই ছেলের বাড়ির লোকের পছন্দ হয়ে যায়। আর হবে নাই বা কেন! তাপসী যে রূপে লক্ষী, গুণে সরস্বতী। ছেলের বাড়ির লোকের কোনো দাবিদাবাও ছিল না তাপসীকে ঘরের বৌ করতে। উল্টে ছেলের এক কাকিমা প্রথম দেখাতেই নিজের গলার সোনার হার খুলে তাপসীকে তা পরিয়ে আশির্বাদ করে। তবে এত খুশির বন্যা একজনের সহ্য হচ্ছিল না, সে আর কেউ নয়, একমাত্র ভাইয়ের স্ত্রী রুমা। কি করে এই সম্বন্ধটা ভেস্তে দেওয়া যায়, তার মগজে সেটাই চলছিল। সে সম্বন্ধটা ভেঙ্গে দিতে সফলও হয়। ছেলের বাড়ির লোক চলে যাওয়ার পরই রুমা তার নাম গোপন করে ওদের বাড়িতে ফোন করে জানায় যে, মেয়ের স্বভাব চরিত্রের নাকি ঠিক নেই। এমনকি মেয়ে নাকি লুকিয়ে একটা বিয়েও করেছিল আগে। ছেলের বাড়ির লোক যতই ভালো হোক না কেন, মেয়ের কোনো খুঁত পেলেই কথা শোনানোর জন্য একেবারে মুখিয়ে রাখে। যথারীতি, এই ছেলের বাড়ির লোকও এই নিয়মের কিছু অন্যথা করেনি। সম্বন্ধটা ভেঙ্গে তো দিয়েছেই, উল্টে পরের দিন বাড়ি বয়ে এসে তাপসীর বাবা মাকে যা নয় তাই বলে গালমন্দ করে গেছে। ছেলের বাড়ির লোক কথাগুলো সত্যি না মিথ্যে একবারও যাচাই করার চেষ্টা করেনি।

বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর তাপসীদের পুরো পরিবারটাই কেরকম থমথমে রূপ নেয়। বাহ্যিক চেহারাতে বেদনার ছাপ থাকলেও মনের মধ্যে বিশাল আনন্দ হয় রুমার। এমনকি রুমার এই কুকর্মের কথা তরুনও আঁচ করতে পারেনি। সেও বৌএর ভালো মানুষের মুখোশেই সব বুদ্ধিবিবেচনা বিসর্জন দিয়েছে। তবে তাপসীর বাবা বৌমার কুকীর্তির কথা কিছুটা আন্দাজ করলেও প্রমাণের অভাবে তা আর প্রকাশ পায়নি। এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই তাপসীর মা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তাপসী আর ওর বাবা দুজনেই খুব ভেঙ্গে পড়েন। তরুন তো তখন বৌকে নিয়েই ব্যস্ত। কদিন পরেই রুমা মা হবে। তাই তরুনের দায়িত্ব কর্তব্যের কোনো ত্রুটি নেই। একরাশ বেদনা মনে নিয়েও তাপসীও ভাই আর ভাইয়ের স্ত্রী'র আনন্দে সমান খুশি হয়।

এরপর থেকে তাপসীর জন্য যত সম্বন্ধ এসেছে, তা ভেঙ্গেই গেছে। একসময় হাল ছেড়ে তাপসীই বলে দেয় যে, সে আর বিয়ে করবে না। ওর এই কথাতে আর কেউ নাহলেও রুমা কিন্তু খুব খুশি হয়। আজ ত্রিশ বছর পরে এসেও রুমা তার ননদ তাপসীর সাথে হিংসা করে। তবে এখন তাপসী তার ভাইয়ের স্ত্রী'র সব ছলচাতুরীই আন্দাজ করতে পারে। ত্রিশ বছর আগে তাপসীর চিন্তায় ওর বাবাও মারা যান। তবে উনি চলে যাওয়ার আগে মেয়েকে তার ভাইয়ের স্ত্রী রুমার থেকে সাবধানে থাকার কথাও বলে যায়। তাপসীর জন্য উনি তার সম্পত্তির প্রায় অর্ধেক ভাগ দিয়ে যান। আর সেই জন্যই রুমা তার ননদের সাথে একটু ভেবে চিন্তেই কথা বলে। তবে তাপসীকে বিয়ে দেওয়ার কথা রুমা একবারও ভাবেনি, এমনকি তরুনকেও দিদির বিয়ের সম্বন্ধ দেখতে বারণ করে দিয়েছিল। আসলে, তাপসীর বিয়ে হয়ে গেলে যে সম্পত্তি অন্য সংসারে চলে যাবে! আর বিয়ের পর তাপসীর যদি কোনো সন্তান হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সংসারের এত জটিল চক্রান্তে বন্দী ছিল তাপসী। আর তাপসীও আর মন থেকে চাইনি যে ওর আর বিয়ে হোক।


তাতানের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাতান রুমা আর তরুনের ছেলে। তাতান কিন্তু ওর একমাত্র পিসিমণিকে খুব ভালোবাসে। তাই তো ও আজ মা, বাবার সাথে ওর পিসিমণিকেও জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে। পিসিমণি সেজে গুজে থাকলে তাতান খুব খুশি হয়। আসলে ও ওর পিসিমণির কাছেই যে মানুষ হয়েছে! তাই রক্তের সম্পর্ক ছাড়াও মায়ার একটা শক্ত বাঁধন তৈরি হয়ে গেছে ওদের মধ্যে। ওর মা ওকে যতই পিসির নামে মন্দ কথা বলুক ও তাতে কান দেয় না। আর তরুন তো সংসারের ভালোমন্দে শুধু নীরব শ্রোতা।

তাতানের বিয়ে পর্ব বেশ ভালোভাবেই কেটে যায়। তাপসী তাতানের বৌকে হাতের দুটো সোনার বালা দিয়ে আশীর্বাদ করেন।


কিন্তু তাতানের বিয়ের পরের দিনই বাড়িতে হঠাৎ অশান্তি। এতদিন এই বাড়িতে শুধু একটা ঠান্ডা লড়াই চলত, কিন্তু সেইটা পরিণত হয়েছে এখন চিৎকারে। তাপসীর ওপর তরুন আর রুমার চিৎকার অকথ্য ভাষায়। বাড়িতে যে একটা অনুষ্ঠান, নতুন বৌ রয়েছে তার দিকেও ওদের নজর নেই। অশান্তির কারণ রুমার ননদ তাপসী তার বাবার দেওয়া সম্পত্তির ভাগ কোনো এক অনাথ আশ্রমের জন্য লিখে দিয়েছে। এতগুলো গুদাম ঘরের মধ্যে তাপসীর নামে লেখা গুদাম ঘরগুলো ও বেঁচে দিয়েছে। ঐ টাকাই নাকি তাপসীর অবর্তমানে সেই অনাথ আশ্রমের জন্য। তাপসী এক উকিলবাবুর সাথে পরামর্শ করে দলিলও করে ফেলেছে। উকিলবাবুর স্ত্রী আবার রুমার বান্ধবী। ব্যস্, কালকে তাতানের বিয়েতে এসে উনিই কথার সমুদ্রে ভেসে রুমাকে সব জানায়। আর তাই আজকেই তরুন আর রুমা মিলে তাদের একমাত্র দিদিকে পারে তো ধরে মারে।


রুমা তো বলেই ফেলল- 

-----"তোমার বোধশক্তি এত কম কেন দিদি। তোমার কি নিজের বলে কেউ নেই? তুমি তো খুব অভিনয় করে তোমার ভাইপোকে ভালোবাসো, এখন কি হল? অন্ততঃ ওর নামেও সম্পত্তিটা লিখতে পারতে। তা না করে কোথাকার কোন ভিখারীদের দান করছ? ভিখারীদের ঐ আশ্রমের মালিক তোমার কেউ লাগে নাকি? কে জানে, সারাজীবন তো আর বিয়ে থা করোনি। তাই তো বলি এত কেন সাজের ঘটা সবকিছুতে!" 


-----"এ কি ধরণের কথা বলছ রুমা? তুমি আর তরুন নিজেদের ইচ্ছেমত সবকিছু করতে পারো, তাহলে আমি যদি নিজের ইচ্ছেমত কিছু করি তাহলে অন্যায় কিসের? তরুন এই বাড়ির ছেলে আর তুমি ওর স্ত্রী দেখে তোমাদের এত জোর তাইনা? আমি কি আমার বাবার মেয়ে নই, না এবাড়ির মেয়ে নই?" 


তাপসীর কথা শুনে এবার ওর একমাত্র ভাই তরুনও যা তা ভাষায় কথা বলতে শুরু করল। বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে তাপসীকে যেভাবে খুশি ওরা অপমান করে চলেছে। ওদের এমন ভাবসাব যেন তাপসী এই বাড়ির কেউ নয়। 


-----"অনেক হয়েছে রে দিদি, এবার তুই মানে মানে বিদায় হ' এ বাড়ি থেকে। এতদিন তোর পেছনে আমার অনেক খরচা হয়ে গেছে। দুধ কলা দিয়ে আমি কালসাপ পুষেছি।" 

-----"এইটা কি আমার বাড়ি নয় রে ভাই? আমি তো সারাজীবন এই বাড়িটার জন্য খেটে গেলাম, তার দাম কে দেবে?" 

-----"তাতান ওপরের ঘরে আছে। ও নীচে নামার আগেই তুই বিদেয় হ বাড়ি থেকে? নাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো। তুই আর বেঁচে আছিস কি করতে, তোকে তো আমাদের কোনো কাজে লাগবে না। তোকে এখানে রাখলে তুই এই বাড়িটাও কোনদিন বেচে দিবি। তাই তুই বেরো।" 

এতক্ষণের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তাতান সেখানে এসে উপস্হিত। তার পিসিমণির অপমানটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারেনি। প্রতিবাদের ঝড় সেই একমাত্র তুলেছে। আর তাপসী যে ভাইপোকে মন থেকে ভালোবাসে, সেই ভালোবাসার দাম আজ ভাইপো দিল। 

-----" তোমরা এরকম ছোট মানুষের মত কথা বলছ কেন মা? আর বাবা, এই তোমার মুখের কথা? তুমিই নাকি আমায় ভালো মানুষ হওয়ার কথা বলো, ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে। পিসিমণি তার ব্যক্তিগত জীবনে কি করবে না করবে, কাকে সম্পত্তি দেবে, সেটা তার ওপরই ছাড়ো। পিসিমণি যা করেছে, সব আমাকে জানিয়ে করেছে। আমাদের তো টাকার কোনো অভাব নেই, তাও স্বভাবের কত অভাব। পিমিমণি যদি এই বাড়িতে না থাকে, আমিও আমার বিয়ে করা স্ত্রীকে নিয়ে এবাড়ি ছেড়ে চলে যাব। বলা যায় না, যে মানুষটা তোমাদের জন্য এত করেছে, তাকে তোমরা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিচ্ছ, কোনদিন আমার স্ত্রীর সাথেও তোমরা এটা করবে। ছিঃ ছিঃ।" 


একমাত্র ছেলের বাড়ি ছাড়ার কথা শুনে রুমা আর তরুন সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অনেকটাই সংযত করল। কিন্তু এদের যা স্বভাব, তা কি আর ঠিক হওয়ার! তবে তাতান তার পিসিমণিকে সব সময় আগলে রাখবে। তাপসীর আজ তাতানকে দেখে নিজের বাবার কথা মনে পড়ছে। হয়ত সেই এসেছে এই জন্মে তাতানের রূপ নিয়ে। অবিবাহিত মেয়েদের যে বড় জ্বালা! তবে তাপসীর কাছে ওর ভাইপো আছে। ভাইপোর ভরসাতেই ওকে আজ এবাড়ি থেকে বিতাড়িত হতে হল না। ওর এই শেষ বেলায় ভাইপোই ওর অভিভাবক হয়ে ওর দায়িত্ব নিল। মা-বাবা মানে তরুন আর রুমা ছেলের কথার কাছে হার মানল ঠিকই, কিন্তু সে আর কতক্ষণের! তবে এবার তাতান বাড়িতে না থাকলেও, তার স্ত্রী'টি যে রয়েছে পিসিশাশুড়িকে ভালো রাখার জন্য! 


Rate this content
Log in