আলোর সিঁড়ি বেয়ে
আলোর সিঁড়ি বেয়ে
2 mins
1.2K
Semester r ছুটিতে বাড়ি এসে শুনলাম, প্রীতমদা ফিরে এসেছে হঠাৎ ঠিক আট বছর বাদে।
আমাদের স্কুলের সবচেয়ে দুরন্ত ছেলে ছিল প্রীতম আর গণেশদা।
সেদিন challenge নিয়ে দুজন শশ্মানে গেলেও প্রীতম ফেরেনি। অনেক খোঁজ , থানা পুলিশ করেও কোন কাজ হয়নি। প্রীতমদা নাকি শশ্মানের দেবদারুটাই হেলান দিয়ে বসছিল, হঠাৎ গনেশদার সামনেই অদৃশ্য হয়ে যায়।
সকালবেলায় প্রীতমদার বাড়ী হানা দিলাম।
প্রীতমদা মানুষজন সবাইকে চিনতে পারছে। শুধু আট বছর কোথায় ছিল সে কথা মনে নেই। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আমার কৌতূহল বাড়তেই থাকে। কথাবার্তা শুনে মনে হয় এর মধ্যে প্রীতমদা লেখাপড়াও আর শেখেন নি। সেই ক্লাস সেভেনের বিদ্যেতেই আটকে আছেন।
-"তুমি কি সাধু হয়ে গিয়েছিলে প্রীতম দা?"
-"কি জানি কিছুই মনে করতে পারি না।"
-"দেবদারু গাছ তলায় ফিরে এলে কী করে?"
-"তা জানি না। মনে হয় যেন ঐ গাছে ঘুমিয়ে পড়েছিলুম আবার
ঐখানে জেগে উঠলাম।"
-"তুমি ভূত বিশ্বাস করাে, প্রীতমদা?
-" ধ্যুৎ? ভূত বলে আবার কিছু আছে নাকি?"
প্রীতমদার মা বললেন, "আরও অবাক কাণ্ড কী জানিস বুবাই? ও যে ধুতিখানা পড়ে চলে গিয়েছিল, ঠিক সেই ধুতি খানা পরে ফিরে এসেছে। আট বছর কেউ এক ধুতি পরে থাকতে পারে ?"
পরে খবর পেলাম প্রীতমদা নাকি এখনো মাঝে মাঝেই শশ্মানের সেই দেবদারুর নিচে যাই।
গ্রাম ছেড়ে আসবার আগের দিন রাত্রে আমিও একটা কাণ্ড করেছিলাম। কারুকে কিছু না বলে মাঝ রাত্রে আমিও চুপি চুপি চলে গিয়েছিলাম শ্মশানের দিকে।
আমার ইচ্ছা ছিল প্রীতমদা কী করে ওখানে, সেটাই দেখা। দেখেছিলাম প্রীতমদা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে গান করছে, অদ্ভুত সেই গানের সুর। কথা একটিও বােঝা যায় না ঠিক যেন সাপ খেলানাে বাঁশির মতন সুরটা দুলছে। দেবদারু গাছটার মাথা থেকে একটা সরু সবুজ আলাের উপরে উঠতে লাগলাে। আলােটা যেতে লাগলাে আকাশের দিকে।তারপর সেইরকমই আলো এসে মিশল ওর শরীরে।
প্রীতমদা উঠে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে দু'হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক যেন নাচের মতন ভাব। মুখে একটা দারুণ খুশির হাসি।
তারপর আবার ছিমছাম। পরদিন দেখেছিলাম
প্রীতমদার চুলের রং কেমন যেন লালচে
হয়ে গেছে, এরকম কি আগে ছিল? তারপর চলে এলাম কলকাতায়। দু'একজন বন্ধুকে বললাম সেই
ঘটনাটা।
একজন শুধু বললাে, 'সিক্রেট লাইফ অব প্লান্টস' নামে একটা বই পড়েছি,
তাতে বৈজ্ঞানিক লিখছেন যে গাছ এমন অনেক জিনিষ পারে যা মানুষ এখনাে পারে নি।
ছ'সাত মাস আর গ্রামের কোন খবর পাই নি, গ্রামে যাইওনি। একদি হঠাৎ খবরের কাগজে আমাদের ঐ গ্রামটার নাম দেখলাম। ঐ গ্রাম থেকে প্রীতম নামে একটি ছেলে দ্বিতীয়বার নিরদ্দেশ হয়ে গেছে। দুবার ঠিক একইভাবে সে চলে যায়। রাত্রিবেলা শ্মশানের কাছে একটা দেবদারু গাছের নিচে তাকে শেষ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল।
আমার বার বার মনে হতে লাগলাে, দেবদারু গাছের মাথায় ঐ সরু আলাের সঙ্গে প্রীতমদার কোন সম্পর্ক আছে।আর আশ্চর্য, এবার ও দেবদারু গাছের নিচে পড়েছিল চটিজোড়া।